SSC কেলেঙ্কারি থেকে দূরত্ব রাখতে চেয়ে লাভ হয়নি, শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা তৃণমূলের
![](https://thequiry.com/wp-content/uploads/2022/01/909238-tmc-flag-aitc-780x470.jpg)
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এসএসসির একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে সপ্তাহখানেক আগেও অবস্থাটা অন্যরকম ছিল। কিন্তু খোদ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে থাকে তৃণমূলের জন্য। এরপর মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর দু’দিন বেপাত্তা থাকা এবং শুক্রবার আদালতের মন্ত্রীকন্যার নিয়োগকে বেআইনি বলে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দৃশ্যতই বেকায়দায় পড়ে যায় শাসক দল।
তবু অন্য দল থেকে আসা পরেশ অধিকারীকে ছেঁটে ফেলা তুলনায় সহজ ছিল তৃণমূলের। কিন্তু খোদ পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেভাবে এই কেলেঙ্কারির পরতে পরতে জড়িয়ে পড়ছেন তাতে দুর্নীতির আঁচ থেকে গা বাঁচানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষে অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সূত্রের খবর তিনি এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন। কিন্তু সেখানেও আগেভাগে ক্যাভিয়েট করে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। ফলে রাজ্যের এই প্রভাবশালী মন্ত্রীর আবেদন একপাক্ষিকভাবে শুনে সর্বোচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায় বের হওয়ার আশাও শেষ।
তাছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেভাবে সিবিআই তদন্তে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছেন তাতে শাসকদলের আরও উপরের তলার দিকে তদন্তপ্রক্রিয়া প্রসারিত হতে পারে বলে আইনজ্ঞদের একাংশের অনুমান। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এইবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে সরাসরি এই দুই মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি। তাসলে এসএসসি দুর্নীতি দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট এবং স্পর্শকাযর হওয়ায় অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়ানো মানে যেচে নিজের পায়ে কুড়ুল মারা।
কিন্তু তাও কী এই ঘটনার দায়ভার তৃণমূল সরকার বা দল হিসেবে তৃণমূল এড়াতে পারবে? আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যাচ্ছে তাতে বিরোধীদের চাপ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে সরকারের উপর। বিশেষ করে বাম ছাত্র-যুবরা যেভাবে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে, জায়গায় জায়গায় গিয়ে জনমত সংঘটিত করছে তাতে দুশ্চিন্তা বাড়াটাই স্বাভাবিক।
এই অবস্থায় সরকারের প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এত বিপুল কেলেঙ্কারি একটি দফতরে ঘটল কিন্তু কেন পুরো বিষয়টি তখঁর নজর এড়িয়ে গেল ইতিমধ্যেই তা নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রশ্ন তুলছে। কেন এই সমস্ত অভিযোগ ওঠার পরই মুখ্যমন্ত্রী কড়া পদক্ষেপ করেননি সেটাও জানতে চাইছে বিরোধীরা।
এই অবস্থায় বামেদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আন্দোলনে হয়তো কিছুটা লাগাম টানতে চেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু পাল্টা যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সামনে আনার দাবি তুলে সিপিএম আরও আক্রমনাত্মক অবস্থান নিয়েছে। তাতে এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। ফলে আমজনতার মনে বাম জামানার দুর্নীতি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আদৌ মুখ্যমন্ত্রীর বলা কথা মতো কিছু হয়েছিল কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব যথেষ্ট। সেখানে পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একের পর এক ফাউল শাসকদলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছেন।
ডিভিশন বেঞ্চে ফের ধাক্কা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের, খারিজ রক্ষাকবচের আর্জি
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের অন্যান্য দফতরের নিয়োগ ঘিরেও একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে যদি আগামী দিনে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হয় তবে পরিস্থিতি শাসকদলের পক্ষে আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে।
এই অবস্থায় কোনও একটি কড়া পদক্ষেপ নিলে তবেই একমাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে তৃণমূল। কিন্তু কার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেবে সেটাই বড় প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই এসএসসির পুরানো মেধা তালিকায় থাকা সকলের চাকরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
তাতে প্রায় সাত হাজার জন আন্দোলনকারী চাকরি পাবে। কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে সরকারের এই পদক্ষেপ ঘিরেই এবার প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী ও বিরোধীরা বলতে শুরু করেছে সরকারের এই সিদ্ধান্তেই প্রমাণ হল এর আগে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে সবটাই ঘুরপথ দিয়ে টাকার বিনিময়ে হয়েছে!
এই পরিস্থিতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের একটা সুযোগ থেকে যায় তৃণমূলের কাছে। কিন্তু তাতে এতদিনের নিষ্ক্রিয়তা এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকার বিষয়টি সামনে এসে যায়। সব মিলিয়ে নিজেদের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।