শিবসেনার মতো তামিলনাড়ুর দলেও গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে, ভাঙনের সম্ভাবনা প্রবল

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দেশের আঞ্চলিক দলগুলিতে যেন একসঙ্গে গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছে। ক্ষমতার রাস কার হাতে থাকবে তা নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি শিবসেনায়। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা দলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে হতে পারে বালাসাহেব পুত্র উদ্ধব ঠাকরেকে।

এই সময়েই দক্ষিণ ভারতের আরেক আঞ্চলিক দলে গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন‌ই যে তামিলনাড়ুর প্রধান বিরোধীদল এআইএডিএমকে আড়াআড়ি ভেঙে যেতে পারে। জয়রাম জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকেই নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে এআইএডিএমকে।

২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তারা ভালোমতো ধাক্কা খেয়ে ক্ষমতা হারায়। বিধায়ক সংখ্যাও অনেকটা কমে গিয়েছে। এর পরবর্তী পর্যায়ে স্থানীয় স্তরের নির্বাচনেও ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণ নেই সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলটির। নিজেদের শক্ত ঘাঁটিগুলোতেও তারা ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছে।

আসলে জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকেই কে দলের মাথায় বসবে তা নিয়ে বিবাদে জর্জরিত এআইএডিএমকে। অসুস্থতা বা কারাবাসের জন্য জয়ললিতা জীবিত অবস্থাতেই নানান সময়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে ছিলেন ও পন্নিরসেলভাম এবং এডাপ্পাডি কে পালানিস্বামীকে। তাঁর মৃত্যুর পর এই দুজনেই দলের নেতৃত্ব দখল করতে উঠেপড়ে লাগেন। সেই নিয়ে তুঙ্গে ওঠে এআইএডিএমকে’র বিবাদ। শেষ পর্যন্ত দলের প্রবীণ নেতাদের হস্তক্ষেপে যৌথ নেতৃত্তের পথে হাঁটে এআইএডিএমকে।

জয়রাম জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকে এতদিন পর্যন্ত এআইএডিএমকের যৌথ কনভেনার পদে থেকে দল চালিয়ে আসছিলেন পন্নিরসেলভাম ও পালানিস্বামী। কিন্তু প্রতি পদে পদে তাঁদের মতভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ফলে ফাঁপড়ে পড়ছেন দলের কর্মীরা। কী করবেন সেটাই তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। কোনটা দলের অবস্থান সেটা বুঝে ওটাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। ফলে নিচুতলায় ক্রমশ ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

সেমিফাইনালে জিততে মরিয়া বিজেপি, উপনির্বাচনে দফায় দফায় উত্তপ্ত হল ত্রিপুরা

এদিকে পালানিস্বামীর কাছে কর্মীরা সহজে পৌঁছতে পারায় ধীরে ধীরে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। বিপদ বুঝতে পেরে পন্নিরসেলভাম দল থেকে বহিষ্কৃত শশীকলাকে ফিরিয়ে এনে নিজের পাল্লা ভারী করার ছক কষেন বলে অভিযোগ। এই বিষয়টি তাঁকে কর্মীদের কাছে কার্যত খলনায়ক করে তোলে। তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠরা ছাড়া এআইএডিএমকের বাকি কর্মীরা পন্নিরসেলভামের বিরুদ্ধে চলে যান।

এই অবস্থায় চেন্নাই হাইকোর্টের নির্দেশে এআইএডিএমকে নেতৃত্ব জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠক ডাকতে বাধ্য হয়। সেই বৈঠকে তামিলনাড়ুর নানা প্রান্ত থেকে ২,১৯০ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। সেখানে দলের কর্মীরা যৌথ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হয়ে দাবি করেন আগের মতো একক নেতৃত্তের প্রথা ফিরিয়ে আনতে হবে।

পালানিস্বামী শিবির যেন এর অপেক্ষাতেই ছিল। বেশিরভাগ কর্মীর সমর্থন নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এডাপ্পাডি কে পালানিস্বামীকে এআইএডিএমকে’র সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপরই ওয়াক আউট করে মঞ্চ থেকে নেমে চলে যান ও পন্নিরসেলভাম। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর দিকে দলের কর্মীরা জলের বোতল ছুঁড়ে মারে!

বাইরে বেরিয়ে পন্নিরসেলভাম দাবি করেন টাকা ছড়িয়ে দলের নেতাদের হাত করেছেন পালানিস্বামী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক পদে এডাপ্পাডি কে পালানিস্বামীকে মেনে নেবেন না। রাজনৈতিক মহলের অনুমান খুব সম্ভবত এআইএডিএমকে ভাঙতে চলেছে। তবে বেশিরভাগ নেতাকর্মী পালানিস্বামীর দিকেই হয়তো থাকবেন। সেক্ষেত্রে ও পন্নিরসেলভাম কী করেন সেটাই এখন দেখার।

সম্পর্কিত পোস্ট