লক্ষ্য সংসার, অটো চালিয়েই নারী দিবসের অনুপ্রেরণা পুঁটিরাণি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যার উদাহরণ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গেঁওখালির পুঁটিরাণি দাস।
বাড়ির হেঁশেল সামলানোর পাশাপাশি পুঁটিরাণি আজ পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে অটোর হ্যান্ডেল। সকাল থেকে সন্ধ্যে বাড়ির কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই অর্থ উপার্জনের জন্য গ্রামের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পুঁটিরাণি।
আর সেই পুঁটিরাণি আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের জেলা তথা রাজ্যের অন্যতম নজির।
ছোট থেকে পুঁটিরাণির জীবনে লড়াই ছিল মূল মন্ত্র। ছোটবেলায় বাপের বাড়িতে অভাবের সংসারে বাবার পাশাপাশি মাকেও অর্থ উপার্জন করতে দেখেছে সে।
ইঁটভাটার শ্রমিক থেকে শুরু করে নানান ধরনের কাজ মাকে করতে দেখে অনুপ্রেরণা পায় সে নিজেও। তাই আজ শ্বশুরবাড়ির সংসারে পা রেখে পুঁটিরাণি নিজে সংসারের অভাবের কথা বুঝতে পেরে অর্থ উপার্জনের জন্য অটোকে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
গেঁওখালি থেকে কুকড়াহাটি গ্রামীণ সড়ক আর পাঁচটা অটোর সঙ্গে দেখা যাবে পুঁটিরাণির অটোও। গত দুই থেকে তিন বছর ধরে স্বামীকে সংসার চালানোর সহযোগিতা করার জন্য অটোকে অন্যতম মাধ্যম করে নিয়েছে সে।
সকাল হলেই স্বামীর পাশাপাশি পুঁটিরাণিও অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়েন অটো নিয়ে। প্রথম প্রথম বেশ কয়েকদিন এভাবে একজন মহিলাকে অটো চালাতে দেখে স্থানীয় অনেকেই ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু তা থেকেও সরে দাঁড়ায়নি পুঁটিরাণি। সে আরও শক্ত করে নিজের অটো চালানোর হাত।
ক্রমেই তার জীবন সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করে যাত্রীদের কাছে আজ পুঁটিরাণি হয়ে উঠেছে নিজের মেয়ের মতো।
আরও পড়ুনঃ নারী তুমি অনন্যা, কলমে অপরাজিতা ঘোষ
দোচালা টালির বাড়িতে স্বামী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও বৃদ্ধ শ্বশুরকে নিয়ে পুঁটিরাণির সংসার। ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুলে অল্পবিস্তর পড়াশোনার পর বিয়ের বয়স হওয়াতেই বাদুড় গ্রামের অজয় দাসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় পুঁটিরাণি।
এরপর শ্বশুরবাড়ির আর্থিক অনটনের কথা উপলব্ধি করে নিজেই স্বামীর সঙ্গে পরিবার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
পুঁটিরাণি কথায়, “আমি মনে করি ন্যায় এবং সত্যের পথে অর্থ উপার্জনের জন্য কোন জীবিকা ছোট নয়। তা নারী হোক বা পুরুষের ক্ষেত্রে। তাই আমি পরিবারের অভাবের কথা বুঝতে পেরে অটোকে নিজের জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছি। প্রথমে অনেকেই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন ঠিকই। কিন্তু এখন সকলে নিজের আপন মানুষের মতো হয়ে গেছে।”
পুঁটিরাণির অটোর যাত্রীরা বলেন, “আমাদের প্রথমে পুঁটিরাণির অটোতে উঠতে লজ্জা হত ঠিকই। কিন্তু পুঁটিরাণি এখন আমাদের নিজের মেয়ের মতো হয়ে গেছে। তাই মেয়ের অটোতে উঠতে লজ্জা কিসের?”
সবমিলিয়ে বলা চলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে অন্যতম জয়ী নারী গেঁওখালির পুঁটিরাণি দাস।