রাজ্যের সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, রাজনৈতিক পুনর্বাসন নাকি বনবাস?

নয়ন রায়

লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯ এ দলের বিপর্যয় হয়েছিল। তৃণমূলকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল উত্তরবঙ্গ থেকে। তাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন কোচবিহারের জেলা সভাপতি ওরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

তড়িঘড়ি তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলকে কার্যত ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল নিশীথ প্রামাণিক। সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়া ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বিজেপির তান্ডবে।

এখানেই ক্ষান্ত থাকেনি বিজেপি। ঠাকুর মদনমোহনের শহর গেরুয়া পতাকায় কেঁপে উঠেছিল ।

সেইসময় কোচবিহার শহর, কোচবিহার সদর, নাটাবাড়ি, তুফানগঞ্জ, শীতলকুচি, মাথাভাঙা এবং হলদিবাড়ি- তোর্ষা নদীর পাড়ে বিধানসভাগুলিতে গেরুয়া আতঙ্কে তৃণমূল ঘর থেকে বেরোনোই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল।

সেই সময়ে দলনেত্রী মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণকে জেলা সভাপতি করে দেয় পর্যবেক্ষক সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে। বিনয়-পার্থর যৌথ উদ্যোগ কোচবিহারের মূল কান্ডারী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। তাতে দলের বিপর্যয় আরও বাড়ে।

যদি অতীতের দিকে তাকানো যায় তাহলেই দেখা যাবে এই রবীন্দ্রনাথ ঘোষই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর চোখের মণি।

নজরে হাওড়া, রাজীবের তত্ত্বে শিলমোহর মমতার

১৯৯৮ সালে দল গঠনের পর কোচবিহার জেলায় তৃণমূল যতটুকু প্রভাব বিস্তার করেছিল তাঁর কৃতিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। এই তথ্য জেলার মানুষ খুব ভাল করেই জানেন।

রাজ্য জুড়ে করোনা পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার পর দল রবীন্দ্রনাথ ঘোষের উপর আত্মনির্ভর হয়ে পড়ে। গোটা জেলায় করোনা মোকাবিলায় রবি ঘোষ নিজে আর্থিক ও সামাজিকভাবে মানুষের পাশে থেকেছেন। এই ঘটনার সাক্ষী গোটা জেলার মানুষ।

তাই এই দুঃসময়ে তাঁকে জেলা থেকে সরিয়ে রাজ্যের সহ সভাপতির পদে বসানোয় আখেরে ক্ষতি দলেরই হয়। কারণ পার্থ প্রতিম রায়ের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তিনি গোষ্ঠী কোন্দলকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন বারবার।

এই রদবদলের ফলে রবি হীন কোচবিহারে ২১ এর নির্বাচনের পর পদ্মের চাষ বাড়বে তা মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কারণ জেলা সামলানোর মত ক্ষমতা পার্থ প্রতিম রায়ের নেই, বলছেন দলেরই একাংশ।

গোটা কোচবিহার জুড়ে দলীয় কোন্দল, অসন্তোষ বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। কখনো কখনো মুখ্যমন্ত্রীকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

একদিকে উদয়ন, মিহির, পার্থ প্রতিম, বিনয়কৃষ্ণ, ভূষণ সিং, পরেশ অধিকারী, ফজলে করিম, হিতেন বর্মন। আবার কখনো অর্ঘ রায় প্রধানের নেতৃত্বের দলীয় কোন্দলের সংবাদ কালীঘাটে এসে পৌঁছেছে। রুষ্ট হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দিয়েছেন সাবধানবানী।

তাই এই রদবদলে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পুনর্বাসন নাকি বনবাস হল প্রশ্ন উঠছেই। তবে রবি হীন ২১ এর লড়াই পার্থর কাছে বেশ চ্যালেঞ্জি হবে তা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট।

সম্পর্কিত পোস্ট