শুভেন্দু-মুকুল দ্বৈরথে মোহরা ‘দলত্যাগবিরোধী আইন’

নয়ন রায়

দলত্যাগ বিরোধী আইন নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল বাম থেকে ডান বহু বিধায়ককে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছিলেন। সেই সময় বিধানসভার বাম ও ডান অধ্যক্ষকে দলত্যাগ বিরোধী আইনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাতে কোনভাবেই শাসকদল কোনো সময়ে কর্ণপাত করেনি।

২০১১ সালে বিরোধী দলনেতা ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। ২০১৬ সালে বিরোধী দলনেতা  ছিলেন আব্দুল মান্নান। একইভাবে দলত্যাগ বিরোধী আইনের কথা বিধানসভায় বারবার উল্লেখ করেছিলেন তাঁরা। তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। সেই সময় বাম ও ডান দল ত্যাগ করে যারা তৃণমূলে এসেছিলেন, তারা হলেন ইমানি বিশ্বাস। মুর্শিদাবাদ জেলার সুতির কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন।

আখরুজ্জামান মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। আশীষ মার্জিত মুর্শিদাবাদের খরগ্রাম বিধানসভা থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কানাই মন্ডল সিপিএমের নবগ্রামের বিধায়ক ছিলেন। তিনিও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। রবিউল ইসলাম বেলডাঙ্গা থেকে কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। তিনিও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।

মালদার রতুয়ার সমর মুখার্জি, গাজোলের দিপালী বিশ্বাস, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের তুষারকান্তি ভট্টাচার্য্য সহ এই তালিকা আরও লম্বা হতে শুরু করে। তাদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর কোন ভাবে ভোটে যাননি। তারা বসতেন ট্রেজারি বেঞ্চে। তাহলে নতুন করে যে আইনের কথা বলছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তার বাস্তবতা কোথায়?

দলত্যাগ আইন কার্যকরী করতে  হলে  রাজ্যপালের অনুমোদন দরকার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন “আমি জানি যে কিভাবে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরী করতে হয়।” এই দল ত্যাগ আইন কার্যকরী করতে হলে রাজ্যপালের অনুমোদনের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমোদন দরকার পরে। তারপর রাষ্ট্রপতির কাছে যায়।

মুকুল রায়ের ঘর ওয়াপসি বিজেপির অন্দরে কাঁপন ধরিয়েছে। বহু বিধায়ক তারা দলবদল করতে চাইছেন। মনে করা হচ্ছে বিজেপি বিধায়কদের একটা অংশ তলে তলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দিতে পারে। প্রশ্ন, তাই তড়িঘড়ি করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ আইনের কথা উল্লেখ করছেন?

রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন লোকসভায় ৪০৫ টি আসন তারা পেয়েছিলেন। সেই সময়ে দলত্যাগ আইনের কথা উল্লেখিত হয়েছিল। সেসব এখন ইতিহাস এবং অতীত।

বিধানসভার শেষ কথা অধ্যক্ষ। স্পিকার ইজ দ্য অল মাইটি। এই কঠিন সত্যটা পরিষদীয় রাজনীতিতে সকলের জানা। তাহলে ১১ থেকে ১৬ এই দীর্ঘ সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস যাদেরকে দলত্যাগ করিয়েছিলেন তাদেরকে সত্যিই ভোটে নির্বাচিত হতে বা হওয়ার কোনো সুযোগ কি দিয়েছিলেন? না দেননি। তাই বঙ্গ বিজেপি মনে করছেন  নতুন করে বিজেপির ঘর যাতে না ভাঙে তার জন্যই আঁটোসাঁটো বজ্র পাঁচিল দিয়ে রাজ্যপালকে সামনে রেখে আইনকে বাস্তবায়িত করতে।

এই নিয়ে বিতর্ক কেন? কারণ সাংসদ শিশির অধিকারী এবং সুনীল মণ্ডল, যারা তৃণমূলের ভোটে জিতে এসেছিলেন তারা এখন বিজেপিতে। লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়ে তাদের সদস্যপদ খারিজ করার আর্জি জানিয়েছেন। একই প্রশ্ন উঠছে লোকসভার ক্ষেত্রে যদি এই নিয়ম হয়, তাহলে বিধানসভা ব্যাতিক্রম নাকি?

সময় যত গড়াবে শাসক শিবির বিজেপির ঘর ভাঙতে যেমন ব্যস্ত থাকবে তেমনি বিরোধী দলনেতাকে কার্যকরী করতে হবে দলত্যাগ আইন। এই আইন চালু করে শাসকদলের মুখের উপর জবাব দিতে চাইছে বিজেপি। এখন দেখার আইন নিয়ে জল কতটা ঘোলাটে হয়।

বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস সন্ত্রাস করে এবং পুলিশের ভয় দেখিয়ে ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বহু বাম এবং ডান বিধায়কদের সেই সময় তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করেছিলেন। সেই সময়ে কারিগর ছিলেন এই শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এখন উল্টো মেরুর নেতা। তাই  শুভেন্দু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, “সেই সময় যদি আমি দল ভেঙে আনতে পারি তাহলে এই আইন কিভাবে কার্যকরী করতে হয়। তার জন্য যত দূর যেতে হয় যেতে রাজি আছি”।

বাংলায় লকডাউনের বিধিনিষেধ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল। নতুন করে দলত্যাগ  বিরোধী আইন নিয়ে তরজা তুঙ্গে। এখন দেখার বিরোধী আইনের পাঁচিলে আদৌ কোনো বিজেপির বিধায়ক উঁকি দিচ্ছে কিনা।

যদি বিজেপি বিধায়কদের একটা অংশ তৃণমূলে চলে যান তাহলে কোন শক্তির বলয়ে শুভেন্দু অধিকারী বিধায়কদের আটকাবেন? সেটা সময় বলবে। নাকি রাজ্যপালকে শিখন্ডী খাড়া করে কেন্দ্রের ভয় দেখিয়ে আইনকে কার্যকরী করাতে চাইবেন সে প্রশ্নও উঠছে।

সম্পর্কিত পোস্ট