আস্থা হারিয়েছে মমতার দল, বিকল্প হতে পারে বাম-কংগ্রেসের সার্বিক জোট

মহিষাসুরমর্দিনীতে আমরা যেমন দেখি যে, অসুরকে বধ করতে সকল দেবতার শক্তির মিশেলে তৈরী হন দেবী দূর্গা এবং তার হাতেই অসুরকূল বধ হয় তেমনি এ রাজ্যেও নানা মত ও রঙের মানুষ একই দাবি নিয়ে তাদের মতো লড়াই আন্দোলন করলেও সকলের সব পথ গিয়ে মিশেছিল মমতাতেই।

পার্থপ্রতিম বিশ্বাস

আইনজীবি,বারাসাত কোর্ট

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের জোট হয়।

কিন্তু নানা কারণে সে জোট বেশিদিন ধরে রাখা যায়নি।

২০১৯ সালে আবারও নতুন করে জোট হয়েছে বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের।

এবারে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেবলমাত্র নির্বাচনী লড়াই নয়, নিত্যদিনের যাবতীয় দাবি নিয়ে আন্দোলনেও দু’পক্ষ এক পথের পথিক হবে।

কার্যত তার কিছু কিছু উপমা বঙ্গবাসী ইতিমধ্যে দেখতেও পেয়েছেন।

আর এসব দেখেই চটেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি যে জোট করা পছন্দ করেন না, তা কিন্তু নয়।

আস্থা হারিয়েছে মমতার দল, নতুন জোটের পথে বাম-কংগ্রেস

অতীতে তিনি কখনও বিজেপির সঙ্গে কখনও জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছেন।

তারই ভাষায় হার্মাদদের দল বামেদের হাজার হাজার নেতাকর্মীও আজ তৃণমূলের সম্পদ।

ইতিহাস বলে, প্রতিবারই জোট করার কিছু সময় পরেই নানা ছুতোনাতায় সে সব জোট ভেঙে চলেও এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাহলে তার এই নিজের বেলায় আঁটি শুঁটি আর পরের বেলায় দাঁতকপাটি কেন?

মনে রাখা দরকার, এবারের বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের জোটও এখন পর্যন্ত সে অর্থে দানা বাঁধতে পারেনি।

কারণ, এই ধরনের জোট বাঁধা ও তাকে সফল করার প্রথম শর্ত হলো, জোটকে বুথ স্তর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে বা বুথ স্তর থেকেই জোট শুরু করতে হবে।

আরও পড়ুন : সঙ্কটে রাজনীতি, হারাচ্ছে সৌজন্যতা, চলছে কদর্য ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ

উভয়পক্ষের নিত্যদিনের একসাথে ওঠাবসা ও লড়াই সংগ্রামের ভেতর দিয়েই সম্পর্কের প্রকৃত বাঁধন তৈরী হয় এবং তা দীর্ঘদিন বজায়ও থাকে।

বর্তমানে কোথাও কোথাও জেলা বা আঞ্চলিক স্তরে বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের জোটের কাজ শুরু হলেও তা এখনও বুথ স্তর পর্যন্ত বা সার্বিক হয়ে উঠতে পারেনি।

তবুও মমতা এই জোটকেই ভয় পাচ্ছেন।

আমরা সম্প্রতি তার সেই ভয়ের প্রকাশ দেখলাম রাজ্য বিধানসভায় তার মুখনিঃসৃত বানীর মাধ্যমে।

কিন্তু কেন বা কি কারণে তাঁর এই ভয়?

২০১১ সালে এ বাংলার নির্বাচকমন্ডলী দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম সরকারকে সরাতে একপ্রকার বদ্ধপরিকর ছিল।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মমতা ব্যানার্জীর লন্ডন তত্ব, মতুয়া ও মুসলিম তোষন এবং সর্বপরি জমি আন্দোলন।

মহিষাসুরমর্দিনীতে আমরা যেমন দেখি যে, অসুরকে বধ করতে সকল দেবতার শক্তির মিশেলে তৈরী হন দেবী দূর্গা এবং তার হাতেই অসুরকূল বধ হয় তেমনি এ রাজ্যেও নানা মত ও রঙের মানুষ একই দাবি নিয়ে তাদের মতো লড়াই আন্দোলন করলেও সকলের সব পথ গিয়ে মিশেছিল মমতাতেই।

আরও পড়ুন : কোচবিহারের ৬ টি জেলায় আসন বন্টন চূড়ান্ত বাম-কংগ্রেসের

কার্যত তিনিই ছিলেন সবকিছুর মধ্যমনি।

ফলে অনায়াসেই সকলে তাকে ‘সততার প্রতীক’ বলেও মেনে নিয়েছিলেন এবং তার ফলে যেমন দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান হয় তেমনি রাজ্যের নতুন শাসক হিসাবেও নির্বাচিত হন তিনি।

কিন্তু তাঁর সেই সততা যে আসলে কাকের ময়ুর পুচ্ছ ছিল, তার প্রমাণ মিললো তিনি শাসন ক্ষমতায় বসতেই।

আস্থা হারিয়েছে মমতার দল,প্রকাশ পাচ্ছে অন্যরূপ

একে একে নানান কেলেংকারী, মস্তানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, আকথা কুকথার ভেতর দিয়ে একটি একটি করে খসে পড়তে লাগলো তার ময়ুরপূচ্ছ ।

আর প্রকাশ হতে লাগলো তার কাকেশ্বরী রূপ।

মজার হলেও এটা সত্যি যে, তার দলের যেসব নেতারা আজও তার ছবি বেচে বা সে ছবির আড়ালেই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করেন, সেই তারাও আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সততার প্রতীক’ বলেন না।

অপরদিকে এ রাজ্যে বাম ও জাতীয় কংগ্রেসকে শেষ করতে মমতা যে ভাবে বিজেপি দলকে তোল্লা দিয়েছিলেন তাতেও আর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

বঙ্গবাসী আজ মুক্তি চাইছেন

কারণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে বরাবরই উচ্চ আসনে থাকা বাঙালীরা এই অবৈজ্ঞানিক চিন্তা, নানা আকথা কুকথার মালিক এবং গোবর সংস্কৃতির প্রবক্তা বিজেপি দলের নেতাদের মোটেও মেনে নিতে পারছেন না। কার্যত বঙ্গবাসী আজ মুক্তি চাইছেন।

আরও পড়ুন : তপশিলি ভোট বড় ফ্যাক্টর, বাজেটে কল্পতরু মমতা

আজকের বঙ্গবাসী এই নকল ‘সততার প্রতীক’ আর ‘আচ্ছে দিন’-এর মিথ্যা স্বপ্নের ভয়াবহতা কাটিয়ে আবারও ফিরে পেতে চাইছে তার অতীতের স্মৃতি মাখা গৌরবগুলোকে।

ফলে বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের বর্তমান জোট আজও সঠিকভাবে দানা না বাঁধলেও এ রাজ্যের মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে যে নীরবে এই জোটকেই সমর্থন করবেন এটা একপ্রকার বাস্তব।

আর সেই বাস্তবতাকেই ভয় পাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জী। ভয় পেলে কেউ বাক্যহারা হন, কেউ আবার প্রলাপ বকেন। মমতা ব্যানার্জী প্রলাপ বকছেন।

আর প্রমাণ হচ্ছে, তিনি ধরা পড়ে গিয়েছেন। আর কে না জানে যে বিনাশকালে মানুষের বুদ্ধিনাশ হয়!

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত বক্তব্য প্রতিবেদকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর কোনো দায় www.thequiry.com এর না।

সম্পর্কিত পোস্ট