স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মদ্যপায়ীদের অবাধ প্রবেশেই বিপদ
ডাক্তার মানুষের কাছে ভগবান৷ হাসপাতাল কী মন্দির? সেটাই ঠিক। ঈশ্বরের উপাসনাস্থল এখন বেরঙিন। এখানে অস্থি মজ্জা নিয়ে এখন কম কথা হয়৷ কর্ণপটহের কম্পনের শব্দ একটাই৷ “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। কীসের জন্য? একজন মহিলা চিকিৎসককে নৃশংস খুনের জন্য। একটা খুন শুধুমাত্র আমাদের চোখের স্বচ্ছ জানালাটাই খুলে দেয়নি, আমাদের অনেক ভুল ধরিয়ে দিয়েছে। সেরিব্রাম অর্থাৎ গুরুমস্তিষ্কে বারে বারে যে প্রশ্নটা ধাক্কা দিচ্ছে, তা অতি সাধারণ। একজন মদ্যপ ব্যক্তির হাসপাতালে অবাধ প্রবেশ করতে পারে? স্বাভাবিকভাবে পারস্পরিক এই প্রশ্নও উঠছে, আর জি করের নৃশংস ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেদিন মদ্যপান না করলে তার মানসিকতা একই থেকে যেত? তাই গোদা বাংলায় আবারও প্রশ্নটা করতে হচ্ছে হাসপাতালে মদ্যপায়ীদের অবাধ প্রবেশের ছাড়পত্র রয়েছে? সেই ছাড়পত্র দেয় কে? সিস্টেম? কারা সেই সিস্টেমের অংশ? যারা কয়েকশো কোটি টাকা মদ বিক্রি থেকে ভর্তুকি পায়? আসলে এই সিস্টেমের অংশ আমরা সকলেই।
আমাদের দেশেই কত বধু নির্যাতনের খবর আসে। আকন্ঠ মদ পান করে বউয়ের ওপর অত্যাচারের ছবিটা সারা দেশজুড়ে রয়েছে। সেই সিস্টেমের অংশ আপনি আমি সকলেই৷ স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা মদের বোতল নিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন। গলা অবধি মদ পান করে বেহুঁশ পুলিশ শুয়ে পড়ে রয়েছেন। পরে জিজ্ঞেস করলে ওই শাসকতন্ত্রের এক নেতার নামও নিচ্ছেন। তাই সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে যে কেউ কাউকে কিছু বলার নেই। কিন্তু এবার সময় এসেছে কোথাও একটা বেড়া দেওয়া দরকার। শিক্ষাক্ষেত্রে মদের ফোয়ারা বন্ধ করা হোক। হাসপাতালে মদ্যপ ব্যক্তিদের প্রবেশ বন্ধ হোক।
তাহলে কী সিস্টেম বদল হয়ে যাবে? মদ্যপান না করলেই সব কিছু থেকে সুরাহা? এতে মানসিকতার বদল হবে? একবারেই নয়। কিন্তু চিন্তাধারায় বদল আসবে। বারবার চিকিৎসকরা রোগীর পরিবারের দ্বারা আহত হন৷ দেখা যায় অধিকাংশ মদ্যপান করে হাসপাতালে প্রবেশ করে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি করেন৷
এখনও অবধি তদন্ত যতদূর এগিয়েছে, তাতে অভিযুক্ত সঞ্জয়কে সেদিন আটকানো যেত, আর জি করের সেদিনের ঘটনায় যদি এই সামান্য বেড়াটুকু দেওয়া থাকত, তাহলে এত বড় নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারত না৷ ঘটনার সঙ্গে অন্যান্যরাও জড়িত? সেই প্রশ্নের উত্তর তদন্ত সাপেক্ষ৷ কিন্তু স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই বেড়াটুকু রাখা দরকার৷
কারণ, যার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে তিনি একজন শহরের নামী হাসপাতালের এক চিকিৎসক। তার সঙ্গে যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে অন্যান্যরা কী সুরক্ষিত? স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর্মরত হাজারো মহিলারা কী সুরক্ষিত? সর্বোপরি হাসপাতালের রোগীরা কী সুরক্ষিত?