একুশের লক্ষ্যে মুখপাত্রদের নয়া তালিকা প্রকাশ, নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে চমক দিল তৃণমূল
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কারও প্রত্যাবর্তন। আবার কেউকে দায়িত্ব থেকে দেওয়া হল অব্যাহুতি।মঙ্গলবার ঘোষিত তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্রের তালিকায় রয়েছে একের পর এক চমক।
বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করেই সম্প্রতি তৃণমূলের সংগঠনে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়েছেন দলনেত্রী। এই তালিকায় দীর্ঘদিন জেলে থাকা জনসাধারণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো, সিপিএমের বহিষ্কৃত নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেখে কম চমক দেননি তিনি।
তবে চমকের যে তখনও বাকি ছিল তা বোঝা গেল মঙ্গলবার। এদিন দলের রাজ্য ও জাতীয় স্তরের মুখপাত্র বেছে ঘোষণায় দেখা গেল, রাজ্যস্তরে মুখপত্রের তালিকায় নাম রয়েছে কুণাল ঘোষের।
পালাবদলের সময়ে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার বছরে কুণালের ভূমিকা ভুলে যায়নি রাজ্যের মানুষ। তবে সারদা পর্বে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্বও সকলের জানা।
তবে তিনি যে ফের তৃণমূলের মুখপাত্র তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেন তা বোধহয় তাঁর অতিবড় সমর্থকরাও আঁচ করতে পারেনি। তাই মুখপাত্রের তালিকায় তাঁর নাম দেখে অনেকেই প্রত্যাবর্তনের কথা বলছেন।
রাজনৈতিক মহল বলছেন, মুখপাত্র বাছার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যুক্তি-বুদ্ধি দিয়েই মুখ বেছে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় স্তরের মুখপাত্র হিসেবে রাখা হয়েছে ১২ জনকে আর রাজ্য স্তরের মুখপাত্র করা হয়েছে ২২ জনকে।
লকডাউন মিটতেই গ্রাহকদের হাতে মোটা অঙ্কের বিল, সিইএসসিকে চিঠি রাজ্যের
এক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের মুখপাত্র হিসেবে পুরনো মুখদেরও তিনি সসম্মানে রেখে দিয়েছেন। রাজ্যস্তরে মুখ্যপাত্রের তালিকায় অপেক্ষাকৃত নতুনদের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।
এদিনের রাজ্যস্তরের মুখপাত্রের তালিকায় বহিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহান, তৃণমূলের তরুণ মুখ দেবাংশু ভট্টাচার্য পাশে অভিজ্ঞ প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুনাল ঘোষকে জায়গা করে দেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূলের তরফে জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় স্তরের মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন, অমিত মিত্র, ডেরেক ও ব্রায়েন, দীনেশ ত্রিবেদী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মনীশ গুপ্ত, নাদিম উল হক, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শশী পাঁজা, সৌগত রায়, সুগত বসু, সুখেন্দুশেখর রায় ও বিবেক গুপ্তা।
আর রাজ্যস্তরের মুখপাত্ররা হলেন, অরূপ চক্রবর্তী, বিজয় উপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ দেব, ব্রাত্য বসু, সমীর চক্রবর্তী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, দেবাংশু ভট্টাচার্য, দেবু টুডু, দীনেশ বাজাজ, কুনাল ঘোষ, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্বেদ রায়, নুসরত জাহান, ওমপ্রকাশ মিশ্র, পার্থ ভৌমিক, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু সেন, শীলভদ্র দত্ত, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ রাহা, সুপ্রিয় চন্দ ও তাপস রায়।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল থেকে ২০১৩ সালে জুলাই মাসেই ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন কুণাল। আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তন সাত বছর পর। আগেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছিল। এবার দলে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পেলেন তিনি।
সাসপেনশন ওঠার পর থেকে দলের নানা কর্মসূচিতে এক বছর আগে থেকেই থাকছিলেন। ২০১৯ থেকে দলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ তৈরি হয়।
ওই বছরই ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ সমাবেশ কর্মসূচিতেও ছিলেন। শ্যামবাজারে যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা কর্মসূচিতেও ছিলেন কুণাল।
তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এবার রাজ্যস্তরের মুখপাত্রও হলেন। তবে কুণালের পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য অন্তর্ভুক্তি হল অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহানের।
বিভিন্ন কারণে লোকসভা ভোটের পর থেকেই সবসময় শিরোনামে থেকেছেন তিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের কার্যকলাপ, উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা, বিরোধীদের পালটা জবাব দেওয়ায় সর্বদা সক্রিয় থেকেছেন নুসরত।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তারই পুরস্কার হিসাবে তাঁর নাম মুখপাত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হল। তবে এদিন মুখাপাত্র তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে মহুয়া মৈত্রের নাম।
ফিরে আসুন বুদ্ধবাবু, লড়াইটা লড়তে হবে….
বিগত সময়ে জাতীয় ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরের সাংসদকে দেখা গিয়েছে বরাবরই জাতীয়স্তরের মিডিয়ায় ভোকাল থাকতে। তবে এই মুহূর্তে তাঁকে নদিয়া জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দল চাইছে তিনি জেলা সংগঠনের কাজেই আরও ভালো করে মনোনিবেশ করুন। তাই জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহুতি দেওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দলের হাল শক্ত হাতে ধরছেন, তা বোঝা গিয়েছিল সাম্প্রতিক অতীতেই। ২১ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভা থেকে তৃতীয় বার সরকার গড়ার ডাক দেওয়ার পরেই দলীয় সংগঠনে ফাঁকফোকর মেরামতের কাজটাও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
সেই অনুযায়ী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, সব জেলা সভাপতি, পর্যবেক্ষক এবং শাখা সংগঠনের প্রধানদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠক করে সংগঠনে আমূল পরিবর্তন এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ঢেলে সাজালেন দলের মুখপাত্রদের তালিকাও।