চোখের সামনে আমফানের রণংদেহি রূপ, সত্যিই কী জাতীয় বিপর্যয় নয়?
শুভজিৎ চক্রবর্তী
একদিকে করোনার করাল গ্রাস, অন্যদিকে আমফানের তাণ্ডব। সোশ্যাল ডিসটেন্স ভুলে মানুষ এখন ব্যাস্ত আমফান মোকাবিলায়। তাণ্ডব থেমে যাওয়ার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর কলম ধরলাম।
বুধবারের ঘটনা। প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে আম্ফানের তান্ডব চলছিল। সারা দিন কভারেজের পর আর ভিডিও পাঠানো সম্ভব হয়নি।
তবে মৃত্যুকে মাথায় নিয়ে যখন কভারেজ করছিলাম তখন হাড়ে হাড়ে এই দানবের তর্জন এবং গর্জন টের পাচ্ছিলাম।
চোখের সামনে একটা গাছ এবং পাঁচিল ভেঙে পড়তে দেখলাম। আম্ফানের রনংদেহী রূপ দেখে গা অসাড় হয়ে যাচ্ছিল৷
ঝড়ের দাপট একটা সময় এতটাই বাড়ল চারদিক থেকে শুধুমাত্র গাছ উপড়ে পড়তে শুরু করল। ঘুর্নিঝড় বনাম জীবন যুদ্ধে প্রকৃতির জয় অনেক আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সারাদিন ইলেকট্রিকের দেখা নেই। শুক্রবার
আদৌ দেখা মিলবে কিনা জানিনা। কবে নতুন করে তার জোড়া হবে জানা নেই। অবশ্য এতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের কোনও দোষ নেই।
যে হারে সারা দক্ষিণবঙ্গে গাছ উপড়েছে তাতে সময় তো লাগবেই। তবে বিপদ হাতে নিয়ে কাল অনেকেই বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন।
অনেকে রাত কাটিয়েছেন কোনও স্কুল বাড়িতে। সকালে উঠে দেখলাম কারোর বাড়ির চাল গিয়েছে। কারোর বাড়ির চালে গাছ ভেঙে পড়েছে। কোথাও রাস্তা সমেত গাছ পুকুরে চলে গিয়েছে।
তবে খুব অসুবিধা হয়েছে নদীর পাড়ে থাকা মানুষগুলোর। খবর পেলাম বাঁধ লাগোয়া কিছু গাছ উপড়ে গিয়েছে। দ্রুত তার মেরামতি না করলে আগামী দিনে বিপদ হতে পারে।
বিকেলে মাঠের দিকে দেখলাম নীচু এলাকার জমি যেখানে বাদাম চাষ হয়েছে সেখানে জল ঢুকেছে। পাম্পের মাধ্যমে জল বের করার কাজ চলছে।
লকডাউন এবং করোনা যখন মানুষকে কাবু করেছে তখন আম্ফান মধ্যবিত্তের ঘরে আরও বিপদ এনে দিয়েছে। আমি শুধুমাত্র আমার এলাকার কথা বললাম। দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলায় বিপুল পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে। যার ভরপাই করতে কয়েকমাস আরও লেগে যেতে পারে।
এরপরেও কেন্দ্রীয় সরকার এটা জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার জন্য কেন পিছপা হচ্ছে সেটাই মনে প্রশ্ন তৈরী করছে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল জগদিপ ধনকর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার জন্য আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি ঘোষণা করলেন মৃত ও আহতদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ।
কিন্তু এই ঘোষণা কবে বাস্তবায়িত হবে, কবে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া মানুষের জীবন একটু হলেও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে সেটাই অপেক্ষার….