কঙ্কাল কাণ্ডের ‘অপ’প্রচার‌ও দমাতে পারেনি তাঁকে, জঙ্গলমহলে ঘুরে দাঁড়াতে সুশান্তেই ভরসা সিপিএমের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সময়টা ২০০১ সাল। সেবার বিধানসভা ভোটে জিতে বামেরা আদৌ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছিল। বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের পর এক কৌশল এবং চাপে বেশ কিছু জায়গায় সিপিএমের দুর্ভেদ্য সংগঠনে ফাটল দেখা দিয়েছিল।

সেই সময় ভোটের আগে প্রচারে জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পর রাজ্যজুড়ে যে সিপিএম নেতার চাহিদা ছিল তুঙ্গে তিনি একজন সামান্য প্রতিমন্ত্রী। সংগঠন সর্বস্ব কমিউনিস্ট পার্টিতে কুলীন কেউ নন। সামান্য জেলার নেতা। তবু পশ্চিম মেদিনীপুরের গরবেতা, কেশপুরে তাঁর নেতৃত্বে পাল্টা লড়াইয়ের কথা শুনতে, সেই রণকৌশল জানতেই উৎসুক হয়ে উঠেছিল সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা।

সেই নেতা হলেন সুশান্ত ঘোষ। ওই বছর প্রচারের জন্য তাঁকে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পশ্চিম থেকে পূর্ব সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে হয়। সময় বদলেছে। দুই দশক পর রাজ্যের জঙ্গলমহলে সিপিএমকে ফের তুলে ধরার দায়িত্ব এখন সেই সুশান্তর কাঁধে।

২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটলেও গরবেতা থেকে জিতেছিলেন সুশান্ত ঘোষ। তার কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর নাম জড়িয়ে পড়ে কঙ্কাল কাণ্ডে। ফলে জেলেও যেতে হয় এই দাপুটে সিপিএম নেতাকে। সেই সময় সুশান্ত ঘোষের পাশাপাশি সিপিএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সব কিছু সাজানো ঘটনা।

এই নিয়ে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পর আদালত জামিন দেয় সুশান্ত ঘোষকে। প্রথমে নিজের জেলায় ঢুকতে না পারলেও পরে আদালত সেই শর্ত শিথিল করে। আর তারপরই নিজের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে ফিরে দলীয় কর্মী সমর্থকদের মনোবল ফেরানোর কাজ শুরু করে দেন তিনি।

রাজ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, যুবর সর্বভারতীয় নেতৃত্বে মীনাক্ষীকে পাঠাচ্ছে না সিপিএম

পোড় খাওয়া নেতা সুশান্ত ঘোষ বুঝেছিলেন সবার আগে কর্মীদের মনোবল ফেরাতে হবে। ক্রমাগত মার খেতে খেতে তাদের মনোবল একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। যদিও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি কেন্দ্র থেকে লড়াই করে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি সুশান্ত।

জেলার অন্যান্য কেন্দ্রের থেকে তিনি বাম প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোট পেলেও সেই তৃতীয় হন। তবে হাল ছাড়েননি। দলের সম্মেলনে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন সুশান্ত ঘোষ।

সূত্রের খবর জেলা সম্পাদক হওয়ার পরই সুশান্ত ঘোষ দলের অফিসে বসে না থেকে গ্রামে গ্রামে যেতে শুরু করেছেন। পুরনো সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের মনোবল ফেরানোর কাজ করছেন। বলছেন আগে পাল্টা লড়াই নয়, সবাই মিলে জোট বাঁধো।

লক্ষ্য হল বসে যাওয়া কর্মীদের আবার সক্রিয় করে তোলা। সবাইকে একজোট করলে সহজেই যে আক্রমণের মোকাবিলা করা যাবে সেটা পরিষ্কার বুঝেছেন রাজ্যের এই প্রাক্তন মন্ত্রী। এমনকি গত এক দশকে যে সমস্ত এলাকায় সিপিএমের ঝান্ডা ধরতে সাহস পায়নি কেউ, সেখানে গিয়েও বিশাল বিশাল মিছিল করেছেন।

তবে সুশান্ত ঘোষের দায়িত্ব অনেক বেশি। তিনি খাতায়-কলমে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক হলেও শোনা যাচ্ছে মাওবাদী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম জেলাতেও দলের হাল ফেরাতে সুশান্ত ঘোষের উপরেই ভরসা রাখছেন মহম্মদ সেলিমরা। কারণ জঙ্গলমহলের এই সমস্ত এলাকার সংগঠন নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন সুশান্ত।

তাই তাঁর অভিভাবকত্বেই ঝাড়গ্রামের পাশাপাশি বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকাতেও দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর রণকৌশল নিয়েছে সিপিএম। তাদের লক্ষ্যই হল প্রথমে কর্মীবাহিনীকে সক্রিয় করো। তারপর তাদের একজোট করে সাধারণ মানুষের মনে এই বিশ্বাস তৈরি করা বামেরা আগের মতোই পাশে আছে, ময়দানে আছে।

আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন অ্যাসিড টেস্ট হতে চলেছে সুশান্ত ঘোষের। তবে দলের সব গোষ্ঠীর নেতারা যেভাবে তাঁর পাশে আছেন তাতে ভালো কিছুই আশা করছেন প্রবীণ বাম নেতারা।

সম্পর্কিত পোস্ট