মূল প্রাধান্য পাক চাকরী, নতুন বছরের বাজেটে দাবী যুব সমাজের

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেহাল অর্থনীতিতে সাধারণ মানুষের চাঁদিফাটা অবস্থা। তার ওপর একের পর এক নতুন আইনে তোলপাড় গোটা দেশ। পাঁচ বছর তো দূরে থাক, বাকি চার বছরের আগেই দমবন্ধকর পরিস্থিতি ভারতবর্ষের।

||শুভজিৎ চক্রবর্তী||

২০১৪ এর পর ফের ২০১৯-এ বিরাট মার্জিনে ক্ষমতায় এল মোদি সরকার। ২০১৪ এর সুপারম্যানকে আবারও ক্ষমতায় নিয়ে এল দেশের মানুষ। গেরুয়া ঝড়ের দাপটে গোটা দেশে খুশির রোশনাই।

দ্বিতীয় ইনিংসে ঝোড়ো ব্যাটিং চালাতে কেবিনেটে জায়গা পেলেন অমিত শাহ। অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বভার পেলেন নির্মলা সীতারামন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেহাল অর্থনীতিতে সাধারণ মানুষের চাঁদিফাটা অবস্থা। তার ওপর একের পর এক নতুন আইনে তোলপাড় গোটা দেশ। পাঁচ বছর তো দূরে থাক, বাকি চার বছরের আগেই দমবন্ধকর পরিস্থিতি ভারতবর্ষের।

গত পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি মাফিক একের পর এক বিল পাশ করাচ্ছেন বটে, কিন্তু চাকরীর কোনও দেখা নেই। এদিকে শুরুতেই ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির বাজেটের স্বপ্ন দেখিয়ে বসলেন অর্থমন্ত্রী। দিনের পর দিন ক্রমবর্ধমান নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামে হাঁসফাঁস মধ্যবিত্তের সংসার।

আরও পড়ুনঃ “ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে তাণ্ডব চালাবেন না”, হুঁশিয়ারী মমতার

নতুন দিন দেখাবে মোদি সরকার। তাই বিপুল ম্যানডেটে এবার ক্ষমতায় এনেছিল মানুষ। সেই স্বপ্নে জল ঢেলে আপাতত অর্থনীতিকে আইসিইউতে ভর্তি করেছে মোদি টু পয়েন্ট ও ।

প্রত্যেক বছর ২ কোটি চাকরীর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদিজী। সরকারী চাকরীতে জল ঢেলে একের পর এক ডিগ্রি নিয়ে বেকারত্বের জীবন কাটাতে হচ্ছে দেশের যুবকদের। ২০১৭-১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী এই মুহূর্তে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা শতকরা ৬.১ শতাংশ । যা গত চার দশকে সর্বাধিক। তাই পরবর্তী বাজেটে প্রত্যাশা রেখেই চাতকের মত সরকারী চাকরীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেশের যুবকরা।

প্রত্যেক বছর প্রায় ৫০ লক্ষের অধিক যুবক গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার করার পরেই অনেকেরই স্টার্ট আপ খোলার মত সাধ্য থাকে না। তাই তাঁদের ভরসা একমাত্র সরকারী চাকরী। যা পরবর্তীকালে তাঁদের স্বস্তি দিতে পারে।

এই মুহূর্তে দেশে যে পরিমাণ বেকারত্ব রয়েছে তা পূরণ করতে হলে সরকারকে আগামী ১৫ বছর অবধি বছরে প্রায় ১৩ লক্ষের অধিক চাকরীর ব্যবস্থা করতে হবে। নয়ত আগামী দিনে এর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে পারে। কিন্তু সরকারী চাকরী দেওয়ার পরিবর্তে একাধিক সরকারী কোম্পানিকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার ফলে অর্থনীতি আরও ডুবতে বসেছে।

সদ্য নোবেলজয়ী বাঙালী অর্থনীতিবীদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে হলে দেশের গরিবদের হাতে টাকা দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটা সম্ভব হতে পারে সরকারী চাকরীর মাধ্যমেই।

সেন্টার অব মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালে উত্তরপ্রদেশে বেকারত্বের হার ছিল ৫.১ শতাংশ। ২০১৯ এর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৯৫ শতাংশে। যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ। প্রথমবার বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবী করেন, ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে শিল্প সংক্রান্ত ট্রেনিং দেবে সরকার। কিন্তু অনেকেই সেই প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যান। যারা প্রশিক্ষণ পান তাঁদের মধ্যে অনেকের ভাগ্যে চাকরীর শিকে ছেঁড়ে না।

জাতীয় পরিসংখ্যান তথ্য অনুযায়ী ২০১১-১২ সালে একজন ব্যক্তির যে পরিমাণ মাসিক নুন্যতম ব্যয় তা এখন ৩.৭ শতাংশ কমে গিয়েছে। কিন্তু জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামে মাথাপিছু এই টাকাতেও সংসার চালাতে নাজেহাল বেশীরভাগ পরিবার। এমনকি শিশুদের উচ্চশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে অক্ষম হচ্ছেন অনেকেই। বেসরকারি চাকরী বেছে নিতে হচ্ছে যুবকদের। দিনের পর দিন বেকারত্ব থাকার পর যুবকদের মধ্যে চুরি, ছিনতাইয়ের মনোভাব ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। আবার চাকরী না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করছে অনেকেই।

আরও পড়ুনঃ অর্জুন গড়ে তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন, ফাঁপরে গেরুয়া শিবির

ইতিমধ্যেই সিএএ সহ একাধিক ইস্যুতে সরব হয়েছে পড়ুয়ারা। ৩০০ শতাংশ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরব হয়েছে জেএনইউ। যা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। একজোট হয়ে সরকারের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিরোধী পক্ষ। জেএনইউ ছাড়াও ক্রমাগত ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরব হয় একাধিক কলেজের পড়ুয়ারা।

চাকরীর অবস্থা এতটাই খারাপ মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি শূন্যপদের চাকরীর ক্ষেত্রে আবেদন করছেন হাজারো যুবক। যেখানে বেশীরভাগ যুবকের যোগ্যতা এমএসসি, এমটেক, এমফিল অথবা পিএইডি। চাপে পড়ে কেরানি বিভাগের চাকরীর জন্য আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরাও। যা পরিস্কার করে দিচ্ছে দেশের বেকারত্বের সমস্যা।

যদিও এসব বিষয় থেকে মুখ ঘোরাতেই এনআরসি, সিএএ এর মত ইস্যুকে সামনে রেখে নির্বাচনী ময়দানে গোল করতে চাইছেন মোদি-শাহ। কিন্তু বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত চিন্তায় ফেলছে সাধারণ মানুষকে। তাই নতুন বছরে নতুন কোনও বক্তব্যে নয়, নিজেদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে চায় যুবসমাজ।

সম্পর্কিত পোস্ট