ঠাকরেদের মুছে ফেলতেই শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী? মহারাষ্ট্রে ‘চানক্য’ নীতি বিজেপির

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে উদ্ধব ঠাকরে ইস্তফা দিতেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। বুঝে গিয়েছিল আর কোনো রহস্য নয় ক্লাইমেক্সে পৌঁছানোর আগেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতির টানটান চিত্রনাট্যে যবনিকাপতন ঘটল। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় বিজেপি ও শিবসেনার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যে চমক দেখা গেল তার জন্য বোধহয় বেশিরভাগই প্রস্তুত ছিলেন না।

কারণ সব সম্ভাবনা ও অনুমানকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন শিবসেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে। আর দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, যিনি সাফল্যের সঙ্গে টানা পাঁচ বছর মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিবসেনাকে ভাঙায় যার অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল সেই তিনি শেষ পর্যন্ত উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন!

মহারাষ্ট্রের এই চমক দেখে আমজনতা অবাক হয়ে গেলেও একটা বিষয় পরিষ্কার, যা ঘটেছে সবই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বে নির্দেশে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন একনাথ শিন্ডেকে এগিয়ে দিল বিজেপি? এক্ষেত্রে সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয়ে পরিষ্কার, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঠাকরে পরিবারের অস্তিত্ব‌ই শেষ করে দিতে চায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

জাতীয় রাজনীতিতে প্রচলিত কথাই হল, বিজেপি শরিকদের সঙ্গে জোট বাঁধলেও ধীরে ধীরে সেই শরীরকে গ্রাস করে। বিশেষ করে কোন‌ও শরিকদল যদি তাদের উপরে ওঠার চেষ্টা করে তবে সবটা মনে রাখে গেরুয়া শিবিরের নেতারা। ঠিক সময় বুঝে সেই শরিক দলকেই সবার আগে ধ্বংস করে তারা।

২০১৯ এর বিধানসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঊ লড়াই করেছিল শিবসেনা। দুই দল‌ই ১২৪ টি করে আসনে লড়াই করে। সেখানে বিজেপি ১০৬ টি আসন জিতে তাক লাগিয়ে দিলেও শিবসেনা অর্ধেকের বেশি আসনে হেরে যায়। তারা মাত্র ৫৬ টি আসন পায়। খুব সহজে এই জোট মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হলেও মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবিতে অনঢড় হয় বসেন উদ্ভব।

তিনি স্পষ্ট ঘোষণা করেন বিজেপি দেওয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতিমতো শিবসেনা থেকেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে ।এমনকি শেষ পর্যন্ত জোট ভেঙ্গে দিয়ে বেরিয়ে এসে কংগ্রেস ও এনসিপির সমর্থনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন। যদিও উদ্ধব বারবার দাবি করেছেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি। সোনিয়া গান্ধি এবং শরদ পাওয়ারেল জোরাজুরিতেই শেষ পর্যন্ত মবিকাশ আগড়ির নেতৃত্ব দিতে রাজি হন।

যোগ্যকে স্বীকৃতি দিয়ে আর‌ও ভালো পরিসেবার পথ সুগম করলেন মুখ্যমন্ত্রী

উদ্ধবের এই ভোলবদলকে বিজেপি বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে করে। শোনা যায় তখন থেকেই উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিলেন অমিত শাহ দেবেন্দ্র ফড়নবিশরা। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই তারা আড়াই বছরের মাথায় উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটালেন। তবে বলা সাহেব ঠাকরের ছেলে যাতে সহানুভূতি আদায় করতে না পারে তাই শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডেকেই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছেড়ে দিয়েছে।

ঘটনা হল উদ্ধব এই সেদিনও বলেছেন তিনি যখন তখন মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছেড়ে দিতে রাজি আছেন। শুধু আরেক শিব সৈনিককে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে হবে। এক্ষেত্রে বিজেপির দেবেন্দ্র তার মুখ্যমন্ত্রী হলে উদ্ভব বলতেন, বিদ্রোহ করে কি হল? সেই তো শিবসেনার কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারলেন না

এই সহানুভূতির সুযোগে উদ্ধব শিবসেনার বিদ্রোহী শিবিরেও অচিরে ফাটল ধরাতে পারে বলে বিজেপির আশঙ্কা। সেই সম্ভাবনা দূর করতেই শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করে উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।

বিজেপি ও শিবসেনার রাজনৈতিক আদর্শ প্রায় এক‌। দুটোই উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল। তবে শিবসেনা সেই সঙ্গে মারাঠি জাতীয়তাবাদের কথা বলে। সর্বভারতীয় দল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি সেটা বলতে পারে না। এই নিয়ে শিবসেনা ও বিজেপির কোন‌ও দ্বন্দ‌ও নেই। পুরোটাই ক্ষমতা দখলের বিষয়। এক্ষেত্রে শিবসেনার প্রভাব যত কমবে তত‌ই মহারাষ্ট্রে বিজেপির লাভ।

কারণ মারাঠাভূমের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গোটা পরিসরটাই তখন তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ঠাকরে পরিবার অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লে শিবসেনার আলাদা করে কিছু থাকবে না। বিজেপি ভালোই জানে একনাথ শিন্ডে নিজের থানে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হতে পারেন, কিন্তু তিনি কখন‌ই উদ্ধভ ঠাকরের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না।

সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে বলানো হয়েছে, শুভেন্দুর নাম SSC কেলেঙ্কারি থেকে নজর ঘোরানোর ‘ছক’ দাবি বিজেপির

অথচ একনাথের ময়দানি রাজনীতির অভিজ্ঞতা উদ্ভবের থেকে বেশি। কিন্তু ঠাকরে পদবিটাই বালাসাহেবের ছেলেকে শিবসেনার অবিসংবাদী নেতা করে দিয়েছে।

এই অবস্থায় উদ্ধব ঠাকরেকে কোণঠাসা করে ফেলতে পারলে শিবসেনার খেলা প্রায় শেষ। তখন একনাথ শিন্ডেকে সরিয়ে দেওয়া বিজেপির কাছে বাঁ হাতের খেলা!

তা ছাড়া নতুন সরকার মাঝপথে যদি পড়ে যায় তবে সেই ব্যর্থতার দায়ভারও বিজেপি নিতে চায় না। সূত্রের খবর বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে উদ্ধব ঠাকরে ইস্তফার কথা ঘোষণা করতেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী শিবিরে। এই গোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক বিধায়ক এখনও উদ্ধব ঠাকরেকেই নেতা মানেন।

এই অংশটি চায় উদ্ধব‌ই মুখ্যমন্ত্রী থাকুন, শুধু কং-এনসিপির বদলে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধুন শিবসেনা। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভায় আস্থাভোটের দিন বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের একাংশ উদ্ধবের দিকে চলে যেতে পারেন বলে বিজেপির আশংঙ্কা। সেক্ষেত্রে ফের সরকারের পতন ঘটলে তার দায়ভার এড়াতেও বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদ না নিয়েও থাকতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণ

সম্পর্কিত পোস্ট