পাপিয়ার নেতৃত্বে পাহাড়ে ঘাসফুল বিস্তার , দলের অন্দরে খুশির জোয়ার

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  শৈশবে বাবার হাত ধরে কোচবিহার থেকে রাজনীতি শুরু। বরাবরই বাবার রাজনৈতিক আদর্শের ওপর ভর করে বর্তমান পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় যেভাবে বিস্তৃত করেছেন তাতে পাপিয়ার ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে।

সাল ২০১১। বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারের নাটাবাড়ি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বদলা নয় , বদল চাই স্লোগানে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল বাংলা। এরাজ্যের প্রত্যেক কোনায় কোনায় সেই রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। বাদ যায়নি উত্তরের কোচবিহারও। সিপিআই (এম) নেতা ও দুবারের বিধায়ক তামসের আলীকে পরাজিত করে ৮১, ৯৫১ ভোটে জয়ী হন ঘাসফুলের কান্ডারী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

তখন থেকেই বাবার লড়াকু মানসিকতা ও ভাওয়াইয়া গানের সংস্কৃতি মিশ্রিত রাজনৈতিক ভাবধারার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কন্যা পাপিয়া ঘোষ। বাবার ছত্রছায়ায় লাগাতার রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কর্মসূচি এবং মানুষের জন্য উন্নয়নের পরিকল্পনা ধীরে ধীরে পাপিয়াকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। ধীরে ধীরে রাজনীতির পরিসরে পথ চলা শুরু করলেন পাপিয়া। পাপিয়ার নেতৃত্বে পাহাড়ে ঘাসফুল বিস্তারের কাজ শুরু হল।

টানা দুবার এই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূল কে জয় এনে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সেখানে বাবার হাত শক্ত করতে রাজনৈতিক ময়দানে নামেন পাপিয়াও। সদালাপী ও সদাহাস্যময়ী পাপিয়া ধীরে ধীরে জেলার রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। বাবার মতই তাঁর রাজনৈতীক ঘরানা। বরাবরই সুবক্তা তিনি। কর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা করার পাশাপশি সুকৌশলে তাদের বিভিন্ন অভাব অভিযোগ জেনে নিতে পারতেন।

পাপিয়ার নেতৃত্বে পাহাড়ে ঘাসফুল বিস্তারের কাজ

একই কায়দায় মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ক্যারিশমা ছিল বেশ আকর্ষনীয়। মূল স্রোতের রাজনীতিতে আসা পাপিয়ার বরাবরই ব্যক্তিগত ইচ্ছা ছিল। নিচুতলার কর্মী হোক বা ওপর তলার কর্মী, সকলেই পাপিয়ার উপর ভরসা রাখতেন। যেহেতু বাবা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, তাই এই ভরসা সহজেই অর্জন করতে পেরেছিলেন তিনি। তবে পাপিয়ার বক্তব্য স্পষ্ট। বাবার রাজনৈতিক পরিচয়কে সামনে রেখে ভবিষ্যতে রাজনীতি তিনি করতে চান না।

নিজের পরিচয়ের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষের সঙ্গে মিলে এবং মাটির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনৈতিক পরিসরে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ পরাজিত হন নাটাবাড়ি কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী মিহির গোস্বামীর কাছে। বেশ আঘাত পেলেও পাপিয়াকে বাবা বলেছিলেন রাজনীতিতে জয় -পরাজয় থাকেই। কখনই কর্মীদের দূরে সরিয়ে দিও না। তাদের সঙ্গে থাকো। এই মন্ত্রকে সামনে রেখে শিলিগুড়ি থেকে পাপিয়ার রাজনৈতিক যাত্রাপথ শুরু হয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ওপর আস্থা রাখলেন। দার্জিলিং সমতলে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী হলেন পাপিয়া ঘোষ। বিভিন্ন বিষয় হোক বা রাজনৈতিক সভা সব জায়গাতেই পাপিয়ার অবাধ বিচরণ। সামনে পুরভোট। সেখানেও তাকে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে দল। বিশেষ করে বিরোধী শক্তি এবং বামপন্থীদের পরাস্ত করতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভীত মজবুত করতে তারউপর দায়িত্ব দিয়েছে দল।

একদম সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছেন মানুষের জন্য। এটাই তাঁর মানসিক তৃপ্তি বলে মনে করেন তিনি। কম কথা বলতে পছন্দ করলেও বক্তৃতায় যেন আগুন ঝরে। বহু বছর পরদার্জিলিং জেলা এমন একজন নেত্রীকে পেয়েছে তাতে মানুষ অত্যন্ত আপ্লুত। তারা মনে করেন পাপিয়ার ঘোষ হচ্ছে তাদের কাছে মুশকিল- আসান। তাই বাবা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গর্ব হয় বৈ কি।

কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, রাজনীতির যে পাটিগণিত ফর্মুলা সেটা পাপিয়ার মধ্যে রয়েছে। তাই মেয়ে হিসেবে অবশ্যই গর্ব বোধ করি। আশীর্বাদ করি যেন আগামী দিনে মানুষের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এটাই আমার ঈশ্বরের কাছে কামনা। বাবাকেই রাজনৈতিক গুরু মেনে সব সময় রাজনৈতিক পরামর্শ নেওয়া এবং কিভাবে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা যায় ও কিভাবে সরকারের উন্নয়নকে সামনে তুলে ধরা যায় সেই কাজ চালিয়ে যান পাপিয়া।

দীর্ঘ ওঠাপড়ার ঐতিহ্যমণ্ডিত ত্রিপুরায় তৃণমূলের চালকের আসনে রাজীব

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে সামনে রেখে শিলিগুড়ি পৌর নির্বাচনে প্রচারে মানুষের কাছে যাচ্ছেন পাপিয়া। দার্জিলিং জেলায় সমতলের মানুষের ভাবনা ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনে হয়তো মানুষ একদিন বিধানসভায় তাকে দেখতে পাবে। তবে এ ব্যাপারে পাপিয়ার বক্তব্য পরিষ্কার। “দল যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তা মানতে বাধ্য। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এই দলে কোন গুরুত্ব পায় না। তাই কাকে প্রার্থী করবে কাকে প্রার্থী করবে না এটা সম্পূর্ণ দলের বিষয়ে । আমি এখন থেকে আগাম পরিকল্পনা করা ঠিক না। তাই বাবা যা বলেন যে রাজনীতি হলো মানুষের জন্য আমি সেটুকুই করছি। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারব না।”

তাঁর কথায়, “সামনে অনেক বড় লড়াই। শিলিগুড়ি পৌর নির্বাচনে জিততে হবে। মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে বলব যে আমি সার্থক। তাই প্রতিটি মানুষের সমর্থন আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।তাই ব্যক্তি পাপিয়া ঘোষ আমার কাছে যত বেশি না আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন সৈনিক।”

পাপিয়ার কথায়, “আমি পদের জন্য লালায়িত নই । গণতন্ত্রের ওপর দাঁড়িয়ে, পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের যে সমস্ত প্রকল্প নিয়েছে তা সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে আমার মূল লক্ষ্য। তাই প্রতিটি মানুষের সহযোগিতাকে সঙ্গে করে আমি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মানুষ আছে। অর্থাৎ এই পুর নির্বাচনে আমাদের রাজনৈতিক শক্তি আগামী ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে একটা শক্ত জায়গায় তৈরি করে দেবে। আমরা চাই আমাদের নেত্রী ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হোক। তার জন্য লড়াই চলবে। মানুষকে নিয়ে চলতে হবে। উন্নয়নের কথা বলতে হবে এটাই হচ্ছে আমার স্লোগান।”

সম্পর্কিত পোস্ট