৭ জানুয়ারী অগ্নিপরীক্ষা! “আমি আছি আপনারা আছেন তো?”
সহেলী চক্রবর্তী
২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে এরাজ্যের মাটিতে ঘাস ফুল ফুটিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই আন্দোলনে মা-মাটি-মানুষের সরকারের প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রে নন্দীগ্রামের মাটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই সঙ্গে জঙ্গলমহলের বেতাজ বাদশা শুভেন্দু অধিকারীকেও মনে রাখা অবশ্য কর্তব্য।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুভেন্দু সেসময় না থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামের মাটিতে ঘাসফুল ফোটানো সম্ভব ছিল না। ১০ নভেম্বর সেই নন্দীগ্রাম দিবসে এসে শহীদ স্মরণের পাশাপাশি এদিন ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামের ইতিহাসটা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি জঙ্গলমহলের বেতাজ বাদশাই বটে। সেকথা আজ নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে দিলেন নিজেই। ২০১১ সালের পর থেকে যে কোনো সভা তা সে শহীদ স্মরণ হোক বা রাজনৈতিক সভা তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেননি তাঁরই দলের নেতা-কর্মীরা এমন দৃশ্য বোধহয় কেউ দেখেনি।
আজ সেটাই করে দেখালেন শুভেন্দু। সমাবেশের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত কোথাও একবারও তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর দলের নাম নিতে দেখা যায়নি। এত বুকের পাটা যে কারোর থাকতে পারে সেটা বোধহয় উন্নয়নের বাংলার মাটিতে আজ স্পষ্ট হয়ে গেল।
তবে অনেকেই ভেবেছিলেন নন্দীগ্রাম দিবসের মঞ্চ থেকেই তিনি বোধহয় আগামী দিনে তাঁর রাজনৈতিক পথ-মতাদর্শ ও কর্মপন্থা জনসমক্ষে স্পষ্ট করে দেবেন। তবে সেটা তিনি করলেন না। বার্তা দিলেন- নন্দীগ্রামের মঞ্চকে কোনোভাবেই তিনি রাজনৈতিক দর কষাকষিতে কলুষিত হতে দেবেন না। রাজনীতির বার্তা রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে দেবেন।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bihar-election-result-nda-lead-on-bihar-election/
জল্পনা জিইয়ে রেখে বার্তা – ১৩ বছর পর বিধানসভা ভোটের আগে মনে পড়েছে, ৭ জানুয়ারী মনে থাকবে তো ? সেদিন আসবেন তো বন্ধুরা? এখান থেকেই ফের জল্পনার জটে আরও একটা গিঁট বাঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন তাহলে নাম না করে কি তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বিঁধলেন?
গোটা রাজ্যজুড়ে উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্র শুভেন্দুর একক প্রচারে নেমেছেন তাঁর অনুগামীরা। রাজনৈতিক ব্যানারে থেকে আপাত অব্যাহতি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শুভেন্দু। তাঁর মন্তব্য বারবার রাজনৈতিক ময়দানে বিতর্ক তৈরী করছে। সমালোচনার ঝড় তুলছেন তাঁরই সতীর্থতা।
তাতে তাঁর কুছ পরোয়া নেহি… বরং নন্দীগ্রামের খোলা মঞ্চ থেকে করোনা পরিস্থিতিতেও জমায়েত হওয়া হাজার হাজার মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করলেন আগামী দিনে আপনারা আমার সঙ্গে আছেন তো? সমবেত কন্ঠে উত্তর এল হ্যাঁ। অর্থাৎ তিনি জল মেপে দেখে নিলেন জনতার রায়ে কতটা তাঁর সঙ্গে রয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে তিনি জঙ্গলমহল ও তামাম পশ্চিমবঙ্গের মুকুটহীন সম্রাট তা প্রমাণ করলেন। একই সঙ্গে বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলটা ওয়ান ম্যান আর্মিতে আর চলছে না। তবে কী চাইছেন শুভেন্দু সেটা কিন্ত ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত ধোঁয়াশাই থাকল।
অন্যদিকে গোটা রাজ্যজুড়ে শাসকদলের বর্ষীয়ান নেতারা ক্রমশ বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। একদিকে উত্তরের মিহির গোস্বামী, দক্ষিণের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও শীলভদ্র দত্ত। সেই দলে নতুন সংযোজন একদা মমতা ঘনিষ্ঠ শুভেন্দু অধিকারী।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/ipl-2020-final-match-mumbai-indiance-vs-delhi-capital/
ওয়াকিবহল মহলের মতে, সমঝদারও কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হায় ….সেটা এবার একটু স্পষ্ট হল। বঙ্গ রাজনীতিতে একটি চমক আসতে চলেছে সেটা একদম নিশ্চিত। তবে সেটা ৭ জানুয়ারীর আগে না পড়ে সেটা ক্রমশ রাজনীতির প্রবাহমান স্রোতেই স্পষ্ট হবে।
তবে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলের অন্দরে একটি আশঙ্কার বার্তাও স্পষ্ট হচ্ছে। যদি জানুয়ারী মাসেই শুভেন্দু দলত্যাগ করেন সেক্ষেত্রে তীরে এসে ঘাসফুলের তরী ডুববে না তো? তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হবে সেটা পরের প্রশ্ন, কিন্তু শুভেন্দু ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হবেন কিনা তাতেও প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল।