বিদ্যাসাগরের প্রতি লোক দেখানো শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, সরব অভিষেক
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা আতঙ্কে বিপর্যস্ত জনজীবন, লকডাউনে ঘরবন্দি সাধারণ মানুষ। এরইমাঝে বুধবার ছিল বিদ্যাসাগরের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনেই বর্ণ পরিচয়ের শ্রষ্টাকে নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অবহ্যত।
লোকসভা ভোটের মুখে বিদ্যাসগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। সেসময় তৎলককালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো থেকেই বিদ্যাসগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ ওঠে। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল।
তাঁর মধ্যেই বিদ্যাসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙার অভিযোগ ওঠে। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বছরঘুরে বিদ্যাসাগর প্রয়াণ দিবসেও আলোচনায় সেই মুর্তি ভাঙার ঘটনাই।
এদিন বিজেপির তরফে সোশ্যাল সাইট ট্যুইটারে বিদ্যাসাগরের প্রয়ান দিবস উপলক্ষে একটি ট্যুইট করা হয়। এই ট্যুইট বার্তায় বলা হয় ‘বাংলার নবজাগরণের পুরোধা, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, গদ্যকার, বর্ণপরিচয়’র স্রষ্টা, ‘দয়ার সাগর’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে শত কোটি প্রণাম।’
ট্যুইট করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি লেখেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মতিথিতে তাঁকে প্রণাম জানাই। একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক এবং বাংলা নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ছিলেন বিদ্যাসগর। যিনি তাঁর জীবদ্দশায় নারী ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় বহু সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা বাংলা থেকে নির্মূল হয়েছিল। বিধবা বিবাহ আইনকেও কার্যকর করা সম্ভব হয়েছিল।
২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত সৌরভ থাকুক বিসিসিআই এর সভাপতির পদেঃ গাভাস্কার
এই ট্যুইট প্রকাশ্যে আসতেই গর্জে ওঠেন তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা ডায়মণ্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন সকালেই অমিত শাহের এই ট্যুইট সম্পর্কে লিখেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন মহান সমাজ সংস্কারক ছিলেন। যিনি এখনও ধর্মনিরপেক্ষ, মুক্ত-চিন্তায় সমাজের জন্য তিনি আজও পথিকৃত । ভাবতে অদ্ভুত লাগছে, যখন তাঁর সমর্থকরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছিলেন, এই মনীষীর ভাবনা ও আদর্শের অমিতজীর এই অঘাধ আস্থা কোথায় ছিল? দয়া করে এসব লোক দেখানো জিনিস বন্ধ করুন।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও অমিত শাহ ও বিজেপিকে আক্রমণ করে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ ভোলেনি যে, বিজেপি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল অমিত শাহ-র তীক্ষ্ণ নজরের সামনেই। আমাদের ভূমিপুত্রের প্রতি এই মিথ্যা সম্মান জ্ঞাপন বাংলার সংস্কৃতি ও মনীষীদের অপমান করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
গত বছর কলকাতায় বিজেপির মিছিলের সময়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার প্রভাব শেষ দফার ভোটে পড়েছিল। দেখা গিয়েছিল ওই দফার ভোটে একটি আসনও পায়নি বিজেপি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তা থেকে শিক্ষা নিয়েই হয়ত অমিত শাহ-সহ রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই এদিন বাঙালির সেন্টিমেন্ট পেতে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে কোনও ত্রুটি রাখেনি। কিন্তু তৃণমূলও পাল্টা মানুষের স্মৃতি উস্কে বলতে চেয়েছে, এসব আসলে লোক দেখানো।
যদিও বাম-কংগ্রেস শিবিরের অনেকে বলছেন, দু’দলই সমান। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ভোটের ঘুঁটি হয়ে গিয়েছেন বিদ্যাসাগর। বাংলার রাজনীতির কী দুর্দশাইটা না হল। ক্ষমতার জন্য এখন বিদ্যাসাগরমশাইকে নিয়েও টানাটানি করতে হচ্ছে!
বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, বিদ্যাসাগর যে সামাজিক চেতনায় বিশ্বাস করতেন তা নবগাগরণের রাস্তা করে দিয়েছিল। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আজীবন লড়েছিলেন তিনি। আরএসএস চায় কুসংস্কারের সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে। অন্যদিকে এ রাজ্যের শাসকদলও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই পুলিশ দিয়ে, মিথ্যে মামলা দিয়ে দমিয়ে দিতে চাইছে বিরোধীদের। দু’দলের কারওরই নৈতিক অধিকার নেই বিদ্যাসাগর নিয়ে কথা বলার। তাঁদের মুখে বিদ্যাসাগর নামটা উচ্চারিত হওয়াও দুর্ভাগ্যের।