পরিবর্তনশীল তৃণমূলে ‘অভিষেক মেডিসিন’, আতঙ্কিত বহু নেতা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ২০২১ সালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরা সফরে বলেছিলেন, “২০১৬ সালের তৃণমূল কংগ্রেস আর ২০২১ সালের তৃণমূল কংগ্রেস এক নয়।” অর্থাৎ বার্তা স্পষ্ট, পরিবর্তনের ১০ বছর পরেও দলের খোলনলচে পরিবর্তনশীল।

কিন্ত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যখন একথা বলছেন তখন সেই নির্দেশ কি নীচুতলার নেতৃত্বের কর্নকুহরে পৌঁছচ্ছে না? নাকি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মদন মিত্রের মতো নেতারা যারা এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে রাজনীতি করতেন তারা বিভিন্ন ভাবে ভয় পাচ্ছেন?

নাহলে ২০২২ সালে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মদন মিত্রের মতো আদি নেতারা বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন কেন? পরে পাল্টি খেয়ে আবার শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির প্রধান ও তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাফাই গাইলেন মদন। মদনে মিত্রের কথায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। তাই যদি হয়, তাহলে আগের রাতে ফেসবুক লাইভে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কে নিশানা করার অর্থ কি ছিল?

তারা কি ভুলে যাচ্ছেন যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একটা শৃঙ্খলা আছে। একটা কাঠামো আছে। যে কাঠামোর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। যে কাঠামোর মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রয়েছেন। তাহলে ‘আবোল-তাবোল’ আউড়ে বাংলার বাজার গরম করার কারণ কি? এই প্রশ্ন করছেন দলের অন্দরেরই কর্মী-সমর্থকেরা।

খুলছে জিম, আউটডোর শুটিংয়ে অনুমতি, তাহলে স্কুল খুলছে না কেন? প্রশ্ন অনেকের

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে বা রাজনৈতিক নির্দেশে ভুল কিছু নেই। অনেকেই বলছেন, বিদ্রোহের অনেক কারণ। যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে তাদের রাজনীতির রাজপাট এতদিন চালিয়েছেন, সেটা যে অভিষেকের আমলে হবে না তা পরিষ্কার। বরং বাংলার আপামর তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-নেতারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশকে মেনে নিয়ে চলতে চাইছেন আগামী দিনের জন্য।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউকে তাড়িয়ে দেননি। অনেকই এই বাংলাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে দলের আড়ালে-আবডালে বহু আক্রমণ করেছেন। শুধু তাই নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে দুহাত ভরে লুঠেছেন। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঠিক এইখানেই ব্যাটন ধরতে চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই অসুবিধা হচ্ছে অনেকের।

কিছু নেতা দলের অন্দরে যারা আছেন তাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ২০২২ সালের পুরনির্বাচন ও ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার সঙ্গে ২০২৩ সালেই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই দলকে সংগঠিত করতে গেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাঁর নিজস্ব স্টাইলে পরিচালনা করবেন এটাই তো স্বাভাবিক। তাই দিদিকে তাঁর ভাইরা এতদিন যা বুঝিয়েছেন এখন থেকে তাতে ‘ফুলস্টপ’ পড়ছে।

যারা প্রকাশ্যে নাম করে বা নাম না করে অভিষেককে আক্রমণ করলেন আর যারা দলের ভেতরেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তারা প্রত্যেকেই কিন্ত রয়ে গেলেন সিসিটিভির পর্যবেক্ষণে। তাদেরকে সতর্ক করল দল। বাকিটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনশীল রাজনীতির অঙ্গ হিসাবে ক্রমশ প্রকাশ্য।

সম্পর্কিত পোস্ট