উৎসবে দরাজহস্ত মুখ্যমন্ত্রী, নাম না করে বিজেপিকে শকুনের সঙ্গে তুলনা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা আবহে এমনিতেই সরকারি ভাড়ারে টান। কেন্দ্রও সেভাবে সাহায্য করেনি রাজ্যকে। এক রকম টানাটানির মধ্যেই চলতে হচ্ছে রাজ্যকে। কিন্তু তাই বলে তো উৎসব থেমে থাকবে না। টানাটানির মধ্যেও পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠকে একগুচ্ছ খুশির খবর দিলেন মমতা।

সর্ব ধর্মের মানুষের জন্য এদিন কিছুনা কিছু দিলেন তিনি। একইসঙ্গে নাম না করে করোনা ও দুর্গাপুজো নিয়ে বিরোধী বিজেপিকে ঠুকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি এদিন নাম না করে বলেন, ‘করোনার জন্য কেউ কোনও উৎসব পালন করেন গত ছ’মাস। সকলকে ধন্যবাদ। কিন্তু অনেকে বসে আছে, কারণ তারা রাজ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে চায়। পুজো হবে না বলে রটিয়ে দিয়েছিল। এখন বুঝতে পারছে কতটা মিথ্যে কথা।’ মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘রাজ্যে সব হবে। তবে নিয়ম মেনে হবে।’

এদিন পুজো কমিটিদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘সিঁদুর খেলা, বিসর্জন, অঞ্জলি-সবই নিয়ম মেনে, দুরত্ব মেনে করতে হবে। তা না করে যদি কোভিড বেড়ে যায়। তাহলে অনেকে বসে রয়েছে, কিছু হলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। ওঁদের কোনও কাজ নেই, শকুনের মতো বসে রয়েছে। কিছু হলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে আর রাজ্যের বদনাম করবে।’

তবে, বিজেপির নাম না করে এদিনও তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘অনেকেই পুজোকে কেন্দ্র করে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। অনেকেই পুজো নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। আমরা তা করতে পারব না।’

মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগেও স্যোশাল মিডিয়ায় বদনাম করা হয়েছিল। কিন্তু সব ভুয়ো খবর। রাজ্য সরকার কোনও সম্প্রদায়কেই আলাদা করে দেখে না। নিয়ম সকলের জন্যই এক। তাই পুজো করলেও দোষ, না করলেও দোষ ধরবে। কারণ এদের দায়বদ্ধতা বলে কিছুই নেই।

তাঁর কথায়, ‘ক্ষমতায় যে থাকে, দায়বদ্ধতা তার থাকে। বাকিরা চিৎকার করে গেলেই হল।’ উল্লেখ্য, দিন দশেক আগেই ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম ভুয়ো খবর রটানো হয়েছিল। তার কারণে ইতিমধ্যেই ৪-৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।পুজো কিংবা এরকম সামাজিক অনুষ্ঠান নিয়ে ভুয়ো খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় রটালে পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ নিতে নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ বছর প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটির জন্য অনুদান বৃদ্ধি করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত বছর রাজ্যের তরফে প্রতিটি কমিটিকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। আর মহিলা পরিচালিত কমিটিগুলি পেয়েছিল ৩০ হাজার টাকা করে অনুদান।

এবার এক ধাক্কায় তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের অনুদান বৃদ্ধির পাশাপাশি পুজো কমিটিগুলির জন্য আরও একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি জানান, এ বছর বিদ্যুতের খরচে প্রতিটি পুজো কমিটি ৫০ শতাংশ ছাড় পাবে। সিইএসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা- উভয়ই এই ছাড় দেবে। গত বছর বিদ্যুতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া গিয়েছিল।

পাশাপাশি অনুমোদনের জন্য দমকল এবং পুরসভা-পঞ্চায়েত এবার আর পুজো কমিটিগুলির থেকে কোনও ফি নেবে না বলেও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া পুজোর আবেদন করা যাবে অনলাইনে।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/idolatry-will-start-from-the-third-there-will-be-no-abandonment-carnival-chief-minister-mamata-banerjee/

এদিন পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৩৪৮৩৭ টি পুজো রয়েছে রাজ্য পুলিশের অধীনে। ২৫০৯ টি পুজো রয়েছে কলকাতা পুলিশের অধীনে এবং ১৭০৬ মহিলা পরিচালিত পুজো রয়েছে। সকলকেই বলব, পুজো করুন। শুধু একটু সাবধানে থাকুন।’

সুরক্ষাবিধি ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শুধু সন্ধ্যার পর থেকে ঠাকুর দেখতে না-বেরিয়ে সারা দিন ধরে দর্শনার্থীদের মণ্ডপে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল ফোরাম ফর দুর্গোৎসব। তা হলেই সন্ধ্যার পর থিকথিকে ভিড় এড়ানো যাবে। এদিন একই অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও।

প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একদিনে সব বিসর্জন নয়। সকলকে সচেতন থাকতে হবে। পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য সব বিভাগ একটা কোঅর্ডিনেশন কমিটি তৈরি করুন। ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করুন। স্বাস্থ্য দফতরও ভলেন্টিয়ার বাড়ান। সাধারণ মানুষকে নিয়ে বাকিরা সকলে মিলেই ভালো করে পুজো করব।’

এদিন মমতা জানিয়েছেন, আশাকর্মীদের ১,০০০ টাকা করে বেতন বাড়াতে চলেছে রাজ্য সরকার। এর ফলে তারা এবার থেকে ৫,৫০০ টাকা করে মাসিক বেতন পাবেন। এছাড়া সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতনও ১,০০০ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন মমতা। যার ফলে তাদের বেতন বেড়ে হচ্ছে ৯,০০০ টাকা।

এছাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য অবসরকালীন সুবিধা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, এবার থেকে অবসরের সময় এককালীন ৩ লক্ষ টাকা করে পাবেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।

হকারদের জন্যও পুজোর উপহার ঘোষণা করেছেন মমতা। জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে হকারদের অবস্থা খুব খারাপ।

তাই তাঁদের পুজোর আগে এককালীন ২,০০০ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার। এজন্য ইতিমধ্যে ৮৫,০০০ হকারের তালিকা রাজ্যের কাছে জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট