লক্ষ্য বাংলার মসনদ তাই পরিকল্পিত মিথ্যাচার নির্মলার: অমিত মিত্র
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রবিবার ভার্চুয়াল সভা থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
সোমবার সেই ভার্চুয়াল মিডিয়াতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর সমস্ত অভিযোগ খারিজ করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
এদিন তিনি বলেন, করোনা আবহে দেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গার করার প্রায়াস করার কথা তাঁর । তা না করে রাজনীতি করছেন তিনি।
অমিত মিত্রের অভিযোগ নিজে একবারও মানুষের ভোটে জয়ী হননি নির্মলা অথচ তিনি যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তিনি সাত বার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
তাঁর মতে, শুধুমাত্র রাজ্যে ক্ষমতা দখলের লোভেই পরিকল্পিত মিথ্যাচার করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
এদিন অমিত মিত্র স্পষ্ট করে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথা শুনে তিনটি বিষয় সামনে এসেছে। এক রাজ্যেকে বদনাম করতে সব জেনেও পরিকল্পিত মিথ্যাচার করছেন তিনি।
অর্জুনের লক্ষ্য-ভেদঃ যুবশক্তি কর্মসূচীতে যুব সমাজের সাড়ায় আপ্লুত অভিষেক
দ্বিতীয়, ভুল তথ্য পরিবেশন করে মানুষকে মিসলিড বা বিভ্রান্ত করছে তিনি।
তৃতীয়ত, অমিত মিত্রের মতে, নির্মলা সিতারামণের এই প্রয়াস মূলত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।
উল্লেখ্য, বাংলার ভার্চুয়াল সভাতেই এই সুর বেঁধে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর রবিবার বাংলার বিজেপির ভার্চুয়াল জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের চূড়ান্ত ‘অসহযোগিতার’ ফিরিস্তি দিয়েছেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
দাবি করেছেন, করোনা, আমফান, সিএএ থেকে শুরু করে পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু—সব কিছুতে নিছক বিরোধিতার জন্যই কেন্দ্রের বিরোধিতা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও তথ্যই কেন্দ্রকে রাজ্য না দেওয়ায় গরিব কল্যাণ যোজনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাংলার শ্রমিকরা। এমনও অভিযোগ করেন তিনি।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী একদমই মিথ্যাচার করছেন। ভারতের ১১৬টা জেলাকে গরিব কল্যাণ যোজনায় বাছা হল। তার মধ্যে কেন পশ্চিমবঙ্গের একটাও জেলা নেই। সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে।
তথ্য দেওয়ার সমস্ত দিন-ক্ষণ জানিয়ে অমিত মিত্র বলেন, দেশের অর্থমন্ত্রী হয়ে এত বড় মিথ্যা বললেন তিনি!
রবিবার নির্মলা সীতারমণ অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণেই বাংলার মানুষ সমস্ত কেন্দ্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে আসার জন্যে ট্রেনের ব্যবস্থা করলেও সেই সব ট্রেনকে বলা হল করোনা ট্রেন। কোনও তথ্য দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
তাঁর দাবি, আমরা ওঁদের জন্য গরিবকল্যাণ যোজনা চালু করেছি। কিন্তু মমতাদির সরকার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনও তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান পাচ্ছেন না বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। সেইসঙ্গে সিএএ নিয়েও তৃণমূলকে বিঁধেছিলেন তিনি।
এরপরই অবশ্য আসরে নেমেছিল তৃণমূল। ট্যুইট করে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, একজন ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী অর্থনীতিকে চাঙা করার পরিবর্তে সিএএ, ৩৭০ ধারা, করোনা এবং আমফানের মতো বিষয়গুলি নিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন, বাংলায় ডুবতে বসা বিজেপিকে বাঁচানোর জন্য।
ডেরেকের পথেই এদিন নির্মলাকে আক্রমণ করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।তিনি বলেন, আর্থিক সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন। ২৩ শতাংশ বেকারত্ব আগে কখনও শুনিনি। কেবল বাংলাতেই বেকারত্বের হার ১৭ শতাংশ। দিনের পর দিন চিঠি লিখলেও করোনা মোকাবিলায় কোনও সাহায্য করেনি কেন্দ্র।
এদিন অমিত মিত্র অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলছেন, রাজ্য নাকি গরীব কল্যাণ যোজনার জন্য চাওয়া তালিকা দেয়নি। একথা সত্য নয়, তিনি বলেন, ২৩ জুন প্রথম রাজ্যের কাছে তালিকা চাওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যে সাতটার মধ্যেই ২০ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য পাঠায় রাজ্য। এরপর ২৫ তারিখ ব্লক অনুয়ায়ী তালিকা চাওয়া হয় ওইদিনের মধ্যেই এই তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অমিত্র মিত্র প্রশ্ন তোলেন কেন, তালিকা দেওয়ার পর এতবড় অসত্য বলা হচ্ছে।
তাঁর আরও অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যকে সহায্য করার জন্য অর্থমন্ত্রী বলছেন ১০১০৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে বলেন, আজ পর্যন্ত এক টাকাও কেন্দ্রীয় সাহায্য পায়নি রাজ্য। অথচ এই নিয়ে পরিকল্পিত মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
এদিন সিএএ, এনপিআর ও এনআরসি নিয়ে ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার একটা অস্ত্র হিসেবে এই ব্যাখ্যা করেছেন অমিত মিত্র।
তাঁর অভিযোগ, শুধু মাত্র মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। আসলে সবটাই করছে বিজেপি অস্তিত্বের সংকট থেকে নিজেদের বাঁচাবার জন্য।