দুর্নীতি ভুলে ধোলাই-পেটাইয়ে মন! শাসক থেকে বিরোধী, পিছিয়ে নেই কেউ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতে চারিদিকে ছি-ছিক্কার পড়ে গিয়েছিল। তবে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির দুটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৫০ কোটি টাকারও বেশি উদ্ধারের পর তৃণমূল কংগ্রেস কিছুটা যেন নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল।

বারবার বলছিল, অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু পার্থ যা করেছেন তার দায় দলের নয়। কিন্তু গরু পাচার মামলায় সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করতেই গোটা গল্পটা বদলে গেল। বিরোধীরা যেমন তাদের তৃণমূল বিরোধী স্বর আরও তুঙ্গে তুলেছে, তেমনই পাল্টা চমক ধমকের রাস্তায় হাঁটছেন একের পর এক তৃণমূল নেতা।

অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পরের দিনই বীরভূমের তৃণমূল নেতা বলে বসলেন, “ইলমবাজারে অনুব্রত মণ্ডলকে গরু চোর বলে বিরোধীরা কোন‌ও মিছিল বার করলে তার পিঠের চামড়া গুটিয়ে নেওয়া হবে।” কিন্তু নিচুতলার তৃণমূল কর্মীরা আবেগের বসে দু’চারটে এমন মন্তব্য করে ফেলেছেন ব্যাপারটা তা কিন্তু নয়।

বর্ষিয়ান তৃণমূল সাংসদ, যিনি দীর্ঘ সময় দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, সেই সৌগত রায় কামারহাটিতে দাঁড়িয়ে বললেন, “তৃণমূলের সবাই চোর বললে বিরোধীদের পিঠের চামড়া দিয়ে জুতো তৈরি করা হবে!”

শব্দের মণি-মানিক্য এখানেই শেষ হচ্ছে না। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা বিখ্যাত আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে দাঁড়িয়ে বললেন, “এবার বদলা হবে।” ওই এক‌ই মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার বললেন, “মমতা-অভিষেকের নামে বাজে কথা বললে এবার ধোলাই হবে, পেটাই হবে!”

দিদি কেষ্টর পাশে, বিরোধীরা রাস্তায়, আমজনতা যাবে কোথায় ?

আর বঙ্গ রাজনীতির ধারা মেনেই এই প্রতিটা ঠ্যাঙানির হুমকির সময় উপস্থিত কর্মী সমর্থকরা সজোরে হাততালি দিয়ে বক্তব্য রাখা তৃণমূল নেতাকে আরও উৎসাহ জুগিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে ঘটনার গতিপ্রকৃতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখা প্রশাসনের পক্ষে বেশ কঠিন। তবে শুধু তৃণমূল কংগ্রেস না, বিরোধীরাও এই চমক ধমকের ক্ষেত্রে খুব একটা পিছিয়ে নেই।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “দরকারে পাল্টা মার দেবে বিজেপি”। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই পুরোটা অহিংস হবে তেমন ভাবাটা কাজের কথা নয়”। তিনি সরাসরি কিছু না বললেও এই কথার ইঙ্গিত কী তা মোটামুটি স্পষ্ট।

সব মিলিয়ে ইস্যু বেলাগাম দূর্নীতি হলেও, তার থেকে নজর ঘুরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি মোটামুটি আস্তিনের কাপড় গোটানোর দিকেই বেশি নজর দিয়েছে। কারণ যখন-তখন ‘অ্যাকশনে’ নেমে পড়তে হতে পারে!

সম্পর্কিত পোস্ট