নিচুতলার লড়াইয়ের ডাক শুনতে পাচ্ছেন সূর্যবাবু?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়াটা সিপিএম নেতাদের আরও ভিতু করে দেয়। আরও ভালো করে বললে, বাংলায় সিপিএমের এখনও যে বড় বড় নাম আছে তারাই মূলত ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি কর্মীরা।
তারা যেমন রেড ভলেন্টিয়ার করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তেমনই ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে একের পর এক বিধানসভা উপনির্বাচন এবং পরে পুরসভা দখলের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এই লড়াকু কর্মীবাহিনীরই প্রতিনিধি হলেন সুশান্ত ঘোষ।
আপনার এলাকায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে গেলে বা চায়ের দোকানের আড্ডায় কান পাতলেই একটা পরিচিত আক্ষেপ শুনতে পাবেন। আমাদের দলের জন্যই কৃষক আন্দোলন হল, কিন্তু তা থেকে আমরা কোনও ফায়দা তুলতে পারলাম না! যারা এই আন্দোলনের পিছনে ছিল না তারাই ফায়দা লুটছে। এরপরই ওই কর্মীরা আলিমুদ্দিনের একাংশের উদ্দেশ্যে চোখা চোখা বিশেষণ ব্যবহার করেন। সেসব কথা আর এখানে নাই বা লিখলাম!
দেশব্যাপী শোরগোল ফেলে দেওয়া কৃষক আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা্র ভূমিকায় ছিলেন সিপিএমের কৃষক সংগঠন সর্বভারতীয় কিষান সভার মাথা হান্নান মোল্লা। তিনি এই বাংলারই নেতা। কলকাতা লাগোয়া হাওড়ার উলুবেড়িয়ার দীর্ঘদিনের সাংসদ ছিলেন।
Susanta Ghosh : আলিমুদ্দিনকে মাত করে জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ
কিন্তু সূর্য -সুজনদের মাথা-মুন্ডুহীন পদক্ষেপ এবং ভয় পেয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে থাকা নীতির কারণেই সম্ভবত তাঁকে কাজে লাগানো হয়নি। এই নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে একাধিকবার হান্নান মোল্লা নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বলে শোনা যায়।
অথচ এই হান্নান মোল্লা মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে দিনের পর দিন পড়ে থেকে নিচু তলায় সিপিএমের সংগঠন তৈরি করছেন। তাঁকে বাংলায় ব্যবহারের কথা কেউ বলেনি তা নয়। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে সেই সব নেতারা সংখ্যালঘু হওয়ায় তাঁদের কথা বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।
পাশাপাশি নিচুতলার কর্মীদের একটা বড় অংশের ক্ষোভ তারা আক্রান্ত হলে নেতারা সঠিক সময়ে পাশে এসে দাঁড়ান না। এই কর্মীদের বক্তব্য, নেতারা পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা লড়াইয়ের কথা বললে তাঁরা উদ্দীপ্ত হয়। কিন্তু সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ীরা এক অজানা কারণে কর্মীদের পাশে গিয়ে বেশিরভাগ সময়ই দাঁড়াতে পারেন না।
অথচ এবারের সম্মেলন-পর্ব শুরু হওয়ার পর একাধিক জেলায় গিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র রক্ত গরম করা নানান বক্তব্য রেখেছেন। পাল্টা প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রতিবাদ আন্দোলনে কে নেতৃত্ব দেবেন, বা কোন উপায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে সেই নিয়ে কোনরকম পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।
যদিও সিপিএমের এই ব্যর্থতার জন্য সূর্যকান্ত মিশ্রকে একা দায়ি করা চলে না। এটা দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সামগ্রিক ব্যর্থতা। তারা বোধহয় ক্ষমতায় থাকার অভ্যাস থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেননি !
তবে শেষ পর্যন্ত যে একটি কমিউনিস্ট দলের ক্ষেত্রে কর্মীবাহিনীই আসল কথা বলে তা সুশান্ত ঘোষের জেলা সম্পাদক হওয়ার মধ্য দিয়ে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। জেলায় জেলায় সিপিএমের সাধারণ কর্মীরা যে পাল্টা প্রতিরোধে কথা বলছেন বা স্বপ্ন দেখছেন তার অন্যতম হোতা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ।
আসলে কমিউনিস্ট দল হলেও আলিমুদ্দিন ভেতরে ভেতরে সব সময় নিজের বাধ্যদের মর্যাদা দিয়ে এসেছে। তার ভিন্ন মতের কেউ যোগ্য হলেও তাকে বিশেষ পাত্তা দেওয়া হয় না। তাই মুখে প্রতিরোধের কথা বললেও সুশান্ত ঘোষ যখন তা কাজে করে দেখানোর কথা বলছেন তা মেনে নিতে পারেনি সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। সেই কারণেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্মেলনে সুশান্ত ঘোষকে তারা আটকানোর চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু নিচুতলার কর্মীরা যে নেতাদের আপোষের পথ আর মেনে নিতে রাজি নয় তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আলিমুদ্দিনে বসে সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীরা এই ডাক শুনতে পাচ্ছেন কি? চেয়ারম্যান মাও কিন্তু পরিষ্কার বলেছিলেন, দলীয় কার্যালয় লক্ষ্য করে কামান দাগো। সেই পর্ব শুরু হলে হোমরা-চোমরা নেতাদের পক্ষে তা প্রবল অস্বস্তির হবে।