গোটা দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আমাদের কাছে প্রধান শত্রু, CPM নির্বাচনের আগে BJP বিষয়টাকে অত্যন্ত খাটো করে দেখলেনঃ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
শুভজিৎ চক্রবর্তীকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকার
ঠিক যখন সারা দিন দেশ কোভিড মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন রাজ্য বনাম সিবিআইয়ের সংঘাত আরও একবার দেখা গেল। চার হেভিওয়েট নেতাকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে। গোটা বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যঃ এটা খুব পরিস্কার যে এটা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র সরকার কাজে লাগাচ্ছে। এই ঘটনা অনেক পুরাতন। এ ঘটনায় যতদুর জানা যায় চার্জশিট অনেক বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে। এতদিন অপেক্ষা করে ঠিক নির্বাচনের পরেই এই গ্রেফতার। তাও আবার বাছাই করে গ্রেফতার। শুভেন্দু অধিকারী বা মুকুল রায়কে ছেড়ে দেওয়া। এই সবটার মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিজেপি নির্বাচনে হেরে গিয়ে নির্বাচনের পর প্রতিশোধ নিতে চাইছে বাংলায়৷ সেই প্রতিশোধের একটি অংশ হল এই ঘটনা।
২০১৪ সালে নারদ স্ট্রিং অপারেশন যিনি করেছিলেন, সেই স্যামুয়েল ম্যাথু দাবী করছেন শুভেন্দু অধিকারীকে কেন গ্রেফতারি থেকে বাদ দেওয়া হল? এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যঃ অবশ্যই তাঁরই করা এই স্ট্রিং অপারেশন। তিনি একজন সাংবাদিক হয়েই করেছিলেন। আমি তাঁর এক ইন্টারভিউতে দেখেছি তিনি বলছেন, রাজনীতির একজন ব্যক্তি হিসাবে নয়, বরং সাংবাদিক হিসাবে চাইছেন দু’পক্ষের শাস্তি হোক। পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং সিবিআই কিছু মানুষের বিরুদ্ধে বাছাইভাবে একাজ করছে। ফলে পুরো ব্যাপারটার টাইমিংটা। নির্বাচনের পর কোভিড পরিস্থিতিতে সরকার চলতে না দেওয়া। এই কারণেই কিছু ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে বাম, কংগ্রেস, তৃণমূলের অন্দরে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে, আপনার কী মতামত?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যঃ রাজ্যপালের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে তিনি একজন বিজেপির নেতা হিসাবে কাজ করছেন। রাজ্যপালের কাছে থেকে যে নিরপেক্ষতা, যে সাংবিধানিক ভূমিকা আশা করা হয়, সেই ভূমিকা রাজ্যপাল পালন করছেন না। তিনি যেভাবে নির্বাচনের পরে খোলাখুলি বিজেপি নেতাদের নিয়ে সঙ্গে শীতলকুচি এবং নন্দীগ্রাম ঘুরছেন, আমার মনে হয় তাই রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালীন এবং নির্বাচনের পরে বিজেপির পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিনিধি হিসাবে ভূমিকা পালন করছেন। আমরা সেইজন্য বলছি এই রাজ্যপালকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷
২ মে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর একাধিক জায়গায় ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা দেখা গিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের পরেও তাঁদেরকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যঃ আমরা এই ঘটনার নিন্দা আগেই করেছি। প্রত্যেকবারের নির্বাচনে এই ঘটনা হয়। নির্বাচনের সময়েও কিছু রাজনৈতিক হিংসা ঘটে থাকে। এই হিংসা এবং প্রতিহিংসা অত্যন্ত নীন্দনীয়। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। রাজ্য সরকারের পদক্ষেও নিক যাতে কোনও হিংসার ঘটনা না ঘটে। ভোট মানুষ কাকে দেবেন সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার জন্য কোনও মানুষকে নিগৃহীত না হতে হয়। তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার আহত যেন না হয়।
সিপি(আই)এম সহ অন্যান্য বাম সংগঠনগুলি আপনাদের দলকে কটাক্ষ করে বলছেন, গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আপনাদের কথাবার্তা দেখে মনে হচ্ছে আপনারা তৃণমূলকে সমর্থন করছেন। কিন্তু আপনি এবং আপনার দলের কর্মীরা বলছে আপনাদের প্রধান ইস্যু বিজেপি বিরোধিতা। আপনারা কোন পক্ষে? যদি একটু স্পষ্ট করেন।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যঃ এটা স্পষ্ট করার কিচ্ছু নেই। আমরা খুবই স্পষ্ট যে গোটা দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আমাদের কাছে প্রধান শত্রু। প্রধান টার্গেট। বরং সিপিএম নির্বাচনের আগে বিজেপি বিষয়টাকে অত্যন্ত খাটো করে দেখলেন। এখন নির্বাচনের পরে তাঁরাও স্বীকার করছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে আটকাতে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। যারা তৃণমূলকে চায় না, তৃণমূল সমর্থক নন, তাঁরাও বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে আমাদের যা মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপিকে কী করে আটকানো যায়। সেটাই সিপিএম নেতৃত্ব নির্বাচনের পর মেনে নিচ্ছে। তাঁদের বোঝা উচিত এতবড় ভুলটা কেন হল?
এই মুহুর্তে দেশে বিজেপি শক্তির বিরুদ্ধে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যঃ আমাদের মনে হয় দু’তিনটে ব্যাপার। এই মুহুর্তে সারা দেশ কোভিডের সঙ্গে লড়াই করছে। সম্পূর্ণ সরকারের অপরিকল্পিত এবং প্রস্তুতিহীন ভূমিকার ফলে দেশকে বিরাট সংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন বলছি নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকার আর কোনও অধিকার নেই। দ্বিতীয়, সকল ভারতীয়কে দ্রুত টিকা দিতে হবে।
১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলে যাতে ভ্যাকসিন পায় তার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নিতে হবে। এটাই সরকারের প্রধান টাস্ক হবে৷ যে বাজে খরচ যেমন ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেন্ট্রাল ভিস্তা এই সময় অপচয় বন্ধ করতে হবে৷ কোভিডের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন৷
পশ্চিমবঙ্গ দেখিয়ে দিল বিজেপিকে আটকে দেওয়া সম্ভব। নির্বাচনের এই বার্তাকে নিয়ে জাতীয় স্তরে সমস্ত বিরোধী দলগুলির মধ্যে দ্রুত বোঝাপড়া করতে হবে। যে সমস্ত প্রশ্নগুলি রয়েছে তা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। কারণ, আগামী দিনে ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন রয়েছে,২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে। এখনই দেশের বিরোধী দলগুলিকে একজোট হয়ে এই প্রশ্ন আনতে হবে।