সিন্ধিয়ার দলত্যাগ, গুরুত্ব না দিলে গভীর সঙ্কটে পড়বে কংগ্রেস
ঘোড়া কেনাবেচায় শাসকদলের সঙ্গে কংগ্রেস পেরে উঠবে কিনা তা সময় বলবে।
দিলীপ রায়
কংগ্রেস ছেড়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিজেপিতে যোগদানকে গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে আরও বিপাকে পড়বে কংগ্রেস।
সুপ্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব গভীর সঙ্কটের পথেই এগিয়ে যাবে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
তাঁদের কথায়, রাহুল গান্ধির অতি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন তরুণ প্রজন্মের নেতা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রাক্তন সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ।
রাহুলের ঘরেও তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। সেই কংগ্রেস নেতা দল ছেড়েছেন কেবলমাত্র লোভের জন্য, এটা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
অথচ, এমন অভিযোগ তুলেই তাঁর বিরুদ্ধে এখন সরব কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। অন্যদিকে, জ্যোতিরাদিত্য দলে যোগ্য সম্মান পাননি বলেই দলত্যাগ করেছেন দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের।
একই দাবি করেছেন বিজেপি নেতারাও। আর এখন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় এই নেতার হাত ধরে মধ্যপ্রদেশ দখলের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছেন মোদি-শাহরা।
কংগ্রেস চেষ্টা করছে রাজ্য দখলে রাখার। নিজেদের পক্ষের বিধায়কদের রিসোর্ট-হোটেল বন্দী করেছে দু’পক্ষই।
ঘোড়া কেনাবেচায় শাসকদলের সঙ্গে কংগ্রেস পেরে উঠবে কিনা তা সময় বলবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসের অস্তিত্ব নিয়ে। শতাব্দী প্রাচীন এই দল কি তবে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে?
লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল খারাপ হওয়ার পর সভাপতির পদ ত্যাগ করেন রাহুল গান্ধি।
তিনি এরপর মাঝে মধ্যেই থেকে থেকে উধাও হয়েও যান। আর তানিয়ে কটাক্ষ করে শাসক শিবির।
অন্যদিকে দলের নয়া প্রজন্মের নেতারা হতাশায় ভুগতে থাকেন। ভোটে বিপর্যয়ের পর আরও দূর্বল হতে থাকে নেতৃত্বহীন কংগ্রেস।
প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্বে দিশাহারা কংগ্রেস তবুও অধীর চৌধুরিকে লোকসভার দলনেতা নির্বাচিত করে সংসদে কিছুটা অক্সিজেন পায়।
কিন্তু সংসদের বাইরে গান্ধি পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত কংগ্রেসের প্রবীণ নেতৃত্ব বরাবরই বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিকে ভরসা করতে পারেন না।
প্রাক ডিজিটাল যুগের এই রাজনীতিকরা ডিজিটাল যুগের রাজনীতিকে আমলও দেন না।
যার ফলে মধ্যপ্রদেশ পুনরুদ্ধারে জ্যোতিরাদিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও গুরুত্ব পেয়ে যান দিগ্বীজয় সিং, কমলনাথরা।
দলীয় রাজনীতি থেকে ক্ষমতার অলিন্দ সব ক্ষেত্রেই প্রবীণদের এই দাপটে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ নয়া প্রজন্মের নেতা-নেত্রীরা।
এমনকি রাহুল গান্ধির প্রতি দলের প্রবীণদের আচরণ তাকেও দলীয় কার্যকলাপ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
ফলে মধ্যপ্রদেশ দলের দখলে থাকল কিনা সে প্রশ্নের থেকেও গুরুতর প্রশ্ন, নয়া প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে কি কৌশল নেবে কংগ্রেস তা নিয়ে।
সেক্ষেত্রে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দল ত্যাগ নিয়ে তাঁকে আক্রমণের পাশাপাশি নয়া প্রজন্মের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কংগ্রেসকে।
দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে তরুণ প্রজন্মের কোনও নেতাকে। সেক্ষেত্রে প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে দলের সভানেত্রী করে সংগঠনকে নতুন করে সাজাতে পারে কংগ্রেস, মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
পাশাপাশি তাঁদের মত, একই সঙ্গে দলের বিরুদ্ধে ওঠা ‘পরিবারতন্ত্র’-এর অভিযোগ থেকে বের হতে হবে কংগ্রেসকে। না হলে দেশের প্রাচীন এই দলের ভবিষ্যত খুবই ভয়ঙ্কর বলেই মনে করছেন তাঁরা।