চাকরির নামে ‘ভুয়ো’ অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়েছে সরকার? সবেতেই ক্রেডিট নেওয়ার প্রবণতাতেই বিপত্তি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ইডি-সিবিআইয়ের হানা, চাকরি দুর্নীতি, কয়লা ও গরু পাচারে তৃণমূল নেতাদের একাংশের জড়িয়ে পড়ার মতো পরিচিত ঘটনাগুলোকে ছাপিয়ে এক নতুন বিতর্ক এসে হাজির হয়েছে বাংলায়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চাকরির নামে কয়েক হাজার পড়ুয়াকে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় নাম জড়িয়ে পড়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শোরগোল এখনও অব্দি ততটা মাত্রা না ছাড়ালেও এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। গোটা ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বেকায়দায় পড়েছে রাজ্য সরকার।
গত ১১ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এবং ১৫ সেপ্টেম্বর খড়্গপুরে অনুষ্ঠান করে প্রায় ৩০ হাজার ছেলে-মেয়ের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই দুই অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলেন তারা সকলেই ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ইন্টারভিউয়ে বসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল কারিগরি শিক্ষা দফর। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচিত হন, আবার অনেকেই যথারীতি সুযোগ পাননি।
সভাপতি পদে ভোট এড়াতে ময়দানে নামছেন সোনিয়া
এই পর্যন্ত কোনও সমস্যা ছিল না। তবে একটা বিষয় পরিস্কার এরা কেউ কোনও সরকারি চাকুরি বা সরকারি সংস্থায় ট্রেনি হিসেবে সুযোগ পাননি। সরকারি প্রকল্পের অধীনে ট্রেনিং পেলেও যারা চাকরি বা ট্রেনি হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন তা সবই বেসরকারি সংস্থায়। কিন্তু বাংলার মানুষ এক বিরল ঘটনা সাক্ষী থাকল।
বেসরকারি সংস্থায় সুযোগ পাওয়াদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠান করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। যদিও সেখানেও সমন্বয়ের অভাবে অনুষ্ঠান মঞ্চে মাইক হাতে নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারলেন কাউকে তখনও নিয়োগপত্র পৌঁছে দেওয়াই হয়নি!
তবে পরিস্থিতি সামলে নেতাজি ইনডোরের মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, বাড়ি ফেরার সময়ই চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে যাবেন সবাই।
এরপর থেকেই বিপত্তির পর্ব শুরু হয়। নেতাজি ইনডোরে যারা হাজির ছিলেন সেই ছেলেমেয়েদের প্রায় কেউই ঐদিন সরকারের দেওয়া বাসে করে বাড়ি ফেরার সময় নিয়োগপত্রের কাগজ পাননি। তবে পরের দিন দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাছে সরকারি খামে বেসরকারি সংস্থার একটি করে কাগজ পৌঁছে যায়।
তাতে বেশিরভাগই জানতে পারেন চাকরি নয়, তাঁরা আসলে ভিন রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থায় ট্রেনি হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের ভাতা পাবেন ঠিকই, কিন্তু তার পরিমাণ এতোটাই কম যে ভিন রাজ্য থেকে জীবন ধারণ করা প্রায় অসম্ভব।
এরপর আরও বড় চমক আসে। দেখা যায় ট্রেনি হিসেবে ভিন রাজ্যের সংস্থায় যোগ দিতে চাইলেও হাতে বিশেষ সময় নেই। ফলে সরকারের তরফ থেকে পাঠানো কাগজে উল্লেখ করা সংস্থার নম্বরে ফোন করেন অনেকেই।
আর তাতেই জানা যায় নাম, ঠিকানা একই থাকলেও ওই বেসরকারি সংস্থা নাকি ট্রেনি হিসেবে এই নিয়োগপত্রগুলো পাঠায়ইনি! বেসরকারি সংস্থার এই দাবির অর্থ দাঁড়াচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়োগপত্র বলে যা পাঠানো হয়েছে তা আসলে সঠিক নয়!
বিরোধী এবং চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো নিয়োগপত্র’ বিতরণের অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি রাজ্যের বেহাল কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি নিয়ে জেরবার সরকার। তাই আমজনতার নজর ঘোরাতে ভুয়ো নিয়োগ পত্র বিতরণ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী!
তবে যে ৩০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা সরকারি তরকে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের সকলেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা তা নির্দিষ্ট করে এখনও জানা যায়নি। যদিও বৃহস্পতিবার খড়্গপুরের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এই সংক্রান্ত কোনও বিভ্রাট থাকলে তা খতিয়ে দেখার জন্য দ্রুত একটি গ্রিভান্স সেল খোলা হবে।
কিন্তু কেন এমন বিভ্রাট ঘটল? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, বেসরকারি সংস্থায় কেউ চাকরি পাক বা ট্রেনি হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান, এখানে সরকারের কলার উঁচু করার কিছু নেই।
কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের বিষয়েও কৃতিত্ব নিতে চাওয়াটাই ছিল গোড়ায় গণ্ডগোল। আর তারপরের ঘটনা সকলের কাছেই পরিষ্কার। পাশাপাশি চাকরি ও ট্রেনির যে পার্থক্য আছে তা মুখ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ।