ওড়িশায় ইস্পাত প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন বনবাসীদের
দ্য কোয়ারি ডেস্ক : ওড়িশার জগতসিংহপুরে জিন্দালদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন গ্রামবাসীরা।
অভিযোগ, গত ডিসেম্বর মাসে ওই প্রকল্পে জনশুনানির নামে প্রহসন হয়েছে। এরপরই ধিনকিয়া গ্রাম পরিষদ বা পল্লীসভা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করে।
সূত্রের খবর, অন্যান্য গ্রামগুলিও এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিতে চলেছে। ফলে আবারও থমকে গেল ওই ইস্পাত প্রকল্পের কাজ।
২০১১ সালের মে মাসে ওই এলাকায় ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি বড় ইস্পাত প্রকল্পের গড়ে তোলার অনুমোদন পায় পস্কো ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড।
১২৫৩.২২৫ হেক্টর বনাঞ্চলে সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প প্রতিষ্ঠার ছাড়পত্র পায় পস্কো।
কিন্তু ওই প্রকল্প বন অধিকার আইন ২০০৬ অনুযায়ী বনবাসীদের আন্দোলনে বাধার মুখে পড়ে।
বনবাসীরা তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ার ফলে ঝুলেই থাকে পস্কো ইস্পাত প্রকল্প।
আরও পড়ুন : সিএএ বিরোধীদের ছবি দিয়ে হোর্ডিংকে ‘অন্যায়’ বলল এলাহাবাদ হাইকোর্ট, মুখ পুড়ল যোগী সরকারের
বনবাসীদের দাবি মীমাংসা হলেই প্রকল্পের জন্য বনাঞ্চল দেওয়া সম্ভব বলে জানায় পরিবেশ মন্ত্রক।
২০১৭ সালে ওই প্রকল্প থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় পস্কো। ওইবছর সেখানে প্রকল্প গড়ার জন্য জিন্দালের জেএসডাবলু উৎকল স্টিল লিমিটেডকে অনুমোদন দেয় ওড়িশ সরকার।
এরপর ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ মন্ত্রকের বন উপদেষ্টা কমিটির কাছে যায় এই প্রকল্প।
২০১৯ সাল পর্যন্ত বন উপদেষ্টা কমিটি এনিয়ে একাধিক বৈঠক করে। ওই প্রকল্পের জন্য ১০৮৩.৬৯১ হেক্টর জমি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে কমিটি।
ওড়িশা সরকার ও কমিটির বোঝাপড়ার পর প্রকল্পে ছাড়পত্র পেয়ে কাজ শুরু করে জিন্দালের জেএসডাবলু।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জগৎসিংহপুরের গড়কুজঙে প্রকল্প নিয়ে এক জনশুনানিতে এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করেন গ্রামবাসীরা।
প্রকল্প বাতিলের দাবিও জানান। তাঁদের অভিযোগ, পস্কো এই প্রকল্প থেকে অবৈধ ভাবে সরে যাওয়ার পর পস্কোকে দেওয়া জমি রাজ্য সরকার জমি-ব্যাঙ্কে নিয়েছে।
জিন্দাল বিরোধী এবং পস্কো বিরোধী আন্দোলনের কর্মী প্রশান্ত পাইকরা জানান, এই প্রকল্পের ফলে আটটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ উচ্ছেদ হবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এর মধ্যে ধিনকিয়া গ্রাম এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিয়েছে। অন্যান্য গ্রামগুলোও একই পথ নেবে।
ধিনকিয়া পল্লীসভার সর্বসম্মত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আমাদের অধিকাংশই ভূমিহীন। ফলে এই বন ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
উর্বর এই জমিতে সুপারি ছাড়াও কাজু, নারকেল, আম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা সহ বিভিন্ন ফলমূল, শিকড় এবং নানান শাকসবজি হয়।
বনভূমিতে আমাদের গবাদি পশু চড়ে বেড়ায়। বনাঞ্চলে্র জলাশয়ে মাছও হয়। এসবের উপরই আমরা বেঁচে আছি। কয়েকশো বছর ধরে এই ভূমিতে আমরা বসবাস করছি।
ফলে এখানে কারখানা করতে আমরা দেব না।
ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বনাঞ্চলের উপর আমাদের ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠিগত অধিকারকে প্রথমে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং বনাঞ্চলকে অন্য কাজে ব্যবহারের আগে পল্লীসভার অনুমতি নিতে হবে।
কিন্তু সরকার এটা করেনি। গত ডিসেম্বরে জিন্দাল প্রকল্প নিয়ে এক জনশুনানি করেছে সরকার।
অভিযোগ, ওই জনশুনানি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অগণতান্ত্রিক। কারণ, সেখানে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অংশ নেয়নি। এই জনশুনানির খবর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পায়নি।
বাইরে থেকে লোকজন এনে ওই জনশুনানি করা হয়। ফলে ওই জনশুনানিকে বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
জানা গিয়েছে, এই অবস্থার মধ্যেও জিন্দালের কর্মীরা গ্রামে আসছেন। গ্রামের মানুষকে নানান লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন : দিল্লি হিংসা : বিহার ও বাংলায় ভোটে ধাক্কা খাবে বিজেপি
যদিও প্রকল্প এলাকার আটটি গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘যতক্ষণ না গ্রামবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জিন্দালের কোনও অফিসারকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না’।
অতীতের পস্কো বিরোধী আন্দোলনের মতো এখনও আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার, গ্রেফতার করার ভয় দেখানো হচ্ছে।
এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে গত ৩১ জানুয়ারি পরিবেশ মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছেন জিন্দাল বিরোধী-পস্কো বিরোধী আন্দোলনের নেতারা।
সেখানে প্রকল্পের নানান পরিবেশ বিরোধী প্রস্তাবকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে।
ফের ওড়িশার ওই ইস্পাত প্রকল্প নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নিজেদের অধিকার সুরক্ষিত করার দাবিতে জোরদার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বনবাসীরা।