মেয়াদ ফুরনোর আগেই বদলি, ক্ষুব্ধ আমলাদের একাংশ কেন্দ্রের ডেপুটেশনে চলে যেতে চান
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কোনও জেলায় জেলাশাসক বা পুলিশ সুপার হয়ে গেলে সাধারণত তিন বছর মেয়াদ ধরা হয়। প্রশাসনিক নিয়মে এক জায়গায় তিন বছর হয়ে গেলে বিশেষ কারণ না থাকলে সেই আমলাকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। কখনও তাঁরা অন্যত্র একই পদে বদলি হন, আবার অনেক সময় পদোন্নতি ঘটে অন্যত্র চলে যেতে হয়।
তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে যেকোনও সময় জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারদের বদলি করতে পারে। শুধু জেলায় নয়, যে কোনও দফতরের সচিব বা কমিশনারদের নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার ঘটনাও আকছার দেখা যায়। তবে তৃণমূল সরকারের আমলে বাংলায় কজন ডিএম বা সিপি একটি নির্দিষ্ট জেলায় টানা তিন বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন তা গাঁটে গুনে বলা যায়।
বর্তমান রাজ্য সরকার যখন-তখন হুটহাট করে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের অন্যত্র বদলি করে দেয়। অথচ সরকারি প্রকল্পই হোক বা সরকারের বিভিন্ন দফতরের পরিকল্পনা, সবটাই জেলায় এই জেলাশাসকদের দ্বারাই বাস্তবায়িত হয়। ফলে প্রত্যেকেই একটি জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের ভাবনা চিন্তা অনুযায়ী বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলেন। সেইমতো জেলায় কীভাবে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করা হবে তার পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়।
একজন আমলা বেশ কিছুদিন একটি নির্দিষ্ট পদে না থাকলে সবার সঙ্গে ভালো করে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারেন না। আর সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হলে এই যোগাযোগটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই তাঁকেই হুট করে অন্যত্র বদলি করে দিলে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট জেলায় উন্নয়নের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তেমনই নতুন একটি জেলায় গিয়ে এই আমলাকে আবার নতুন করে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হয়।
বারবার একই ঘটনা ঘটতে থাকলে সংশ্লিষ্ট আমলার উপরেও মানসিক চাপ বাড়ে। তাছাড়া অনেক আমলাই নিজেদের সঙ্গে পরিবারকে রাখেন। ফলে একটি জেলায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর সন্তানদের নতুন স্কুলে ভর্তি করে তাঁরা হয়তো সবে একটু থিতু হয়েছেন, সেই সময়ই হঠাৎ করে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হলে সমস্যা বেড়ে যায়। শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে সন্তানকে নতুন স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাটা যেমন সমস্যার, তেমনই এতে ওই আমলার পরিবারের ভারসাম্য অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এতে প্রবল ক্ষুব্ধ হন আমলারা।
জেলার পুলিশ সুপারদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সরকারের যে পরিকল্পনা তা জেলাস্তরে বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব থাকে পুলিশ সুপারদের উপর। একজন আইপিএস অফিসার কোনও জেলায় পুলিশ সুপার পদে বদলি হয়ে আসার পর কাজের জন্য তাঁকে যেমন প্রথমে গোটা এলাকাকে ভাল করে চিনতে হয়, তেমনই তাঁর অধীনে থাকা থানাগুলির সঙ্গে গড়ে তুলতে হয় নিবিড় যোগাযোগ।
পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবের জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিল প্রশাসন?
কিন্তু পদে বসার কয়েক মাস পরেই যদি সেই আইপিএস অফিসারকে অন্য জেলায় বদলি করা হয় তখন তাঁকে গোটাটাই কেঁচে গণ্ডুস করতে হয়। বারবার একই ঘটনা ঘটতে থাকলে সংশ্লিষ্ট আইপিএস আধিকারিকের কর্মদক্ষতায় তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাছাড়া তাঁদের পরিবার নিয়ে জেলাশাসকদের মতোই একইরকম সমস্যায় পড়তে হয়। সব মিলিয়ে তাঁরাও বেশ ক্ষুব্ধ বর্তমান রাজ্য সরকারের উপর।
এর উপর শাসকদলের বিধায়ক-সাংসদদের প্রবল চাপের বিষয় আছে। একদিকে কলকাতা থেকে সবসময় পারফরম্যান্সের হিসেব চাওয়া হয়, অন্যদিকে শাসক দলের জেলার নেতা-মন্ত্রীরা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করার জন্য এই আইএএস-আইপিএস অফিসারদের চাপ দিতে থাকেন। সব মিলিয়ে রাজ্যের আমলাদের একটা বড় অংশ এই টানাপোড়েন থেকে নিস্তার পেতে কেন্দ্রের ডেপুটেশনে দিল্লি চলে যেতে চাইছেন।
যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যে আমলা কম থাকার বিষয়টি তুলে ধরে প্রায় কাউকেই কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে ছাড়ছে না। ফলে বাংলায় কর্মরত আমলাদের হতাশা ক্রমশই বাড়ছে।