পরেশের জার্সি বদলে চমকপ্রদ ‘ডিল’ মেয়ের চাকরী? মমতার মন্ত্রীসভা থেকে বহিস্কারের জল্পনা তীব্র
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাম জমানায় ফরওয়ার্ড ব্লকের শীর্ষ নেতা ছিলেন পরেশ চন্দ্র অধিকারী। দীর্ঘদিন তিনি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। উত্তরবঙ্গ থেকে সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্যের পর তিনি ছিলেন বাম মন্ত্রিসভার সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য। কোচবিহারে তাঁর ও কমল গুহ জুটির দাপটে বেশ কোণঠাসা থাকতো বড় শরিক সিপিএম।
এই নিয়ে কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক-সিপিএম সংঘর্ষ একসময় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়েই ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরেশ। একটুর জন্য হেরে যান। এরপর থেকেই তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের একাংশের যোগাযোগ গড়ে ওঠে বলে খবর। ২০১৮ সালে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি সিংহ শিবির ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন।
পরেশ চন্দ্র অধিকারীর এই দলবদলে অবাক হয়ে গিয়েছিল বামফ্রন্টের নেতা থেকে শুরু করে সমর্থকরা। তাঁর মত হেভিওয়েট বাম নেতা দল ছাড়তে পারেন এটা অনেকেই অনুমান করতে পারেননি। পরেশ চন্দ্র অধিকারীর এই দলবদলের সময় হঠাৎই হাই স্কুলের সহ শিক্ষিকার চাকরি পেয়ে যান তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। তৃণমূলে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনিও চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হন।
অঙ্কিতা অধিকারীর স্কুল শিক্ষিকার চাকরি পাওয়াটা বেশ চমকপ্রদ। এসএসসির প্রথম লিস্ট তো দূরের কথা, ওয়েটিং লিস্টেরও কোথাও তাঁর নাম ছিল না। শোনা যায় পরীক্ষায় পাশই করতে পারেননি এই মন্ত্রীকন্যা। কিন্তু বাবার শিবির বাদলের জন্যই রাতারাতি এসএসসির ওয়েটিং লিস্টের এক নম্বরে তাঁর নাম চলে আসে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
ওয়েটিং লিস্টে ২০ নম্বরে নাম ছিল শিলিগুড়ির ববিতা সরকারের। মন্ত্রী কন্যার নাম এক নম্বরে চলে আসায় তিনি ২১ নম্বরে নেমে যান। ফলে শেষ পর্যন্ত আর চাকরি হয়নি। সেই সময় এসএসসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল আরটিআই করে নম্বর বেড়েছে মন্ত্রীকন্যার। কিন্তু এই নিয়ে এসএসসি কর্তৃপক্ষ কোনও নির্দিষ্ট নথি বা পরীক্ষার খাতা কিছুই দেখাতে পারেনি বলে অভিযোগ।
সিবিআই অফিসে গেলেন অনুব্রত, আদালতের কঠোর মনোভাবই কী কারণ?
মেয়ের চাকরির পর ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার থেকে পরেশ চন্দ্র অধিকারীকে প্রার্থী করে তৃণমূল। এক্ষেত্রে ২০১৪ এর ভোটে তাদের জয়ী সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে বাদ দেওয়া হয়। শোনা যায় লোকসভায় তাঁকে প্রার্থী করার শর্ত দিয়ে তৃণমূলে এসেছিলেন বাম জমানায় এই দাপুটে মন্ত্রী। যদিও বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের কাছে হেরে যান পরেশ।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে ফের প্রার্থী করে তৃণমূল। এবার বিপুল ভোটে মেখলিগঞ্জে জিতে আবার বিধানসভায় আসার সুযোগ পান। তাঁকে শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রীও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানায় খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার মোহে পরেশ ‘ডিমোশন’ অর্থাৎ পদাবনতি মেনে নেন। সেই এখন তিনি রাজ্যের রাজনীতির অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রে।
খোদ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ের শিক্ষিকার চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় রীতিমত হুলুস্থুলু পড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মেয়ের পিএইচডি ডিগ্রির ক্ষেত্রেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। পরেশের ছেলের ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কোন কোন মহল থেকে। যদিও এই বিষয়ে কোনও সুস্পষ্ট জবাব এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি।
তবে কোচবিহার থেকে কলকাতায় আসার সময় বুধবার যেভাবে মাঝপথে ফেরার হয়ে গেলেন রাজ্যের এই মন্ত্রী তা নজিরবিহীন তো বটেই, এর আগে এমন কোনও নমুনা আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে পরেশ চন্দ্র অধিকারীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে পারে সিবিআই। তাছাড়া অস্বস্তি এড়াতে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারও করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।