করোনার করাল গ্রাস, শিবযজ্ঞ কমিটির বিশ্বশান্তি যজ্ঞ এবার করোনা বিধি মেনেই

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ভিড়ের মধ্যে ঈশ্বর দর্শন হয়তো হয়, কিন্তু তাঁর স্মরণ সেভাবে হয়না। তাই বোধহয় আরেকটা সুযোগ দিয়েছেন মহাদেব। ঘরে বসেই তার আরাধনা করার জন্য। এই বিশ্বাসকে সঙ্গে করেই রাজ ঐতিহ্য সম্পন্ন কোচবিহার শিব যজ্ঞ কমিটির বিশ্বশান্তি যজ্ঞ এবার হচ্ছে করোনা বিধি মেনেই।

না থাকছে মন্দিরে প্রবেশের সুযোগ। না থাকছে মহাদেব দর্শন। নেই প্রসাদ বিতরণ। ঘরে বসে মন্ত্র জপ করেই এবার স্মরণ করতে হবে দেবাদিদেব মহাদেবকে।

১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিবছর কোচবিহার শহর লাগোয়া খাগড়াবাড়ি এলাকায় ৫দিন যাবৎ চলে এই বিশ্ব শান্তি যজ্ঞ। আর এই  যজ্ঞকে ঘিরে সহস্রাধিক মানুষের আনাগোনা হয় এই শিবযজ্ঞ মন্দির চত্বরে। বসে মেলা। করোনার ভ্রূকুটিতে এই সবকিছুই এবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মন্দির কমিটি।

গত বছরও করোনার আবহে লকডাউন থাকার কারণে হয়নি মেলা। যজ্ঞানুষ্ঠানও হয়েছিল সীমিত আকারে। এবার করোনার প্রকোপ অধিক থাকায় রয়েছে বিধি-নিষেধ, রয়েছে।

মন্দিরে প্রবেশ, মহাদেব দর্শন, প্রসাদ বিতরণ সবেতেই রয়েছে এবার নিষেধাজ্ঞা। এর পাশাপাশি কোন পূণ্যার্থী এই যজ্ঞের জন্য কোন উপকরণ আনতে পারবেন না মন্দিরে। এক কথায় আচার মেনে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র আকারে যজ্ঞানুষ্ঠান করেই এবারের মত ইতি টানতে হবে শিব যজ্ঞ অনুষ্ঠানে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।

১৯৪৭ সালে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এর পাশাপাশি ভাগ হয়েছে আমাদের দেশ। তখনও এই কোচবিহার ছিল স্বাধীন রাজ্য ছিলো। এই সময়ে রাজা ছিলেন রাজা জগদ্বীপেন্দ্র নারায়ণ। তিনিই একটি ব্রাহ্মণ সম্মেলনের আয়োজন করেন কোচবিহার শহর লাগোয়া খাগড়াবাড়িতে।

আগামীকাল শীতলকুচিতে সিট

এই ব্রাহ্মণ সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন রাজার তৎকালীন দ্বার পন্ডিত প্রয়াত রমাশংকর কাব্য ব্যাকরন স্মৃতিতীর্থ এবং সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন কোচবিহার জেলার তৎকালীন প্রখ্যাত আইনজীবী ধরণীশংকর ভট্টাচার্য্য।

সিদ্ধান্ত হয় একটি বৈদিক যজ্ঞ করা হবে। এই যজ্ঞ হবে কিছু প্রাপ্তির জন্য নয়, বিশ্ব শান্তি এবং মঙ্গলের জন্য। এরপরই সুদূর কাশি থেকে এই যজ্ঞের বিধি নিয়ে আসা হয়। যজ্ঞের উদ্বোধন করেন মহারাজা জগদ্বীপেন্দ্র নারায়ণ। যজ্ঞের শেষ দিন ধর্ম সভায় ভাষণ এবং শান্তির মালা নিতেন তিনি। এভাবেই প্রতিবছর রীতিনীতি মেনে চলছিল যজ্ঞানুষ্ঠান।

এরপর রাজার মৃত্যু হয়। কোচবিহার জেলা হিসেবে ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট শিবযজ্ঞ কমিটি প্রতিবছরই নিয়ম করে চালিয়ে যাচ্ছে এই যজ্ঞানুষ্ঠান। খাগড়াবাড়ি চত্বরে প্রতিবছরই অস্থায়ী জায়গায় এই যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পন্ন হতো।

এরপর এই শিবযজ্ঞ মন্দির স্থাপনের জন্য নিজের জমি দান করেন স্থানীয় রজত বালা দেবী। তাঁর এই  দান করা জমিতেই সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ দানে তিলে তিলে গড়ে ওঠে মন্দির।৯এর দশকের প্রথম থেকে এখানেই সম্পন্ন হয় এই বিশ্ব শান্তি যজ্ঞ।

সম্পর্কিত পোস্ট