ছাই সরিয়ে নিজেদের ‘অমূল্য রতন’ এর খোঁজে বাগবাজারের সর্বহারা মানুষগুলি

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।

পুড়ে গিয়েছে কাগজপত্র। তবুও শেষটুকু খোঁজার জন্য সকাল বেলাই উপস্থিত হয়েছেন যে যার মতো। গত রাতের চোখ ঝলসানো দানবাকার আগুনের শিখা তাঁদের জীবনে এভাবে অন্ধকার ডেকে আনবে তা ভাবতেই পারেননি। সকাল বেলাতেও আলিমারির ভেতর কাপড়ের ডাঁই সরিয়ে মিলছে ধোঁয়া। ছাই হাতড়ে মূল্যবান জিনিসের খোঁজ করছেন তাঁরা।

তাঁদের কেউ করেন দিন মজুরের কাজ, আবার কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা কিছু জমিয়েছিলেন তা দিয়েই নিজেদের পছন্দের জিনিস গড়িয়েছিলেন। সেগুলোও তো পুড়ে ছাই। ছাই হয়ে গিয়েছে জমানো টাকা। বেশ কিছু নথী। নিজেদের বলে আর কিছু নেই। ১০০ টি র বেশী ঝুপড়িতে আগুন লাগে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই অসহায় মানুষগুলির। নিঃস্ব হয়ে রয়েছেন ৭০০ ঝুপড়ি।

গোটা ঘটনার পিছনে চক্রান্ত বলে দাবী করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ঘটনার তদন্তের দাবী জানিয়েছেন তিনি। পাল্টা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন যেকোনো আগুন লাগার ঘটনায় ফরেনসিক বিভাগ খতিয়ে দেখে এখানেও খতিয়ে দেখা হবে। দিলীপ ঘোষ ভোটের মুখে নোংরা রাজনীতি করছেন। আবার শাসক দলের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পান্ডে জানিয়েছেন, ঘটনার পিছনে কারোর কোনও অভিসন্ধি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, কলকাতার চারপাশে ‘ল্যান্ড শার্ক’ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/destructive-fire-in-bagbazar-25-fire-engines-at-the-scene/

এখন প্রশ্ন হল, শুধুমাত্র উত্তর কলকাতা নয়, কলকাতার একাধিক এলাকায় বেশ কিছু ঝুপড়ি এলাকা রয়েছে। যেখানে অগ্নিনির্বাপনের সঠিক ব্যবস্থা কি রয়েছে? কারণ সদ্য তপসিয়া এবং বাইপাসের ধারের ঝুপড়িতে আগুন লাগার ঘটনা আমরা দেখেছি। অতীতেও নন্দরাম মার্কেটের মতো ঘটনা এখনও আমাদের স্মৃতিতে সতেজ রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে এখন উদাসীনতা কেন? এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে দমকল বিভাগের আসতে দেরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কোনরকম চেষ্টা করেও তা প্রথম আটকানো যায়নি। আবার স্থানীয়দের একাংশ জানিয়েছেন, ওই এলাকা ঘিঞ্জি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে বাগবাজারে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যার যা ক্ষতি হয়েছে সরকার তা পূরণ করে দেব। ততদিন অবধি সরকার তাঁদের দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই মুহুর্তে ঘরহারা মানুষগুলি আপাতত উইমেন্স কলেজে মাথা গুঁজেছেন। যে ভায়বহ ঘটনা তাঁদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে তার ছাই সরিয়ে খোঁজ করছেন নিজের জিনিসের।

সম্পর্কিত পোস্ট