অপছন্দের সুশান্তর হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দল, ঢোক গিলতে বাধ্য হচ্ছে আলিমুদ্দিন
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ চলতি বছরের মার্চের শুরুর দিকের ঘটনা। ঘটনাস্থল সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্মেলন। তরুণ রায় আর জেলা সম্পাদক থাকছেন না তা আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। আলিমুদ্দিনের কর্তারা ঠিক করেছিলেন দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক তাপস সিনহাকে ওই পদে বসাবেন। যিনি আবার সূর্যকান্ত মিশ্রর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
সেই মতো সব কিছু এগোচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সব হিসেব উল্টে গেল। এর কারণ সুশান্ত ঘোষ। শোনা যায়, নতুন জেলা সম্পাদক বেছে নেওয়ার পর্ব শুরুর ঠিক আগে অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা পরিষ্কার জানান, আলিমুদ্দিনের ইয়েস ম্যান দিয়ে দলের হাল ফিরবে না। আদর্শ মেনে লড়াকু মনোভাব নিয়ে চলতে হবে, তবেই হবে। নাহলে তৃণমূল-বিজেপি যুগপত আক্রমণের মুখে মেদিনীপুর থেকে দলটাই উঠে যাবে।
শেষ পর্যন্ত জেলা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন সুশান্ত ঘোষ। গভীর রাত পর্যন্ত চলা ভোটাভুটিতে হারিয়ে দেন আলিমুদ্দিনের প্রার্থী তাপস সিনহাকে। এরপরই একদা বাম ঘাঁটি বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কার্যত ভেল্কি দেখাতে শুরু করেছেন তিনি।
কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচন হবে? দলে চ্যালেঞ্জের মুখে গান্ধি পরিবারের কর্তৃত্ব
তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর কঙ্কাল কাণ্ডে ফেঁসে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন সুশান্ত ঘোষ। পরে জামিন পেলেও আদালতের নিষেধ থাকায় জেলায় ঢুকতে পারেননি। এর মাঝের সময়ে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব ও কর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোয় সিপিএমের নিচুতলা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। তৃণমূল বিরোধী মঞ্চ হিসেবে দলে দলে বিজেপিতে যোগ দেয়।
কিন্তু জেলা সম্পাদক হওয়ার পরই কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন সুশান্ত ঘোষ। মে সব সিপিএম নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, আইনজীবীর ব্যবস্থা করে তাঁদের অনেকের জামিন করে দিয়েছেন। মেদিনীপুর শহরে বসে না থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেরিয়ে সংগঠনকে মজবুত করে তোলায় মন দিয়েছেন।
আদর্শের প্রশ্নে কট্টর লাইন নিয়ে চলা সুশান্ত ঘোষ কখনই সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের গুড বুকে ছিলেন না। বিশেষ করে সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সর্বজনবিদিত। কিন্তু আলিমুদ্দিনও বুঝেছে ইয়েস ম্যান না হলেও ‘খেল’ দেখাচ্ছেন রাজ্যের এই প্রাক্তন মন্ত্রী।
চলতি মাসেই দুর্নীতি ইস্যুতে মেদিনীপুরে জেলাশাসকের কার্যালয় অভিযানে বিপুল জমায়েত ও লড়াকু মনোভাব দেখিয়ে খোদ মহম্মদ সেলিমের উপস্থিতে নিজের নম্বর অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছেন সুশান্ত। বঙ্গ সিপিএমে ইতিমধ্যেই আওয়াজ উঠেছে, সুশান্তর পথেই চলতে হবে। এতে করে শমীক লাহিড়ী, দেবব্রত ঘোষের মতো যে জেলা সম্পাদকরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য তাঁদের উপর চাপ বেড়েছে।