দক্ষ প্রশাসক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী ব্রাত্য়, মৌসমের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো মালদা?

সহেলী চক্রবর্তী

বরকত সাহেব ও মালদার আম বেশ বিখ্যাত। বরকত সাহেব ছিলেন ইন্দিরা জমানায় রেল মন্ত্রী। আর মালদার আমের খ্যাতি জগৎ বিখ্যাত। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই জেলায় রাজনীতি থাকবে না তা কখনও হয় নাকি!

রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে মালদা জেলা বহুকাল থেকেই আলোচনার শিরোনামে। বরকত সাহেবের মৃত্যুর পর, কংগ্রেসের দূর্গে ফাটল ধরেছিল। সেই ফাটল আজও অব্যাহত।

একদিকে বরকত সাহেবের পরিবারের কাজিয়া অন্যদিকে তৃণমূলের দলীয় কোন্দল। তৃণমূলের অন্তর্কলহের জেরে ১৯ এর নির্বাচনে মালদা উত্তর কেন্দ্রটি গেরুয়া বাহিনীর দখলে চলে যায়।

মোয়জ্জেম হোসেন, নীহার ঘোষ, দুলাল, সাবিত্রী, মৌসম এবং কৃষ্ণেন্দু -এদের রোজনামচায় প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মালদা।

তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ১০০ দিনের কাজের টাকা লুঠ, চাকরী দেওয়ার নামে প্রতারণা, সীমান্তে অনৈতিক কাজকর্ম। এমনকি রয়েছে বহু ক্ষেত্রে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও।

অভিযোগের লম্বা লিস্ট আরও আছে। ভারত-বাংলাদেশের সবথেকে বড় বর্ডার মহদীপুর। এই সীমান্তে যে সব ট্রাক পার হয়, তাতে লোডিং-আনলোডিং-ওভারলোডিং থেকে যে পরিমান তোলা ওঠে তা তৃণমূলের বেশ কিছু নেতার পকেটে যায়। পাশাপাশি রয়েছে পুলিশ দিয়ে দল চালনার অভিযোগ। এই সমস্ত অভিযোগ কালীঘাটে পৌঁছলেও কোনো আমলই দেননি নেত্রী খোদ।

ফলে ভাগীরথী ও মহানন্দা নদীর ফাটলের মত তৃণমূলের ফাটল ক্রমশ বাড়ছে। আর এই ফাটলের কারণেই মালদায় গেরুয়া পতাকা পতপত করে উড়ছে।

অশান্ত মালদাকে শান্ত করতে দল প্রাক্তন পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর কাঁধেই দায়িত্ব সঁপেছিল। তাতে সাংগাঠনিক স্তরে বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। উল্টে ফাটল আরও বেড়ে গেছে।

সংস্কৃতির জেলা দক্ষিণদিনাজপুরে মাত্রা ছাড়া দুর্নীতি, গৌতম পারবেন তো হাল ধরতে?

প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ন চৌধুরীর মত দক্ষ সৈনিককে সাইড করে দেওয়া, জেলার মানুষ মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। দলীয় স্তরে অভিযোগ কংগ্রেস থেকে আসা মৌসম বেনজির নূরকে ভরসা করায় দলে কলহ বেড়েছে।

মালদার অন্তর্কলহ কমবে না। বরং বাড়বে। কারণ একে অপরের উপর বিষোদগার করতে কেউই ছাড়ে না। শুধু বিষোদগার কেন তৃণমূলের এক প্রাক্তন নেতার অভিযোগ জেলা পরিষদের ব্যবস্থা অচল।

দলনেত্রী যতই সাংগাঠনিক কথা বলুক না কেন, তা কাজে লাগছে না। তা বহু নেতার কথায় স্পষ্ট। এই কারণেই হুহু করে বেনজল ঢুকছে মালদা জেলায়। এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে গেরুয়া শিবির।

হবিবপুর, গাজল, চাঁচল, হরিশচন্দ্রপুর, মালতীপুর, রতুয়া, মালদা, মানিকচক, ইংলিশবাজার, মোথাবাড়ি, সুজাপুর, বৈষ্ণবনগর- সবকটি বিধানসভায় তৃণমূল ২১ এর আগে আশঙ্কার মেঘ দেখছে।

আরও একটি গুরুতর অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে ওঠে। তা হল মানিকচকে বেআইনি কারবার এবং বৈষ্ণবনগর দিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচারের বিপুল অর্খে শাসকদলের বহু নেতা ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

এই তথ্য খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও রয়েছে। কিন্তু তিনি অসহায়। কারণ গোড়াতেই তো গলদ। গলদের মূল কারণ হল পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে দল চলে। এই অভিযোগ খোদ দলের ভিতরেই।

তাই ২১ এর ভোট মালদার জেলায় শাসকদলের পক্ষে সুখকর হবে না। সময় থাকতে থাকতে খোদ নেত্রী যদি রাশ না ধরে তাহলে মুশকিল। মৌসম সভাপতি হয়েও জেলার ছবি পাল্টাতে পারে কিনা তা নিয়ে সিঁদূরে মেঘ দেখছেন মালদা জেলাবাসী।

সম্পর্কিত পোস্ট