ফুলবদলে ‘সাধু’ সাজলেন শুভেন্দু! ১০ বছরে তৃণমূলের ব্যর্থতায় দায়ী আপনিও-কটাক্ষ রাজনৈতিক মহলের

দ্য কোয়ারি ওয়েবেডস্কঃ দল ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আর সেটা তৃণমূলের শেষের শুরু বলে কটাক্ষ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আরও বললেন, ভোট আসতে আসতে শুধু দিদি থাকবেন। বিধানসভা ভোটে দু’শোর বেশি আসনে বিজেপি জিতবে বলে  দাবি করলেন অমিত শাহ।

অমিত শাহের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর যোগদানের পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুভেন্দুকে একহাত নিতে ছাড়ছেন না কেউই। শুভেন্দুর এই ভোলবদল সকলের কাছেই বিস্ময় তৈরী করেছে।

অমিত শাহের সভায় যোগদানের আগে শনিবার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের নাম করেই তাঁদের উদ্দেশে একটি আবেগঘন চিঠি দিয়েছেন শুভেন্দু। যেখানে স্পষ্ট তিনি লিখেছেন, পথ হয়তো বদলে যাচ্ছে। কিন্তু স্বপ্নের পশ্চিমবঙ্গ তৈরির লক্ষ্য থেকে পিছু তিনি হটছেন না।

চিঠিতে শুভেন্দু লেখেন, রাজ্য এখন কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। গত তিন দশকে রাজ্যের মানুষ তাঁকে কাছে টেনেছে ও দল যেভাবে কাজের সুযোগ দিয়েছে, তার জন্য সেই চিঠিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।  তবে যে স্বপ্ন তিনি বাংলার জন্য দেখেছিলেন, তা পুরো হয়নি।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/tolabaaj-vaipo-hotao-after-joinning-bjp-suvendu-raise-slogan-against-abhishek-banerjee/

তিনি লিখেছেন, বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলেও সাধারণ মানুষ যেই তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছেন। চিঠিতে এমনটাও লিখেছেন শুভেন্দু। শুধু তাই নয়, কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

এরপরই কাযর্ত বোমা ফাটিয়ে তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ বা তৃণমূল কংগ্রেস কারোর একার সম্পত্তি নয়। কিন্তু কেউ কেউ যখন দলকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করে তখন সেটা কষ্টদায়ক। যাদের কাঁধের উপর ভর করে এই দল তৈরি হয়েছিল, তাঁদেরকেই এখন পিছনের সারিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

তাঁর কথায়, অসম্মান করা হচ্ছে। তাঁদের জায়গায় এখন ভাড়া করা লোকদের নিয়ে আসা হচ্ছে যারা তৃণমূল স্তরের রাজনীতি বোঝেন না। এই সকল কারণের কথা উল্লেখ করেই তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

এখান থেকে উঠছে প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, যদি শুভেন্দু অধিকারি আগেই বুঝেছিলেন ১০ বছরে উন্নয়ন হয়নি, তাহলে কেন তিনি আগে থেকেই এর বিরোধিতা করেনি ? কেন ভোটের মুখে এসে শুভেন্দু অধিকারী এসব কথা বলছেন?

আজ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসে এখন ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রাধান্য পায়। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যায়, তাহলে এতদিন অধিকারী পরিবার কী করছিল? শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারি একের পর এক পদ তাদের দখলে ছিল। এক কথায় বলতে গেলে গোটা মেদিনীপুরটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধিকারী পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তখন প্রতিবাদ তিনি করেননি কেন?

মেদিনীপুর কলেজ মাঠে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজকে রাহুল সিনহা বলেই দিলেন ২০১৫ সাল থেকে শুভেন্দু যোগাযোগ রাখছে তাদের সঙ্গে। তাহলে তখন শুভেন্দু কেন চলে যাননি? ঠিক ভোটের মুখে এসে জনমানসে বিভ্রান্তি তৈরি করার কারণটা কি?

তিনি বলছেন পদের লোভে রাজনীতি করেন না। যদি সেটাই হয়ে থাকে তাহলে বিনা দলীয় ব্যানারে মানুষের সেবা করতে পারতেন। তাতে তো কোন বাধা ছিল না।

তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শুভেন্দু অধিকারী কে যে পদ, যে সম্মান দেওয়া হয়েছিল তার বেশি আর কোন কিছু দেওয়া সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, তিনি যে কথাগুলো বলেছেন সেখানে তার ভূমিকাও কিন্তু কম কিছু নয়। যদি দশ বছরের উন্নয়ন তৃণমূল কিছু না করে থাকে, তার দায় বর্তায় শুভেন্দু অধিকারীর কাঁধেও। কারণ তিনি কিন্তু মন্ত্রী ছিলেন।

তাহলে বলতে হয় মন্ত্রী হিসেবে তিনি ব্যর্থ। শুধুমাত্র তাই নয় দুর্গাপুর ব্যারেজের গেট যখন ভাঙলো চলতি বছরেই তখন সেখানে একদিনের জন্য বা একবারের জন্য সেচমন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি শুভেন্দু অধিকারীকে।

অথচ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেচমন্ত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন ১১টি লকগেট নতুন করে তৈরি করতে হবে। তাহলে আড়াই বছরে সেটা কেন তৈরি করল না ? এর জবাব কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীকেই দিতে হবে।
বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় ক্ষোভ উগরে বলেছেন একাধারে মন্ত্রী, কোর কমিটির সদস্য, সংগঠনের গুরুদায়িত্ব সবকিছুই তিনি পেয়েছিলেন। এরপর তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী অথবা মুখ্যমন্ত্রীর পদ যদি দাবী করে থাকেন, সেটা কখনোই দলের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/mirjafor-suvendu-adhikari-tmc-shame-on-shuvedu-adhikari/

কারণ হিসাবে তিনি বলেন, প্রশ্ন করছেন দলের অন্যান্য কর্মীরা। একটি পরিবার যদি সবকিছু পেয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বাকিরা কী করবে? আজ না হলেও কাল অধিকারী পরিবার অর্থাৎ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারিও কী  তাহলে বিজেপির পথে পা বাড়িয়েছেন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে আমজনতার মুখো মুখে।

যদিও এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে তৃণমূলের অনেকেই একপ্রকার মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন আজ না হলেও কাল অধিকারী ফ্যামিলি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাবেন বলে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবার ভেবে দেখার সময় এসেছে। এতদিন যে পরিবারটির জন্য সর্বোপরি যার জন্য অন্যান্য অনেক দক্ষ নেতাদের পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সেই তারাই আজ মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উঠছে প্রশান্ত কিশোর আসার পরেই। তার আগে পর্যন্ত যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরুদ্ধে যদি কোনো ক্ষোভ থেকেই থাকতো তাহলে সেটা কেন প্রকাশ করেননি শুভেন্দু? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

তাহলে কি ধরে নিতেই হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোর দুজনে মিলে ধরে রাখার চেষ্টা সমস্ত কাটমানি বন্ধ করে দেওয়ার ফলেই ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছেন একাধিক বর্ষীয়ান নেতৃত্ব। যার ফলস্বরুপ হালে পানি না পেয়ে তারা নাম লেখাচ্ছেন গেরুয়া শিবিরে

আরো একাংশ বলছেন শুভেন্দু অধিকারী যদি মনে করে থাকেন তিনি আগামীকাল থেকে বিজেপির হয়ে প্রচার করবেন জনগণ তার ডাকে সাড়া দেবে তাহলে তিনি ভুল করছেন। তার কারণ এই ১০ বছর ওই দলটিতে সমান ভূমিকা পালন করেছেন তিনিও। আজ তিনি যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছেন দলে থেকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে সরব হতে তাকে কোনদিনও দেখা যায়নি।

প্রশ্ন উঠছে তার সততা নিয়েও।  অমিত শাহ স্পষ্ট করে বলে গেলেন, বাংলার মাটিতে বাংলার ভূমিপুত্র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে লড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তাহলে কি ধরে নিতেই হয় সেই তালিকায় নাম রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর?

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/shuvendu-adhikari-joins-bjp-at-medinipur-amit-shah-public-meeting/

আর যদি তাই হয়ে থাকে ২০২১ এর নির্বাচনে মানুষ বুঝিয়ে দেবে বাংলায় শুভেন্দু অধিকারী ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

আজ তিনি যে নেত্রীর বিরুদ্ধে আঙুল তুললেন একদিন তিনি এই নেত্রীকে দেবী সমান পুজো করেছিলেন। তৃণমূলের একাংশের কটাক্ষ দলে থেকে টাকা লুঠ করতে পারছেনা শুভেন্দু। তাই জন্যই হয়তো গোঁসা করে দলত্যাগ করলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে কাকলি ঘোষ দস্তিদার স্পষ্টভাবে বলেছেন হয়তো টেবিলের তলা দিয়ে দেনা-পাওনার হিসাব টা ভালোই হয়েছে। নেতা থেকে জননেতা হয়ে ওঠার শুভেন্দু অধিকারীর দক্ষতা. রাজনৈতিক বুদ্ধি, বিশ্লেষণ নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

কিন্তু প্রশ্ন উঠল তার নীতি-আদর্শ-চিন্তাভাবনা নিয়ে। যা যুবসমাজ কখনোই গ্রহণ করবেনা । একুশের নির্বাচনে লড়াই হবে টানটান। জবাব দেবেন আমজনতা।

সম্পর্কিত পোস্ট