শুভেন্দুর ‘মানভঞ্জন’ মেটাতে মাঠে নামলেন সৌগত

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ১০ নভেম্বরের কথা রেখেই বৃহস্পতিবার রামনগরের ময়দানে ‘মেগা শো’ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। গত কয়েকদিন ধরে শুভেন্দুর দলবদলের যে জল্পনা চলছিল তাতে কার্যত জল ঢেলে শুভেন্দু বলেন “এখনও আমি দলের প্রাথমিক সদস্য। মন্ত্রীসভারও সদস্য। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তাড়াননি, আমিও দল ছাড়িনি”।

এদিনের সভামঞ্চ থেকে দল ছাড়ার কথা স্পষ্ট না করলেও তৃণমূলের সঙ্গে তার দুরত্ব যে বেড়েছে সেটা স্পষ্ট করলেন শুভেন্দু অধিকারী। নাম না করেই বললেন, “আমি বসন্তের কোকিল নই। শুধু ভোট চাই, ভোট দাও বলি না, সাত দিন, ২৪ ঘন্টা মানুষের সঙ্গে থাকি”। এই মন্তব্যে ঠিক কার দিকে আঙুল তুললেন শুভেন্দু। তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

তবে এই মুহুর্তে তৃণমূলের যা অবস্থা, তাতে শুভেন্দুকে দলের প্রয়োজন সেটা বলার অবকাশ থাকে না। সেই কারণেই শুভেন্দুকে চটিয়ে কোনও মন্তব্য করছে না তৃণমূল। বুধবার চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেই দিলেন, দলের ব্যানারের বাইরে যে কেউ এক বা একাধিক সমাবেশ করতেই পারেন।  সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ২ বর্ষীয়ান সাংসদ। কথা বলেছেন সাংসদ সৌগত রায়ও। সংবাদমাধ্যমের কাছে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকের কথা নিজেই জানালেন সৌগত রায়।

মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই শুভেন্দুর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে স্পষ্ট করেছেন সৌগতবাবু। শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলার পর মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, সেকথাও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জানান দমদমের সাংসদ। দল ছাড়া নিয়ে কোনও ভাবনা নেই শুভেন্দুর তা স্পষ্ট করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে শুভেন্দুর কোনও দাবী নেই তা পরিষ্কার করেছেন সৌগত রায়। তবে দলের সাংগঠনিক বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেবিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি তিনি।

আরও পড়ুনঃ বিজেপি শাসিত রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এগিয়ে, জানালেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

এর আগে দলের সঙ্গে দুরত্ব মেটাতে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়িতে উপস্থিত হন প্রশান্ত কিশোর নিজে। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। তাই মাঠে নামতে হয় দুই বর্ষীয়ান নেতাকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের সাংগঠনিক রদবদলের কথা জানিয়েছেন শুভেন্দু। প্রশান্ত কিশোর নয়, বরং দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে রাজি রয়েছেন তিনি।

সৌগত রায়ের কথায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে এখনও অবধি দলনেত্রীর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর কোনও কথা হয়নি। তাহলে রামনগরে সভা থেকে “বসন্তের কোকিল” কাকে বলেলন? তৃণমূলের একাংশের মতে, এর আগে একাধিক জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। অন্যান্য নেতার তুলনায় রাজ্যের একাধিক জেলায় একাধিপত্য ছিল তাঁর। কিন্তু জুলাই মাসে সেই পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দেওয়া হয়। তাতেই বেজায় চটেছেন তিনি।

এর থেকে স্পষ্ট হয়, ভোটের ঘুটি সাজানোর ক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের রণনীতি মানতে নারাজ শুভেন্দু। পাশপাশি দলের দায়িত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তিনি কাজ করবেন একথা স্পষ্ট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নতুন করে সেতু বন্ধন করতে মাঠে সৌগত রায় আবার নামবেন সেটাও তিনি জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ফের নন্দীগ্রামের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে সৌগতবাবুর। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে থাকতে পারেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের সঙ্গে টানাপোড়েন মেটাতে কোন পথে হাঁটবে তৃণমূল। কারণ এই মুহুর্তে শুভেন্দুর সমস্ত শর্ত দলের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে মাঝামাঝি কোনও একটা সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে ঘাসফুল শিবিরকে। তাহলে কি দলের সঙ্গে ‘মানভঞ্জন’ পর্ব মিটিয়ে দলের ব্যানারে দেখা যাবে শুভেন্দু অধিকারীকে?

সম্পর্কিত পোস্ট