ফের ধাক্কা খেল যোগী সরকার, এলাহাবাদ হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও মান্যতা দিল না হোর্ডিং পদক্ষেপকে

সিএএ বিরোধীদের বিরুদ্ধে নাম-পরিচয় দিয়ে হোর্ডিং লাগানোকে কোনও আইন সমর্থন করে না, বলল শীর্ষ আদালত।

দ্য কোয়ারি ডেস্ক : ফের ধাক্কা খেল যোগী সরকার। হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও উত্তরপ্রদেশ সরকারের হোর্ডিং পদক্ষেপকে মান্যতা দিল না।

সিএএ বিরোধীদের বিরুদ্ধে নাম-পরিচয় দিয়ে হোর্ডিং লাগানোকে কোনও আইন সমর্থন করে না, বলল শীর্ষ আদালত।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে যোগী সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এক জনস্বার্থ মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই সব হোর্ডিং দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

কিন্তু হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় উত্তরপ্রদেশ সরকার।

বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের অবসরকালীন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে আদালত বলে, নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে হিংসায় অভিযুক্তদের নামে হোর্ডিং লাগানোকে সমর্থন করার মতো কোনও আইন নেই।

বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বিচারপতি ইউইউ ললিতের অবসরকালীন বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ গঠন করে সেখানে এই মামলা খতিয়ে দেখবেন।

সব পক্ষকে নথিপত্র তৈরি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এদিন শীর্ষ আদালতের এই বেঞ্চ বলেছে,  বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

দাঙ্গাকারীদের শাস্তি হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু সরকারের এই হোর্ডিং বা পোস্টার লাগানোর পক্ষে কোনও আইন নেই।

এর পাল্টা যুক্তি হিসাবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে বলেন, যাদের ছবি নাম পরিচয় সহ পোস্টার লাগানো হয়েছে, বিচার বিভাগ দ্বারা তারা দাঙ্গাকারী বলে প্রমাণিত।

তাঁদের প্রকাশ্য কার্যকলাপের কারণে তারা গোপনীয়তার অধিকার হারিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, ধরুন যারা জনসাধারণকে লক্ষ্য করে বন্দুক চালাচ্ছে, তারা দাবি করতে পারে না যে তাঁদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

কারণ, তারা তাঁদের গোপনীয়তাকে ত্যাগ করেছে। বিচারপতি ললিতের পর্যবেক্ষণ, এটা আলাদা বিষয়, যেখানে একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার কেড়ে নিয়েছে রাষ্ট্র।

তিনি বলেন, এখানে প্রশ্ন হল, বেশ কিছু মানুষের উপর দোষারোপ করে তাঁদের ছবি সহ পোস্টার লাগিয়েছে রাষ্ট্র। যদিও বিচারপতি বোস বলেন, আইনের ক্ষমতায় রাষ্ট্র সবকিছু করতে পারে।

কিন্তু সেই অধিকার কোথায়, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এরপর তুষার মেহতা মানবাধিকার নিয়ে ইউরোপীয় কনভেনশনের আট অনুচ্ছেদে থাকা গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায়কে উদ্ধৃত করেন।

উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে একজন প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের হয়ে এদিন এই মামলায় আদালতে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।

তিনি বলেন,  একজন ব্যক্তির কাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের কাজের পার্থক্য আছে। কোনও ব্যক্তি অভিযুক্ত হলেই তাঁকে দেশ বিরোধী বলে রাষ্ট্রের প্রকাশ্যে ঘোষণা লিঞ্চিং বা গণপিটুনির ঘটনা বাড়িয়ে তুলবে।

আরও পড়ুন : দিল্লি দাঙ্গা, লোকসভায় দিল্লি পুলিশের পক্ষে সাফাই অমিত শাহের, ও্য়াকআউট করল কংগ্রেস

উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার’-এ হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই সব হোর্ডিং খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।

কিন্তু যোগী সরকার এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। এদিন শীর্ষ আদালতও জানায়, এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কোনও আইন নেই।

যদিও পরবর্তীতে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার বিচার করবে বলে জানিয়েছে আদালত।

লখনউতে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার অপরাধে কংগ্রেস নেতা সাদাফ জাফর, রিহানি মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ শোয়েব ও দীপক কবীর, সুপরিচিত শিয়া ধর্মপ্রচারক কালবে সাদিকের ছেলে কালবে সিবতেন নুর এবং প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এসআর দারাপুরির বিরুদ্ধে শহর জুড়ে পোস্টার লাগিয়েছে যোগী সরকার।

সম্পর্কিত পোস্ট