শীতের অবেলায় কাননের নিশানায় ‘সোনার গোপাল’, পালে হাওয়া বৈশাখীর
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
বিদ্যাসাগর সেতুর টোল ট্যাক্স পেরিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অনাদরে এবং অবহেলায় পড়ে থাকা বাড়িটির এখন কদর বেড়েছে। একসময়ের চায়ের দোকানে আলোচনা হত বহুতলে জায়গা পেতে চলেছে মঙ্গলা হাট। ভাগ্য বদলে বাম আমলের ‘ভুতের বিল্ডিং’ এখন রাজ্য পরিচালনার মুখ্য প্রতিষ্ঠান। সেটাই এখন দখলের জন্য মরিয়া গেরুয়া শিবির।
নবান্নের মতো নিজেদের ঠিকানা বদল না করলেও, রাজনৈতিক পরিচয় বচল করে মাঠে নেমে পড়েছেন একাধিক নেতারা। এরই মধ্যে যদি উল্লেখযোগ্য নাম আসে তাহলে হল শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যাদের নিয়ে ছিল সেই শোভন-বৈশাখী সোমবার নামলেন রাজপথে । গোলপার্ক থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিল শেষে সোজাসুজি হুঁশিয়ারি দিলেন আগামী বিধানসভায় বিজেপির সরকার গড়ার জন্য তাঁরা অগ্রণী ভুমিকা পালন করবেন।
কেন মমতা নয়, আর কেন আগামী দিনে বিজেপি? যারা দল বদল করেছেন তাঁরাই এই জনসভায় গিয়ে এই বার্তাই দিয়ে চলেছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বিস্ফোরক কিছু তথ্য তুলে ধরলেন। ২০১১ সালে একটা চিন্তাধারা নিয়ে বাংলায় মমতার সরকার এসেছিল। ২০১৬ সালে সেই চিন্তাধারাকে সামনে রেখেই ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল সরকার। কিন্তু তার থেকে এখন অনেক দূরে চলে গিয়েছে। যে সোনার বাংলার সরকার গড়ার কথা মমতা বলছেন, সেই গরু পাচার, কয়লা পাচারের সোনার বাংলা আমরা চাইনি।
নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, ‘সোনার গোপাল’ এর জন্য বিধানসভায় তৃণমূলের ফলাফল খারাপ হবে। তিনি আরও বলেন, আমি যখন তৃণমূলের ছিলাম তখন এত অভিযোগ ছিল না। এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। আয়নার সামনে দাঁড়াক তৃণমূল। তাঁদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ময়দানে শোভন-বৈশাখী
একইসঙ্গে স্পষ্ট করলেন তৃণমূল ছাড়ার কারণ। রাজ্যের প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী বলেন, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী ২৫ লক্ষ বাড়ির কথাই জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে বিধানসভার অন্দরে মুখ্যমন্ত্রী-ই বলেন ওটা ২৫ লক্ষ নয়, তা ৪০ লক্ষ হবে। এই অপমান তিনি সহ্য করতে না পেরে সমস্ত পদ ত্যাগ করেন। একইসঙ্গে পুর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে মন্তব্য করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি মুখ্যমন্ত্রীর আদরের কানন।
এই মুহূর্তে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় সাংগঠনিক ক্ষমতা দুর্বল রয়েছে। তাই কলকাতার দায়িত্ব বর্তায় প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ওপর। গত সপ্তাহের মিছিলে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতির পর মনে হয়েছিল সেই দুর্দশা বিজেপির কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। কিন্তু তারপর ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক সহ বেশ গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠক জল্পনা বাড়িয়ে দেয়। সোমবার পুরোদমে কলকাতার রাস্তায় শোভন বৈশাখীর মিছিলের পর মনে হচ্ছে নীল বাড়ি দখলের জন্য দক্ষিণ কলকাতার মানুষও এগিয়ে আসবে। পরিবর্তন হতে পারে কলকাতার রাজনৈতিক চালচিত্র।
তবে কলকাতার রাজনৈতিক বদলের হাওয়া কি হাওড়ার নীল বাড়ির ১৪ তলার জলবায়ু বদল করতে পারবে? অপেক্ষায় রাজ্যবাসী।