ঐতিহাসিক ভয়াল মুহূর্ত, আফগান সরকারের পতন, ক্ষমতায় তালিবান
||প্রসেনজিৎ চৌধুরী ||
আশঙ্কা সত্যি হলো। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফের তালিবান। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত যে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল জঙ্গি সরকার, তাদেরই বর্তমান উত্তরসূরীদের প্রবল হামলায় আফগানিস্তানের সরকার পতন হয়ে গেল।
ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে তিনটের কিছু পরে অসমর্থিত সূত্রে কাবুল থেকে একের পর এক টুইট ঢেউ আসতে থাকে। এতে স্পষ্ট ছবি দেখানো হয়, প্রবল গোলাগুলি চালিয়ে কাবুলকে চারদিক থেকে ঘিরে নিয়ে তালিবান জঙ্গিরা আতমকা থমকে যায়।
প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে তখনও প্রেসিডেন্ট গার্ডের কালাশনিকভ তৈরি শত্রু তালিবানকে দোজখের দরজায় পৌঁছে দিতে। তবে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নির্দেশ আসতেই তারা বন্দুক নামায়। ইতিমধ্যে আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি জানিয়ে দেন সরকার ও তালিবানের মধ্যে বোঝাপড়া হবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে।
পরিস্থিতি তৈরি ছিল। কাতার থেকে তালিবান প্রতিনিধিরা বিশেষ বিমানে আগেই আফগানিস্তান ঢোকে। বিরাট কনভয় নিয়ে তালিবান ডেপুটি প্রধান আমির মোল্লা আবদুল গনি বরাদর কাবুলে পৌঁছেই প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে সাক্ষাত করে। এর পরেই অসমর্থিত সূত্র জানায় ঘানি পদত্যাগ করলেন।
অপসারিত প্রেসিডেন্ট ঘানি এখন তালিবান ঘেরাটোপে। প্রেসিডেন্ট হাউসে তালিবান ডেপুটি কমান্ডারকে স্বাগত জানান ঘানি। আফগানিস্তান ফের একবার জঙ্গি সরকারের অধীন।
কাবুল তালিবান দখলে। কাবুল এর আগেও তালিবান কব্জায় ছিল। ১৯৯৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ নাজিবুল্লাহকে খুন করে তালিবান সরকার তৈরি হয়েছিল। নাজিবুল্লাহ ছিলেন কমিউনিস্ট মনোভাবের ও সোভিয়েত অনুরাগী। নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েতের ভাঙন ধরতেই মার্কিন মদতে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি থেকে তালিবান জন্ম নেয়।
মার্কিন মদকেই তালিবান প্রথমবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসেছিল। পরে আমেরিকার ৯/১১ নাশকতার জেরে মার্কিন সরকার তালিবান উচ্ছেদে নামে। আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা ঢোকে। ২০০১ সালেই তালিবান সরকারকে তাড়ায় মার্কিন সরকার।এর আগে পর্যন্ত ভয়াবহ রক্তাক্ত আফগানিস্তান দেখেছে বিশ্ব।
২০০১ থেকে ২০২১ টানা কুড়ি বছর মার্কিন সেনার উপস্থিতিতে আফগানিস্তান একরকম ছিল। রবিবার, ১৫ আগস্ট এক অন্য পরিস্থিতি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মাঝে ফের এই দেশে তৈরি হল জঙ্গিদের সরকার।
কী হবে আফগানিস্তানে? এই প্রশ্নের উত্তরে একটা ধাঁধা আছে, এবার কার দখলে যাবে আফগানিস্তান? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের আফগান মিশন বন্ধ করার পরই কি রুশ সরকার পদক্ষেপ নেবে? ক্রেমলিন নীরব। যদিও এত ঘটনার পরে কাবুলের রুশ দূতাবাস বন্ধ করা হয়নি।
আফগানিস্তানের মাটিতে আলেকজান্ডার থেকে মোগল, পাঠান, পারস্যের কোনও শাসকের ক্ষমতা বেশিদিন চলেনি। সোভিয়েত এসে বিদায় নিয়েছে। মার্কিন সরকার বিদায় নিল।
মাঝে পড়ে থাকলেন অসহায় আফগানিরা। যাদের শরিয়া আইনে মাথা কাটতে একটুও কসুর করছেনা তালিবান। রাতের কাবুল নাকি রহস্যময়। বিরাট আফগানি রুটির গরম ধোঁয়া মাখা সেই রহস্যময়তা ভেঙে টুকরো হল আবার। আফগানিস্তানে এখন মাথা কাটার সরকার। তালিবান জঙ্গিদের সরকার।