২০২৪ এর লোকসভায় ২ টি আসন পাবে বিজেপি ! RSS সমীক্ষায় মাথায় হাত গেরুয়া শিবিরের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাতারাতি তৃণমূল কংগ্রেসকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। একধাক্কায় বিজেপি ১৮ টি সিট জিতে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্কলহ থেকে শুরু করে দলের ভেতরের কঙ্কালসার চেহারাকে কার্যত স্পষ্ট করে তুলেছিল দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

সেই ভরাডুবি কাটিয়ে এখন অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় পর্বের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দলের সমীক্ষায় যে রিপোর্ট উঠে এসেছে তাতে সিঁদুরে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বিজেপি নেতৃত্বরা। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, যদি এই মুহূর্তেই শক্ত হাতে দলিল সংগঠনের রাস না ধরা যায় , তাহলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে এই রাজ্যের মাটিতে দুটি আসনের বেশি জেতা সম্ভব হবে না।

  • সেই দুটি আসনের একটি হল দার্জিলিং এবং অন্যটি বনগাঁ।

বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই ভাঙ্গন শুরু হয় পদ্ম শিবিরে।

  • একদিকে প্রত্যাশিত ফলের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া
  • অন্যদিকে ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যে সমস্ত নেতারা গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন তাদের ঘরওয়াপসি।

এই দুটি কারণেই জেরবার হতে শুরু করে বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহল।

শুধু তাই নয় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের কারণে ঘরছাড়া হয়ে যান বহু কর্মী তাদেরকে ঘরে ফেরার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের একাংশের। সেই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের রদবদল আরো প্রবল করে তোলে গোষ্ঠী কোন্দল। যা এখনো অব্যাহত। প্রায় প্রতিদিন রাজ্য বিজেপির নেতাদের মধ্যে ঠোকাঠুকির আওয়াজ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।

মাত্র ১ সপ্তাহে ক্ষেত্র বদল, অগ্নিপথের আগুন বোঝাল ধর্মের থেকেও পেটের ভাত জরুরি

রাজনীতির চড়াই-উৎরাই এই পরিস্থিতির আবহে পশ্চিমবঙ্গে পদ্ম শিবিরের পরিস্থিতি ঠিক কোন জায়গায় তা জানতেই একটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার।

সমীক্ষায় উঠে এসেছে,

  • যে সমস্ত জায়গা একসময় বিজেপির শক্ত ঘাঁটি ছিল সেখানেই ভোটব্যাংকে নেমে এসেছে ধস।
  • একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তবে এ ভোট মিটে গেলে সেই সমস্ত প্রতিশ্রুতির কোনটাই পূরণ হয়নি।
  • অগত্যা মুখ ফেরাতেই শুরু করে দিয়েছেন ভোটাররা।
  • উদাহরণস্বরূপ আসানসোল আসনটিকেই দেখলেই বোঝা যাবে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে পদ্ম ফুটলেও বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগদানের পর এবং উপনির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে সেটিও দখলে চলে গিয়েছে তৃণমূলের।
  • আবার ব্যারাকপুর কেন্দ্রে বিজেপি শক্ত মাটি তৈরি করলেও অর্জুন সিং এর দলবদল ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে সেখানেও বিজেপির ভোট ব্যাংক।

বাকি ১৬ টি আসন নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। কারণ ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে প্রকাশ্য সমাবেশে বলতে শোনা গিয়েছে অনেক সাংসদ চাইছেন ফিরে আসতে। সে ক্ষেত্রে ৩ জনের নাম আরও জোরালো হয়েছে।

  • তাঁরা হলেন সৌমিত্র খাঁ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, খগেন মুর্মু।

রাজ্য বিজেপির এই তথৈবচ পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফর শেষে বঙ্গ বিজেপির উন্নতির কোন চিত্র দেখা যায়নি। অবিলম্বে কেন্দ্রের তরফে রাজ্য নেতৃত্ব কে সতর্ক করে অন্তর্কলহ বন্ধ করে একজোট হয়ে কাজে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জোর দিতে বলা হয়েছে পুরনো কর্মীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। সর্বপ্রথম বিজেপি কর্মীদের হারিয়ে যাওয়া মনোবল পুনরুদ্ধার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দাওয়াই থাকলেও, তা মানছেন কই বঙ্গ বিজেপি নেতারা? এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কোনো নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে হলে তাতে গেরুয়া শিবির কার্যত ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে এ কথা একদম স্পষ্ট। তাই লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে এখন থেকেই শক্ত হাতে দলের হাল না ধরলে বঙ্গ বিজয়ের স্বপ্ন চিরতরে অধরাই থেকে যাবে ভারতীয় জনতা পার্টির।

সম্পর্কিত পোস্ট