নন্দীগ্রামের ‘পালস’ বুঝতে তৃণমূল পাঠাচ্ছে অভিজ্ঞ সুব্রতকে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনই হাত শক্ত করেছিল তাঁর। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লড়াইয়েও এ বার বাজি সেই নন্দীগ্রাম। নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক এখন বিজেপিতে। গেরুয়া দাপট সত্ত্বেও তাই সেখানে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এই লড়াইয়ে মমতার পথে কাঁটা হতে পারেন একসময় তাঁর সহকর্মী শুভেন্দু। তিনিও এই অন্দোলনের মুখ। সবচেয়ে বড় কথা পূর্ব মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র ও নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক। আর তাই এবার নন্দীগ্রামের মানুষের মন বুঝতে দলের বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে সেখানে পাঠাচ্ছে তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই নন্দীগ্রামে যাচ্ছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেখানে তিনদিন থাকবেন। ব্লকগুলিতে ঘুরে সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দিয়েই নন্দীগ্রামের জমি জরিপের কাজটি সারতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এব্যাপারে সুব্রত মুখোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের প্রত্যেক বুথে যাবেন তিনি। জনগণের মতামত শুনবেন। সেখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি যাচাইয়ের চেষ্টা করবেন। তারপর কলকাতায় ফিরে তিনি দলকে রিপোর্ট দেবেন।
তেখালির সভা থেকে গত ১৮ জানুয়ারি তৃণমূলনেত্রী ঘোষণা করেছিলেন, তিনি কলকাতার ভবানীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, দু’জায়গা থেকেই প্রার্থী হতে পারেন। পরের দিন দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপি-র সভা থেকে মমতাকে হাফ লাখ ভোটে হারানোর কথা বলেন শুভেন্দু।
এর পর মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, ”নন্দীগ্রামে কে দাঁড়াবে সেটা দল ঠিক করবে। ৩ টি অঞ্চলে তৃণমূল কিছু ভোট পেতে পারেন। বাকি ১৪ টা অঞ্চলে জিতবে বিজেপি। এখানে তৃণমূল নেত্রীকে আমি নিশ্চিত হারাব।”
আরও পড়ুনঃ শাহের সফরের আগেই ঘর গোছাতে কালীঘাটে বৈঠকে মমতা
নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়কের কথায়, ”এই মাটি আমি চিনি। ২০০৪ সালে আমি লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন আমাকে কেউ চিনতেন না। আমি হেরে গিয়েছিলাম। বাম প্রার্থীর সঙ্গে ব্যবধান ছিল মাত্র ৫ হাজার। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে জিতেছিলাম ৯০ হাজার ভোটে। ২০১৪ সালের লোকসভাতেও আমার জয়ের ব্যবধান ছিল ৮৫ হাজার। এর পর ২০১৬ বিধানসভা জিতেছিলাম ৮২ হাজারেরও বেশি ভোটে।”
২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে নন্দীগ্রাম থেকে জিতেছিলেন বর্তমান বিজেপি নেতা, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তারপর রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের মূল আন্দোলনস্থলের রাজনৈতিক চিত্রে বদল এসেছে অনেক।
তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘ দু দশকের সম্পর্কে ইতি টেনে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তারপর থেকেই বারবার তৃণমূলকে হারানোর হুঁশিয়ারি শোনা যাচ্ছে তাঁর গলায়। আর এতেই স্পষ্ট নন্দীগ্রামে এবার মমতা বনাম শুভেন্দুর লড়াই।
নন্দীগ্রামে ‘প্রস্টিজ ফাইট’ জিততে তাই বিশেষ প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের খবর, শুভেন্দুর শিবির বদলের পর নন্দীগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকার তৃণমূলের সংগঠনও খানিকটা দিশেহারা। সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকট।
ভোটের আগে সেসব জট খোলা না হলে তার প্রভাব পড়তেই পারে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। এই আশঙ্কা থেকেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নন্দীগ্রাম প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা করার।