নাও মিলতে পারে টিকিট, রাজনৈতিক অবসরের পুর্বাভাস চিরঞ্জিতের

।। আকাশ চৌধুরী ।।

একুশে নির্বাচনে শাসকদল অনেককেই যে টিকিট দেবে না সে কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তৃণমূলের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে সেই তালিকায় নাম ছিল বারাসাতের বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর।

তাঁদের আরও দাবি একথা জানতেন চিরঞ্জিত নিজেও। তাই আগে থেকেই তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন যদি এবারের নির্বাচনে টিকিট পান তবে তিনি রাজনীতিতে থাকবেন। নাহলে অব্যাহতি চেয়েছেন রাজনীতির পরিসর থেকে।

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কী দলবদলের কথা চিন্তাভাবনা করছেন চিরঞ্জিত? জল্পনায় জল ঢেলে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করেন তবেই তিনি রাজনীতি করবেন। নাহলে ফিরে যাবেন নিজের অভিনয়ের জগতে।

রীতিমতো সাফাইয়ের সুরে তিনি বলেছেন, বয়স বাড়ছে। তাই রাজনীতির ময়দান থেকে মুক্তি চাইছেন তিনি। চিরঞ্জিত নিজে যাই বলুন না কেন বিষয়টি এত সহজ নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

রাজনৈতিক মহলের  মতে, ২০১১ সালে ঘাসফুলের টিকিটে বারাসাত থেকে জয়ী হন অভিনেতা দীপক চক্রবর্তী ওরফে চিরঞ্জিত। ২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বারাসাত থেকে তাকে প্রার্থী করেন।

এর কারণ অবশ্য বারাসাতে শাসক শিবিরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছিল। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন বারাসাতের বাইরের কাউকে বা কোনো সেলেব্রিটিকে এখান থেকে প্রার্থী করে সিটটি শাসকদলের দখলে রাখতে।

দলনেত্রীর সেই লক্ষ্য পূরণ হলেও ২০১৬ সালের পর থেকেই বদলাতে শুরু করে বারাসাতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিধায়কের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষজন অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। তাঁকে নাকি এলাকায় দেখাই যায় না।

কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি আসেন অতিথি হয়ে। আমজনতার কোন সমস্যা তার কাছে সরাসরি পৌঁছানো সম্ভব হতো না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যক্তির কথায়, ওনার বারাসাতে একটি বসার জায়গা থাকলেও তিনি আসতেন না সচরাচর। ওখানে গিয়ে সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় চিঠি জমা করে আসতে হত। দীর্ঘ সময় পর কখনো সমাধান মিলত। আবার কখনো মিলত না।

আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠক এড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সময় বদলে সারা রাজ্যের মতো বারাসাতে বাড়তে শুরু করে গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয়তা। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বারাসাতের ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫ টি তেই হেরে যায় তৃণমূল।

কোনোমতে সেই যাত্রায় উতরে গেলেও ২১এর নির্বাচনে লড়াই টা খুব সহজ হবে না সেকথা জানেন মুখ্যমন্ত্রীও। তাই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সদর শহর বারাসাত বিধানসভা কেন্দ্রকে হাতের মুঠোয় রাখতে নতুন কোনো প্রার্থীর নাম চিন্তাভাবনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সেকথা জানা মাত্রই বেঁকে বসেন বর্তমান বিধায়ক। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, গোটা করোনাকালে একবারের জন্যেও বিধায়ককে দেখা যায়নি এলাকায়। পরিবর্তে স্থানীয় নেতৃত্ব নয় গোটা পরিস্থিতি সামলে জেনে সর্বক্ষণ।

যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথে নেমে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, সেখানে কেন তার দলের বিধায়ককে পাওয়া যাবে না সে প্রশ্নও তুলেছেন বারাসাতের বাসিন্দারা।

উল্লেখ্য এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পাখির চোখ পশ্চিমবঙ্গ। ২০০ টিরও বেশি আসনে জয়লাভ করে এবার ক্ষমতায় আসতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তাদের সেই আসনগুলির মধ্যে রয়েছে বারাসাত বিধানসভা কেন্দ্র।

রাজনৈতিক মহলের মতে, বারাসাতে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বারাসাতে স্থানীয় বাসিন্দাকেই চাইছেন আমজনতা। উঠে আসছে বারাসাত পৌরসভার প্রাক্তন উপ পৌরপ্রধান অশনি  মুখোপাধ্যায়ের নাম। উঠে আসছে তাপস দাশগুপ্তের মত বর্ষীয়ান নেতার নামও। তবে সবটাই অনুমেয়।

বারাসাতের এই আসন দখলে রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই চিরঞ্জিত এই ভরসা রাখবেন? নাকি অন্য কোনো সেলিব্রেটিকে তুলে আনবেন? অথবা বারাসাতের স্থানীয় নেতৃত্বকে টিকিট দেবেন ?

সেকথা এখনি বলা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক মহলের মতে এবারের নির্বাচনে বারাসাতে চিরঞ্জিত প্রার্থী হলে গদি  বাঁচানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে শাসক দলের কাছে।

সম্পর্কিত পোস্ট