হাওড়ায় দরিদ্র মানুষের পাশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনেরা
রাহুল গুপ্ত
ওরা দিন আনে , দিন খায়। কেউ চালায় লরি, ট্রাক্টর – কেউ চালায় রিক্সা। কেউ নিয়ে যায় ভারী ভারী দ্রব্য সামগ্রী কেউ নিয়ে যায় আমজনতাকে। কিন্তু রাজ্য , দেশ জুড়ে লকডাউনে আজ সব বন্ধ। প্রায় বন্ধ ওদের দুবেলার খাবারও। এদের পাশে এসে এবার দাঁড়ালো সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনেরা। হাওড়া জেলার দুটি ওয়ার্ডের সেই ছবি উঠে এলো আমাদের সামনে।
সকাল ১০টা
জেলা হাওড়ায় শিবমন্দির সংলগ্ন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল সকাল পৌঁছে গেলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনেরা। সঙ্গে থাকলেন ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও। যারা লরি চালিয়ে দিন গুজরান করেন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো চাল, ডাল, আলু।
বাচ্চাদের কে দেওয়া হলো হরলিক্স সঙ্গে বিস্কুট। স্বাভাবিকভাবেই এই সব দ্রব্য সামগ্রী পেয়ে স্বস্তির নিঃশাস ফেললেন ওই মানুষেরা।
কবে হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কেউ জানেন না , তাও সব খেটে খাওয়া মানুষজনরা মেনে নিচ্ছেন করোনা মোকাবিলায় এই লক ডাউন কে।
দুপুর ১২ট
জেলা হাওড়ার দানেশ শেখ লেনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে যাওয়া হলো। স্থানীয় রিক্সা চালক ভাইদের হাতে তুলে দেওয়া হলো চাল, ডাল, আলু. তাদের সন্তানরা পেলো হরলিক্স সঙ্গে বিস্কুট।
পাচ্ছেন না নিয়মিত প্যাসেঞ্জার তা সত্ত্বেও কার্যত মেনে নিতেই হচ্ছে এই লক ডাউন কে। নিজে বাঁচলেই সব বাঁচানো সম্ভব। তাই অপেক্ষায় দিন গোনা ছাড়া আর কিছুই যে করার নেই।
এদিন সুব্রতবাবু বলেন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই , আর তার জন্য দরকার দুবেলার খাওয়া। তাই এই উদ্যোগ চলবে যতটা সম্ভব। আগের দিনের মতো এই দিনও রিনা কিন্নর ( রিনা দির ) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও মানস পুরকায়স্থের ব্যবস্থাপনায় এই কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়।
এদিন তৃতীয় লিঙ্গের তরফে থাকলেন রিয়া , পিঙ্কি , সাইন। এঁরা সবাই এলেন হাওড়ার বাঁকড়া থেকে। এনারা গুরু মা রিনা কিন্নর ( রিনা দির ) এর শিষ্যা। থাকলেন রিনা দির জামাইও এদিনের এই অনুষ্ঠানে।
এই দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন ওই অঞ্চলের প্রবীণ নাগরিক ত্রিদিব রায় চৌধুরী , সমাজ সেবী ললিত মেহেতা প্রমুখ।
প্রত্যেকেই জানান মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এই কাজ তারা চালিয়ে যেতে চান যতদিন না পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। মানস পুরকায়স্থ বলেন আগে মানবজাতি তারপর জীবনে সবকিছু , তাই মানুষ বাঁচলে সব হবে। তিনি গুরু মা রিনা কিন্নরকে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ধন্যবাদ ও জানান।
ত্রিদিববাবু জানান রাজনীতির রঙের বাইরে গিয়ে এখন কাজ করে যেতে হবে। সমাজ সেবী ললিত মেহেতা জানান করোনাকে হারিয়ে দেশ কে জিততেই হবে , প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে তারা মানছেন।
সবাইয়ের এক মত করোনাকে হারিয়ে এই পৃথিবী , দেশ , রাজ্য কে জেতানো। তাই বাড়িতে বসে লড়াই চালানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই আমাদের কাছে।