Susanta Ghosh : আলিমুদ্দিনকে মাত করে জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ঘুরে দাঁড়াতে সিপিএম কি কট্টরপন্থাকে আশ্রয় করতে চাইছে? বৃহস্পতিবারের পর ফের সেই জল্পনা মাথাচাড়া দিতে পারে। কারণ সবাইকে হতবাক করে দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হলেন সুশান্ত ঘোষ। যিনি আলিমুদ্দিনের প্রিয় পাত্র নন।
সিপিএমের অন্দরে কট্টরপন্থী বলে পরিচিত সুশান্ত ঘোষ। তিনি বরাবরই পাল্টা মারের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এসেছেন। এই দাপুটে নেতা ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৬ টানা ২৯ বছর গড়বেতার বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করেনি দল। যদিও গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে নতুন তৈরি শিলবনী কেন্দ্রে সুশান্ত ঘোষকে প্রার্থী করা হয়। তবে এবার আর জয় হাসিল করতে পারেননি তিনি।
তবে রাজ্যের এই প্রাক্তন মন্ত্রী শুধু যে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন তাই নয়, তাকে দলের মধ্যেও ক্রমাগত লড়াই করে যেতে হয়েছে। সিপিএম রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে ২০১১ সালে জেলে যেতে হয়েছিল সুশান্ত ঘোষকে। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি জামিন পেলেও দীর্ঘদিন নিজের জেলায় ঢুকতে পারেননি।
অবশেষে ২০২০ এর শেষের দিকে সুশান্ত ঘোষ আবার পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রবেশ করেন। তাঁকে ঘিরে নিচুতলার সিপিএম কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও এই বিষয়টি খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি আলিমুদ্দিন।
Susanta Ghosh
এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সমালোচনা করে সিপিএমের অন্দরে আলোড়ন ফেলে দেন তিনি। এরপরই দল বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন মাসের জন্য পার্টি থেকে সাসপেন্ড হয়ে যান সুশান্ত।
তার মাত্র দেড় বছরের মধ্যে তিনি জেলা সম্পাদক পদে বসলেন! সুশান্ত ঘোষের এই অভূতপূর্বভাবে ঘুরে দাঁড়ানোয় চমকে গিয়েছে রাজ্য সিপিএমের তাবড় নেতারা। তাঁকে না পারছেন গিলতে, না পারছেন উগরাতে!
সূর্যকান্ত মিশ্র নিজে পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতা হলেও তাঁর সঙ্গে সুশান্ত ঘোষের কোনদিনই সম্ভব ছিল না। নরমপন্থী সূর্য এবার চেয়েছিলেন তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত তাপস সিনহা জেলা সম্পাদক হন। রাজ্য সম্পাদকের এই ইচ্ছায় মত দিয়েছিল আলিমুদ্দিনও। কিন্তু সুশান্ত ঘোষেরা মাঠে-ঘাটে রাজনীতি করেন।
Panchayet Election Westbengal : পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য-জুড়ে খেলা হবে দাবি তৃণমূল নেতার
এদিকে কর্মীরা আক্রান্ত হলে আলিমুদ্দিনের নেতারা যখন বিবৃতি দিয়ে দায় সারেন, তখন সুশান্ত সেই আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই চলেন। স্বাভাবিকভাবেই জেলা সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিরা উপর থেকে আলিমুদ্দিনের চাপিয়ে দেওয়া নাম মানতে চাননি।
এদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের দাপটে সিপিএমের কোণঠাসা অবস্থা। বিধানসভা নির্বাচনে প্রবলভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে লড়াকু কোনও মুখ চাইছিল সিপিএম কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত আলিমুদ্দিনের নির্দেশ এড়িয়ে ভোটাভুটির পথে হাঁটেন সকলে। আর সেখানেই বাজিমাত করেন সুশান্ত ঘোষ।
জেল খাটা তারপর রাজ্য নেতৃত্তের চক্ষুশূল হয়ে সাসপেন্ড হওয়ার মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ফিরে এসে জেলা সম্পাদক, সাম্প্রতিককালে বাংলায় সিপিএমে এরকম আর একটিও নজির দেখা যাবে না! বলা যেতে পারে সিপিএমের জেলা সম্মেলন পর্বে একাই মাত করে দিলেন সুশান্ত ঘোষ। তিনিই এবার ম্যান অফ দা ম্যাচ।
যার প্রভাব আগামী মাসে কলকাতায় আয়োজিত রাজ্য সম্মেলনে অবশ্যই পড়তে চলেছে। সম্ভবত রাজনৈতিক লাইনের প্রশ্নে সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন রাজ্য সম্মেলনে। এমনকি দু’একটি বড়নাম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! কারণ নিচুতলা চাইছে আর আপোষ নয়, এবার কমিউনিস্ট সুলভ লড়াইয়ের পথে হাঁটুক সিপিএম!