রাজনৈতিক স্বার্থেই এই পরিস্থিতি, মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া কঠিন

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসন থেকে ভারত যখন স্বাধীন হয়েছিল পরিস্থিতি বিশেষ একটা ভালো ছিল না। অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল পাকিস্তান। আজকের ভারত ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে না উঠলেও তার একাংশ ধর্মের ভিত্তিতে পথচলা শুরু করায় স্বাভাবিকভাবেই এদেশেও তার প্রভাব পড়েছিল। পাল্টা অনেকেরই দাবি ছিল ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে।

তবে দীর্ঘ চেষ্টায় অন্ততপক্ষে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। এই পরিস্থিতি আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভালোভাবেই বিরাজমান ছিল। তারপরেই প্রবলভাবে এইদেশে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেশানোর খেলা শুরু হয়। সেই সূত্র ধরেই আজকের পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে গোটা দেশ।

ভারতের সামাজিক স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থা কোনদিনই ছিল না। তবে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। তা কেবল মাত্র সংবিধানে লিপিবদ্ধ। এই বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সফল কোন‌ও রাজনৈতিক পক্ষ যদি হয় তবে তার নাম বিজেপি। সময়ের খেলায় নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা একসময় ক্ষমতা থেকে চলে যেতে পারেন, বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রক নাও থাকতে পারে।

কিন্তু এই দেশে রাজনীতির প্যারামিটারটাই তারা সফলভাবে বদলে দিতে পেরেছে। আর তাই ক্ষমতা হারানোর পর‌ও বিজেপির এই দেশের রাজনীতিতে প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যত উগ্র হয়ে উঠবে, যত পেশী শক্তির আস্ফালন ঘটাবে ততই বিজেপির লাভ।

হাওড়া জেলার সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রবণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ সদস্যের পুলিশের বিশেষ দল গঠন

কারণ সংখ্যালঘু জুজু দেখিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের একজোট করতে সুবিধা হবে তাদের। এক্ষেত্রে সংখ্যালঘুর উগ্রতার পথে হাঁটার বিষয়টিকে সরল দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। কারণ সব সময় কোণঠাসা হতে হতে, সরকারের একের পর এক অবিচারের ফলে তাদেরও ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। আসলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙুক এটাই চায় গেরুয়া শিবির।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, যা হচ্ছে চারিদিকে, হাওড়া মুর্শিদাবাদ নদিয়ার বেলডাঙায় যে কাণ্ড ঘটছে তার পিছনে শুধু ধর্মীয় ভাবাবেগ নয়, রাজনীতির খেলা আছে। মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত  সঠিক কথাই বলেছেন। কারণ অতীতেও দেখা গিয়েছে উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্য-সমর্থকরা আবেগের বশে দু’চারটে ভুল করে বসে ঠিক‌ই, কিন্তু এই ভুল পথে তাদের চালিত করার জন্য বড় অবদান থাকে মাথাদের।

আর দুই সম্প্রদায়ের মাথাদের মধ্যে অনেক সময়ই ‘আন্ডার টেবিল ডিল’ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হতেই পারে গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্বের সঙ্গে হয়তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু স্বার্থান্বেষী উচ্চমহলের তেমনই কোনও বোঝাপড়া হয়েছে, যাতে বাংলা থেকে প্রায় মুছে যেতে বসা বিজেপি আবার অক্সিজেন ফিরে পায়। অপরদিকে সংখ্যালঘু নেতারা নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে পারেন!

সাধারণ হিন্দু-মুসলমান মানুষ যত তাড়াতাড়ি নেতাদের এই সব ‘ছক’ সম্বন্ধে সচেতন হবেন ততই মঙ্গল।

সম্পর্কিত পোস্ট