কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে পরিকল্পিত মিথ্যাচার বলছে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  গত কয়েকদিন ধরেই বিরোধীরা পরিযায়ী শ্রমিক, কৃষক ও গরিব মানুষের প্রশ্নে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। এদিন তাদের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে এই রাজ্যের বিজেপি বিরোধী তিন দল তৃণমূল,বাম এবং কংগ্রেস। এ দিনও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি নয় এই তিন দল। এদিন একদিকে তৃণমূল যেমন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীরঘোষণাকে জুমলা হিসাবেই ব্যাখ্যা করেছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেস বলছে সারবত্তা হীন বক্তব্য রেখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এ আসলে পর্বতের মূষিক প্রসব। আবার সিপিএমের কথায়, দীর্ঘ শীতঘুমের পর দেশের পরিযায়ী শ্রমিক, কৃষক খেটে খাওয়া গরীব মানুষের কথা সরকারের মনে পড়েছে।

এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ তথা শ্রমিক সংগঠনের (আইএনটিটিইউসি)সভানেত্রী দোলা সেন বলেন, মোদি সরকারের বক্তব্যে না আঁচালে বিশ্বাস নেই।

তাঁর কথায়,নরেন্দ্র মোদি সরকারের শুরুই জুমলা দিয়ে। চার বছর ধরে অসংখ্য মিথ্যে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওঁনার এবং ওঁনার সরকারের মন্ত্রীদের কথা মানুষ এখন আর বিশ্বাস করে না। মোদিবাবুর সরকারকে ১৪ সাল থেকে দেখছি। শুরু থেকেই জুমলাই ভরসা এই সরকারের।

করোনা অভিশাপ না আশীর্বাদ, বাস্তব বিবেচনার সময় এসেছে

এদিন দোলা সেন আরো বলেন,১৪ সালেই ওরা বলেছিল কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে প্রত্যেকের ব্যাংক একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে। সেই থেকে শুরু ২০ সালে করোনা মোকাবিলাতেও মিথ্যাই চালিয়ে যাচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার করোনা পরিস্থিতিতে ৫৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ এক টাকাও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আসেনি। আমরা অপেক্ষা করছি, যা ঘোষণা হয়েছে, ওরা আগে দিক। তাঁর মতে, ধার থেকে ঘোষণা সবই আসলে গল্প। মোদি সরকারের জুমলা।

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এদিনের ঘোষণার পর বলেছেন, দেশের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন, তখন মন্ত্রীরা কোথায়? পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাস্তায় নামতে হয়েছে। অথচ এই মানুষগুলোই নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসার জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল।

তিনি আরও বলেন, ছবি কখনোই মিথ্যে কথা বলে না। ক্লান্ত, ঘুমন্ত শিশুকে বাস্কের উপর নিয়ে মাইলের পর মাইল এক মায়ের হেঁটে যাওয়ার ছবি হৃদয়বিদারক। সরকার চাইলে এদের খুব সহজেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারতো। ভারতীয় রেলের কাছে এটা মাত্র একদিনের ব্যাপার। কিন্তু তারা তা করেনি। এগুলি মানুষ নিশ্চয়ই ভুলে যাবেনা।

এদিন কংগ্রেসের তরফ থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে সারবত্তা হীন এবং পর্বতের মূষিক প্রসব বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী এদিন একযোগে এই ঘোষণার সমালোচনা করেছেন।

সোমেন মিত্রের কথায়, বুধ এবং বৃহস্পতি দু’দিন তিন ঘন্টা সাংবাদিক সম্মেলন করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। দেশের মানুষ তাঁর দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু তাদের নিরাশ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা স্রেফ লোক ঠকানো ছাড়া কিছু নয়। এর আগে যা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার তা বাস্তবে রূপ পায়নি, স্রেফ ঘোষণাই রয়ে গেছে।

ব্রিটেন থেকে ধার করা করোনা প্যাকেজেও দিশা দেখাতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী

অন্যদিকে অধীর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় নতুন কি আছে? তাঁর প্রশ্ন, পরিযায়ী শ্রমিককে কেন এই সরকার ভিখারি মনে করছে? পরিযায়ী শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে গিয়েছিলেন রুটি-রুজির সন্ধানে তারা কিন্তু সম্মানের সঙ্গে রোজগার করতেন। আজ কেন তাদের ভিখারির পর্যায়ে নামিয়ে আনা হল! আজ কাজ ছেড়ে দিয়ে বউ ছেলে মেয়ে বাচ্চার হাত ধরে তারা বাড়ির দিকে রওনা দিতে বাধ্য হচ্ছে এটা কার ব্যর্থতা সেটা আগে স্বীকার করতে হবে। কেন আজকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কখনো ট্রেনের তলায় কখনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে কখনো হার্ট অ্যাটাক হয়ে মরতে হবে?  তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।কেন্দ্রীয় সরকার যদি লকডাউন এর আগেই পরিচয় শ্রমিকদের কথা ভাবতো তাহলে এত বড় বিপর্যয় হতো না।

একই সুর বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, এতদিন আমরা যা বলছিলাম আনপ্ল্যানড লকডাউনের মাধ্যমে দেশের গরিব মানুষকে বিপদে ফেলা হয়েছে। আজ নির্মলা সীতারামনের ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হল আমরা যে কথাগুলো বলছিলাম সেগুলো সঠিক ছিল।

তিনি আরও বলেন, আজ আমরা একটা প্রশ্ন তুলতে চাই আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা করলেন সেগুলি কি বাজেট প্রভিশনের বাইরে ! নাকি বাজেট কমিশনের মধ্যে থেকেই একটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হল। বুধবার দেড় ঘণ্টা এবং বৃহস্পতিবার দেড় ঘন্টা দু’দফার ভাষণে মানুষের এটা বোধগম্য হলো না যে এই অর্থ গুলি আদতে আসবে কোথা থেকে?

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম এদিন এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের তৃতীয় পর্যায়ে এসে শেষ পর্যন্ত আমরা পরিযায়ী শ্রমিক গরিব মানুষের কথা, সরকারের মুখ থেকে শুনতে পেলাম। তবে আজ যে কথাগুলো কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বললেন তা কাজে রূপদান হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।

সম্পর্কিত পোস্ট