বাম আমলে শত দুর্নীতি হতো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে তৃণমূল

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  রেশন ও আমফানের দুর্নীতি নিয়ে ফের মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার হাজরা মোড়ে ‘সেফ ড্রাইভ ও সেভ লাইভ’-এর এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্টই বলেন, হয়তো সারা রাজ্যে ১০০ শতাংশ দুর্নীতি কমাতে পারিনি। কিন্তু ৯০ শতাংশ দুর্নীতি কমিয়েছি। বাকি ১০ শতাংশ কমানোর চেষ্টা করছি। এই চেষ্টাতে কোনও ত্রুটি নেই।

পূর্ববর্তী বাম সরকারকে তোপ দেগে তিনি বলেন, বাম শাসনের ৩৪ বছরে পঞ্চায়েত গুলোতে ১০০ শতাংশেই দুর্নীতি হতো।কিন্তু এখন সারা বাংলার মাত্র দু-তিনটি জায়গাকে তুলে ধরে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি প্রতিদিনই ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলায় ৩৪১টা ব্লক রয়েছে। আরও কত মিউনিপালিটি রয়েছে,পুরসভা রয়েছে। তার মধ্য থেকে শুধু তিনটি জায়গাকে নিয়ে রোজ সিরিজ করে অপপ্রচার করবে ওখানে দুর্নীতি হয়েছে।

ইতিমধ্যেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনও রঙ দেখবেন না। যে দলেরই লোক দুর্নীতিতে যুক্ত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইতিমধ্যেই এই নিয়ে শাসক দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারকে এই নিয়ে অত্যন্ত কঠোর হতেই বলা হয়েছে। দুর্নীতি করলে কোনও রঙ দেখা হবে না।

কারণ, প্রত্যেকের রেশন ও ত্রাণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তা থেকে প্রশাসনের চোখে কেউ ধুলো দিলে তাকে ছাড়া হবে না।’

এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলেন, ‘দলীয়স্তরে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেককেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা করা হবে।

কাটমানির পর আমফান, ঠগ বাছতে গিয়ে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে না তো?

এই ধরনের ব্যবস্থা এই রাজ্যে এতদিন কেউ করেনি বলেই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। পাশাপাশি, তিনি জানান, লকডাউনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এরাজ্যের মতো রেশন দিতে সাহস করেনি কোনও রাজ্য।

একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে কোভিডের চিকিৎসার জন্য সব খরচ সরকারই দেয়। একমাত্র এই রাজ্যেই এটা হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যও খরচ দেয় সরকারই। যেটা দেশের মধ্যে কোথাও নজির নেই। এছাড়াও, করোনা রুখতে সামাজিক দুরত্ব, মাস্ক পড়া-সহ সবরকম নিয়মবিধি মেনে চলার পরামর্শও দেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ করেন, দুর্নীতির এই ম্যাকানিজমটা সিপিএম তৈরি করেছে ৩৪ বছর ধরে। ওদের এই মেকানিজমটা এখনও সরকারের নিচু লেভেলেও আছে। তাকে ট্যাকেল করতে গিয়ে আমাকে ডে-নাইট পরিশ্রম করতে হয়। আমাকে শুধু করোনা বা আমফানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় তা নয়, পাশাপাশি কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি এবং বিশেষ সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়। তারপরে দিল্লির এজেন্সি, দিল্লি সরকার তো আছেই।

একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের পরে রাজ্যে যে বিপুল গাছের ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আগামী ১৪ জুলাই গোটা রাজ্য জুড়ে ১০ কোটি গাছ লাগানো হবে। শুধু সুন্দরবনেই ৫ কোটি গাছ লাগানো হবে।

রাজ্যে করোনার সংক্রমণ ক্রমাগত বেড়ে চলায় আগামিকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাজ্যে ফের লকডাউনের নিয়মকানুন আরও কড়া হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, করোনা নিয়ে অযাচিত ভয় পাবেন না। যেহেতু এখন টেস্টিং বাড়ছে ট্র্যাকিং বাড়ছে ফলে সংখ্যাটা বাড়া খুব স্বাভাবিক। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে এত ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মুখে ভালো করে মাস্ক পড়ুন। মাস্কটা আপনাকেও নিরাপত্তা দেবে, আপনার পাশের লোকটিকেও নিরাপত্তা দেবে। এখন থেকে নিজের জিনিস নিজে ব্যবহার করুন, যাতে একজনের ছোঁয়ায় অন্যজনের না এই রোগ হতে পারে। ঘন্টায় ঘন্টায় সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া অভ্যাস করতে হবে এবং রাস্তাঘাটে যখন বেরোবেন যেখানে সেখানে বসে পড়বেন না। হাটে বাজারে মাঠে একটু দূরত্ব বজায় রাখুন।

অন্যদিকে, কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প নিয়েও এ দিন সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প এ রাজ্যে গৃহীত হয়নি। এ নিয়ে বিজেপি রাজ্য সরকারকে আক্রমণও করে চলেছে।

এ প্রসঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারতের প্রায় দু’বছর আগে আমরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছি। সেই প্রকল্পের পুরো প্রিমিয়াম দেয় রাজ্য সরকার। তা হলে কেন কেন্দ্রের প্রকল্প নেব আমরা?

সম্পর্কিত পোস্ট