SpeakUpAgainstFuelHike : মানুষের সাথে মানুষের পাশে

পার্থ প্রতীম বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি

পেট্রোপন্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের যৌথ আন্দোলনে উত্তাল হলো সারা পশ্চিমবঙ্গ। যদিও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন হয়নি।

কিন্তু দূর্ভাগ্য এটাই যে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে করা এই আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জী অথবা তাঁর তৃণমূলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলোনা। কিন্তু কেন? আজ মমতা ব্যানার্জী যদি ক্ষমতায় না থাকতেন তাহলে কি এইরকম অদ্ভুত আচরণ করতে পারতেন?

সম্প্রতি তিনি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন যে, তিনি নাকি ২১ শে জুলাই এর সভা স্যাক্রিফাইস করছেন । আর তার বদলে বিরোধীরা তাদের খুচখাচ আন্দোলন থেকে সরে আসুক।

মানুষের প্রতিদিনের জীবনযন্ত্রণা নিয়ে আন্দোলন কে কি খুচখাচ আন্দোলন বলা যায়?

আর এবছরের ২১শে জুলাই এর স্যাক্রিফাইস সম্পর্কে বলি, প্রথমত, ২১ শে জুলাই এর আন্দোলন জাতীয় কংগ্রেসের আন্দোলন। উনি সেই দিনের প্রভাব ও পরিচিতিকে জাস্ট হাইজ্যাক করেছেন।

দ্বিতীয়ত, উনি ক্ষমতায় আসার পর ওই ২১শে জুলাই দিনটা জনমানসে “পাগলু দিবস” হিসাবেই পরিচিতি লাভ করেছে। ওই দিনের প্রকৃত গুরুত্ব বুঝলে ওনার উপস্থিতিতে এমনটা মোটেও হতে পারতো না।

করোনা মোকাবিলাঃ এটাই রাজনীতি করার প্রকৃত সময়

যাইহোক, আজকের দিনে, যখন বিশ্ববাজারে পেট্রোপন্যের মূল্য যথেষ্টই কম, যখন পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে পেট্রোপন্য অনেক সস্তা দরে পাওয়া যাচ্ছে, তখন ভারতবর্ষে কেন পেট্রোপন্যের এই আকাশছোঁয়া মূল্য?

করোনার আবহে দেশের মানুষ যখন রোজগারবিহীন। যখন ভারতবর্ষে নতুন করে ৪০ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গিয়েছেন, যখন নুন পান্তার কোনোটাই ঠিকঠাক জোগাড় করা যাচ্ছেনা, তখন লাগাতার ২৩ দিন ধরে পেট্রোপন্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েই চলেছে। আর সেই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন করাকে কি খুচখাচ আন্দোলন বলে?

জানি, পেট্রোপন্য বিক্রি করে সরকার যে বিপুল পরিমান কর আদায় করে, সেই অর্থে রাজ্য সরকারেরও ভাগ আছে। পেট্রোপন্যের দাম যত বাড়বে রোজগারের পরিমাণ ততই বাড়বে। গত দশবছরে রাজ্যবাসীর ওপরে আড়াই লক্ষ কোটি টাকার নতুন ঋণ চাপিয়ে দেওয়া তৃণমূল সরকার আজ প্রকৃত অর্থে ভাঁড়ে মা ভবানী।

অবিবেচকের মতো জিএসটির চালু হওয়ার পরে সেই অবস্থা আরও শোচনীয়। সঙ্গে পরিকল্পনাহীন নানান খাতে সরকারের খরচেও লাগাম পরানো যাচ্ছে না। ফলে প্রায় কপর্দকশূণ্য সরকারের জন্য পেট্রোপন্যের এই মূল্যবৃদ্ধি সোজা কথায় আশীর্বাদ স্বরুপ।

তাই একসময় কথায় কথায় বিরোধিতা করা মমতা ব্যানার্জীর গলা আজ শুকিয়ে কাঠ।  সাড়ে পাঁচ আর সাড়ে ছয় মিলিয়ে বারো হয়, এটা আমরা ভালোই জানি। মানুষ সঙ্গে থাকলে সেই বারো যে, বেয়াল্লিশ অথবা বাহান্ন হতেও সময় নেবেনা, সেটাও আমরা জানি।

২০১১ সালে জাতীয় কংগ্রেস সবরকমের সহযোগিতা না করলে আজ আপনি নবান্নের চোদ্দতলায় বসে হাওয়া খেতে পারতেন না। ইদি আমিন থেকে চাওসেস্কু বা হিটলারের মতো আপনার থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাশালীদেরও একদিন ক্ষমতা হারিয়ে পথের ধুলায় লুটিয়ে পড়তে হয়েছে।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক কথা….

তাই আপনি যতই চেষ্টা করুন, আপনার ওই “স্যাক্রিফাইস” এর বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের নিত্যযন্ত্রণার বাস্তবতাকে চাপা দিতে পারবেন না।

আপনি বর্তমানে যা করছেন, সোজা কথায় তা ক্ষমতায় থাকার জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকারের চাটুকারিতা। পারলে এবারও ২১শে জুলাই এর পাগলু দিবস পালন করুন। প্রমাণ হয়ে যাবে, মানুষের দাবী নিয়ে রাস্তায় থাকা আর ডিম্ভাতের লোভ দেখিয়ে জোর করে রাস্তায় টেনে আনা মানুষের মধ্যে তফাৎ কতটা।

একদিনের ডিম্ভাত যদি মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজন মিটিয়ে দিতে পারতো তাহলে অবিবেচকের মতো পেট্রোপন্যের মূল্য বৃদ্ধিকারী অত্যাচারী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সারা বাংলা জুড়ে মানুষ তাদের জীবন বাজি রেখে এই আন্দোলনে সামিল হতোনা।

রাজনীতির কালো মেঘের ভেতরে বিদ্যুৎ কিরণের মতো সাধারণ মানুষের এই আন্দোলন আগামীদিনে যে আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করবে, সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা।

বিঃদ্রঃ এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত মন্তব্য লেখকের একান্ত ব্যাক্তিগত। TheQuiry এর সঙ্গে কোনোভাবেই দায়ী নয়।

সম্পর্কিত পোস্ট