মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃমন্ত্রিত্বে থেকে অরাজনৈতিক সভা কেন? এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। তাই শেষ অবধি মন্ত্রীপদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে চিঠি লেখেন তিনি। শুভেন্দুর ইস্তফা গ্রহণ করেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার জন্য পুলিশ কর্তাকে চিঠি লেখেন তিনি।
মন্ত্রীপদ থেকে ইস্তফা দিলেও এই মুহুর্তে বিধায়ক পদে রয়েছেন তিনি। তা স্পষ্ট করেছেন। চারটি মন্ত্রক দিয়ে মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সূত্রের খবর, শনিবার দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন তিনি। সেখানেই বড়সড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী দলে আসলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বুধবার হুগলী রিভার ব্রিজ কমিশন থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে ছেড়ে দিয়েছিলেন পাইলট কার। শুক্রবার সকালে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর এর পরেই কার্যত শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের সম্ভাবনায় শিলমোহর পড়ে গেল।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীর এহেন পদক্ষেপ তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা তা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট। তবে তিনি কবে দল ত্যাগ করবেন বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করবেন তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত বিগত বেশ কিছু মাস যাবত শুভেন্দু অধিকারী বিনা দলীয় ব্যানারে একের পর এক সভা করে যাচ্ছিলেন। যা নিয়ে ক্রমশই উৎকণ্ঠা বাড়ছিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে দাদার অনুগামীরা তার পোস্টার ফেলছিলেন।
আরও পড়ুনঃ একাধিক পন্থায় দিল্লি বর্ডারে কৃষক আন্দোলনকে প্রতিহতের চেষ্টা
সম্প্রতি নন্দীগ্রামে দিবসের দিন মঞ্চ থেকে নাম না করে দলনেত্রী এবং দলেরই বেশ কিছু নেতাকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীকে প্রকাশ্য জনসভায় একহাত নেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে শুভেন্দু বনাম তৃণমূল তরজা আরো সপ্তমে ওঠে।
আর বুধবার হগলী রিভার ব্রিজ কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে শুভেন্দুর ইস্তফা এবং নতুন করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনায় এই বিরোধ প্রকট হয়। আর সেই কারণেই তিনি মন্ত্রীপদ থেকে ইস্তফা দিলেন।
শুভেন্দু অধিকারীর এক অনুগামী কথায়, “কয়েকদিন আগেই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাদা কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন দম থাকলে দল ছেড়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতীক ছেড়ে, পদ ছেড়ে কথা বলুন। দাদা পথ ছেড়ে দিয়েছেন।এবার বাকি কথা হবে।”
এর আগেও সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের ভুমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। এর আগে শুভেন্দুকে দলে ফেরাতে সৌগত রায়ের নেতৃত্বে দু দফায় বৈঠক হয়। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। শুভেন্দু এখনও পার্টির সদস্য। এটা ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত । এখনও কথা বলতে রাজি রয়েছি। শুভেন্দুর মন্ত্রীপদ থেকে ইস্তফার পর জানালেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
ইতিমধ্যেই নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। সম্ভবত আজই বিজেপিতে যোগদান করবেন বলে জানা গিয়েছে। জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতে আজ বিকেল তিনটের সময় সাংবাদিক সম্মেলনে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করবেন মিহির গোস্বামী। অন্তত এমনটাই জানা যাচ্ছে সূত্র মারফত।
শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফা এবং মিহির গোস্বামীর বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত তৃণমূলের তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর মুহূর্তে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীর এই সিদ্ধান্তকে শাসকদলের পক্ষে অশনি সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার টুইটারে জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দপ্তর থেকে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কথায় সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
নিঃসন্দেহে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড়সড় ফাটল ধরল ঘাসফুল শিবিরে। তবে শুভেন্দু অধিকারী একই নাকি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বেশ কিছু বিধায়ক নেতা-কর্মী-সমর্থক যোগ দিচ্ছেন গেরুয়া শিবিরে ? তা এখনো স্পষ্ট নয়। কোন দিকে যাবে রাজনৈতিক মোড় তা ক্রমশ প্রকাশ্য।