বিলম্বিত বোধোদয় সাংসদ সুনীল মন্ডলের, ঘাসফুলের স্মরণ নিলেও সহায় হবেন কী মমতা?
নয়ন রায়
“আমরা সবাই পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে, অন্যের পাপ মাপি”- কবি নজরুল কয়েক দশক আগে লিখেছিলেন। তার বাস্তবসম্মত ভিত্তি তো ছিলই। এর সঙ্গে যদি রাজনৈতিক পদস্খলনের তুলনা করা হয় মনে হয় খুব ভুল হবে না। হঠাৎ করে ঝড় ও সন্ধ্যায় কোভিদ বাজারে এই লাইনটি মনে এল।
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সংসদে গিয়েছিলেন সুনীলল মন্ডল। শুভেন্দুর সঙ্গে আপনি প্রথম বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। নির্বাচন চলাকালীন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। বিজেপির হয়ে প্রচার করেছেন। কুকথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এখন বেসুরো কেনো?
এখন বলছেন শুভেন্দু অধিকারী তার ফোনই ধরে না। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? নাকি দলবদল করতে চাইছেন। যেহেতু আপনার বিরুদ্ধে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে পত্র পাঠিয়েছেন। তাই আপনি ভাবছেন এই বোধহয় আমার সাংসদ পদ গেল! তাই সুযোগ বুঝে কোপ।
আসলে ওই যে রাজনৈতিক পদস্খলন, মুকুলকে দেখেই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার ইচ্ছে হলো আপনার। আপনারা যখন চলে যান তখন মনে থাকেনা। এলোমেলো বাতাসের মতো উড়ে বেড়ান বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত। আর বাতাস যখন শান্ত হয় তখন মনে হয় জীবনে কী ভুল করেছি ! তাই তাই কবি নজরুল ইসলামের এই লাইনটা আপনার মতো নেতাদের ক্ষেত্রে সঠিক ব্যাখ্যা।
অফিস খুললেও নেই গণপরিবহন, সরকারের তীব্র সমালোচনায় চিকিৎসকমহল
সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কিভাবে নতুন করে তৃণমূলের চরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে আসতে পারা যায়। ২০১৯ এ মানুষ তো আপনাকে ভোট দিয়ে দিয়েছিল বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে। কৃষি অধ্যুষিত বর্ধমান। সেই যে দিল্লি গেলেন আর টিকি পাওয়া গেল না। যারা ভোট দিয়েছিলেন সেই জনগণ কখনো আপনার দেখা পায়নি।
শুধু সাংসদ হয়ে মাসের শেষে বেতন নিয়েছেন আর দিল্লিতে ভালো বাংলোতে থেকেছেন আরামে। আর লোকসভায় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। ২০১৯ থেকে টানা লোকসভার অধিবেশনে আপনার ভূমিকা খুব একটা উজ্জ্বল নয়। আপনাকে কখনই দেখা যায়নি ডিমনিটাইজেশন থেকে ৩৭০ এবং তিনতালাক, এনআরসি, সিএবি ইস্যুতে ক্ষুরধার বক্তৃতা দিতে।
শুভেন্দু আসল মধু পেলো। আপনিও মধু খেয়েছিলেন। তাই শুভেন্দুর দোহাই দিয়ে তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন কিসের তাগিদে? বয়স তো অনেক হলো। রাজনীতিবিদদের আবার বয়স হয় নাকি ! কথায় আছে, রাজনীতিতে পরিপক্কতা হওয়া যায় বয়স হলে।
আপনি তো সেই মানুষ যিনি গলসি বিধানসভা থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিট জিতে এসেছিলেন। তারপর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় আপনার বিরুদ্ধে দলত্যাগ আইন প্রয়োগ হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাকে নিয়েছিলেন।
২০১৯ এর লোকসভায় বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। যখন হেস্টিংস হাউসে বা দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবনে যেতেন তখন মনে হয়নি এসব? এখন কেন মনে হচ্ছে? তাই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান বলে নতুন করে মমতার কাছে ফিরতে চাইছেন। রাজনীতির জন্য কি নাকি নিজের তাগিদে? উত্তর তোলা থাকলো।