আবেদন-নিবেদনের দিন শেষ, সেলিমের হাত ধরে পাল্টা আক্রমণের নীতি সিপিএমে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃমহম্মদ সেলিম বরাবরের সুবক্তা বলে পরিচিত। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ব্যতিক্রমী বক্তব্যগুলো একটু বেশি করে ফোকাসে আসছে। যুক্তি, সেইসঙ্গে তৃণমূল-বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ এই হল সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদকের ট্রেডমার্ক স্টাইল। তবে কুকুরের সঙ্গে পুলিশের তুলনা টেনে সম্প্রতি তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তা নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
বগটুই যে রামপুরহাটে অবস্থিত সেখানে প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে গিয়ে সেলিম আরও একধাপ এগিয়ে বলে বসেছেন, কুকুরের সঙ্গে পুলিশের তুলনা করে কুকুরকে অপমান করেছি! তাঁর এই বক্তব্য শুনে সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা উজ্জীবিত। যদিও তৃণমূল ময়দানে নেমে তীব্র সমালোচনা করছে সেলিমের।
পুলিশের সঙ্গে কুকুরের তুলনা টেনে সেলিম আসলে আনুগত্যের বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালের বারবার বাংলার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা শাসক দলের নেতাদের নির্দেশ ছাড়া এক পা চলছে না। তার জন্যই একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। মহম্মদ সেলিম সেই বিষয়টিকেই নিশানা করেন।
তবে সুযোগ পেয়ে কুণাল ঘোষরা সেই পুরনো নেতাজিকে বলা ‘তোজোর কুকুর’ এর প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ জাপানের তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক তোজোর সাহায্য নিলে তৎকালীন বামপন্থী নেতা ভবানী সেন নেতাজিকে তোজোর কুকুর বলেছিলেন। তবে এটা কমিউনিস্ট পার্টির নিজস্ব অবস্থান নয়। সেই সময়কার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলিল ঘেঁটে দেখা গিয়েছে তৎকালীন সিপিআই ভবানী সেনের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিল।
কঙ্কাল কাণ্ডের ‘অপ’প্রচারও দমাতে পারেনি তাঁকে, জঙ্গলমহলে ঘুরে দাঁড়াতে সুশান্তেই ভরসা সিপিএমের
সে যাই হোক, বিতর্কিত মন্তব্য, গরমা গরম বক্তৃতা দিয়ে আসল লক্ষ্যের দিকে ধীরে হলেও এগিয়ে চলেছেন সেলিম। কারণ তিনি জানেন দীর্ঘ এক দশকের উপর ক্ষমতার বাইরে থেকে এবং একের পর এক আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে সিপিএমের নিচুতলায় বড় ফাটল ধরেছে। কর্মীদের মনোবল একেবারে তলানিতে। একটা বড় অংশের কর্মীরা দল ছেড়ে আগেই বিজেপিতে চলে গিয়েছিল।
এই অবস্থায় সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন দলীয় নেতৃত্ব পাল্টা আক্রমণের পথে না হাঁটায় অত্যাচারের শিকার হওয়া সিপিএমের কর্মীবাহিনী হতাশ হয়ে পড়ে। যার জেরেই একুশের বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়ে যেতে হয় বামেদের।
মহম্মদ সেলিমের এখন প্রধান লক্ষ্য দলের কর্মী বাহিনীর হতাশা কাটানো। আর সেই হতাশা কাটাতে গেলে আগে দলীয় নেতৃত্বকে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে হবে। সেই সঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পথে ছিলেন সেই পথেই চলেছেন সেলিম। তবে নিঃসন্দেহে কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে তাঁর এই পথের স্বকীয়তা আছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ সেলিমের সামনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে ২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন। বিধানসভা ভোটের পর থেকে পুরনির্বাচন ও বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে একটু হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে বামেদের।
তবে সেটাই সব নয় তৃণমূলকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে, আন্দোলন-লড়াই এবং নেতৃত্তের চূড়ান্ত আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনে শওকত মোল্লা, আরাবুল ইসলাম, অনুব্রত মণ্ডল, উদয়ন গুহদের মোকাবিলা করতে হবে। সেই দিকেই লক্ষ্য রেখে কাজ শুরু করে দিয়েছেন সেলিমরা।