ক্ষমতা দখলের আগে প্রয়োজন মজবুত সংগঠন, ত্রিপুরায় ‘রাজীব’ ভরসা অভিষেকের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আগরতলার পুরভোটে বিজেপির সঙ্গে জোর টক্কর দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। মাত্র তিন মাসেই ২৪ শতাংশ ভোট নিজেদের ঝুলিতে ভরে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকরা। যার পুরো কৃতিত্বই দক্ষ সংগঠক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমনটাই মত প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রী এবং দক্ষ সংগঠক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড়ে বিজেপি প্রার্থী হয়ে বিধানসভা ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। বিজেপির কড়া হিন্দুত্ববাদী মনোভাব এবং রাজ্যকে ভাগ করার প্রচেষ্টা সেই সঙ্গে একাধিক নেতৃত্বের লাগামছাড়া মন্তব্যে ক্রমেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে রাজীবের।

নিজের কর্ম দক্ষতা এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুডবুকে ছিলেন রাজীব। দক্ষ সংগঠকের দলবদলে ভেঙে পড়েছিলেন কর্মী সমর্থকরা। রাজনীতি বিমুখ যুবসমাজকে রাজনীতির মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে রাজীবের ক্যারিশমা ছিল প্রশংসনীয়।

তাই রাজীবের দলবদলে আঘাত পেয়েছিলেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ভুল স্বীকার করায় তাই রাজীবকে দলে নিতে আর বিলম্ব করেননি তারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই জুহরির সোনা চেনার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

মিশনারির পর জামিয়া মিলিয়া, বিদেশি অনুদানের অ্যাকাউন্ট বন্ধ

চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ত্রিপুরার মাটিতে ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। সেই সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে।

দায়িত্ব নিয়েই মাটি কামড়ে লড়াই শুরু করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে অভাব-অভিযোগ শুনতে শুরু করেন। বিপ্লব দেব ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্মসংস্থানের। এখনো ত্রিপুরায় সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এমনটাই অভিযোগ করেছেন অনেকেই। মূলত সেই সমস্ত অভাব-অভিযোগকে একত্রিত করেই মানুষের উন্নতিকল্পে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত উদ্যোগের কথা  জনসাধারণের কর্নকূহরে পৌঁছে দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক দক্ষতা এবং বিচক্ষণতায় অন্যান্য রাজনীতিবিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। শুধু তাই নয় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। দীর্ঘ ১০ বছর স্বচ্ছতার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় দপ্তর সামলেছেন তিনি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন এহেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সামনের সারিতে এনে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিলেন, আগামী দিনে সংগঠনের কাজে সৎ ও স্বচ্ছ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বেশি।

শুধু তাই নয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বকলমে বিজেপির সদস্য ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও মে মাসের পর থেকে তার সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। তা সত্বেও গেরুয়া শিবিরের একাধিক খুটিনাটি বিষয় এবং তাদের দল পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ত্রিপুরার মাটিতে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করে, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজীবের সেই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরার কোনায় কোনায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংগঠন তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে দল।

করোনা আক্রান্ত বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ভর্তি হাসপাতালে

উল্লেখ্য রাত পোহালেই ত্রিপুরা সফরে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনের কাজ সেখানে কতদূর এগিয়েছে মূলত তারা নিজের চোখে পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে যাচ্ছেন তিনি। অবশ্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফরে হাজির থাকছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

আগরতলা পুরভোটে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে অভিষেকের। সেই সঙ্গে এক কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজে সারবেন তিনি। অর্থাৎ বিজেপির কর্মসূচিকে অনুসরণ করেই সেই পথ ধরেই ত্রিপুরার মাটিতে বিপ্লব দেবকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ঘাসফুল শিবির।

২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরার মাটিতে সংগঠনকে তৈরি করতে হবে মজবুত করে। এই মন্ত্রকে মাথায় রেখেই আপাতত ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছেন ঘাসফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বরা। যার দায়িত্ব বর্তায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধেই।

সম্পর্কিত পোস্ট