‘আপনি মানে না গাঁয়ে মোড়ল’ দশা সৌগতর, মুখের ভাষা শুনলে অধ্যাপক মনে হবে না
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় এক প্রচলিত প্রবাদ আছে, ‘আপনি মানে না গাঁয়ে মোড়ল’। অর্থাৎ, আপনাকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না, কিন্তু নিজেই নিজেকে কেউ কেটা ভেবে বসেছেন। দমদমের বর্ষিয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের অবস্থা অনেকটা তেমনই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পর বিরোধীরা স্বভাবতই এখন বেশ কিছুটা আক্রমণাত্মক মুডে আছে।
সিপিএম-বিজেপি দুই দলই ‘চোর ধরো / জেল ভরো’ কর্মসূচি পালন করছে। পাল্টা ইডি-সিবিআইকে কীভাবে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করছে তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টাই যখন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছে তৃণমূল, তখন দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে এই ‘বুড়ো’ বয়সে কার্যত হিরো হওয়ার বাসনা জেগেছে সৌগতর!
দমদমের এই সাংসদ প্রথমে কামারহাটিতে গিয়ে বললেন বিরোধীদের চামড়া দিয়ে জুতো বানানো হবে। এরপর চোর বললে বিরোধীদলের কর্মী সমর্থকদের পাড়া ছাড়া করার হুমকি দিলেন। আর সব শেষে, মানে এখনও অব্দি তাঁর ভাষার মণিমাণিক্যের ঝুলিতে শেষ সংযোজন হল, জুতোপেটা করার নিদান।
সৌগত রায়ের একটাই কথা, “তৃণমূলের সবাই চুরি করেনি। তাই সবাইকে চোর বলা চলবে না।” কেউ যদি নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া চোর বলে, তবে তার পিঠের চামড়া দিয়ে জুতো বানাবেন, জুতোপেটা করবে এই প্রাক্তন অধ্যাপক!
গ্রেফতার হতে পারেন ববি , আশঙ্কা প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
আচ্ছা সৌগতবাবু আপনি তো সাংসদ, আপনার কি কাজের অভাব পড়েছে? নাকি আপনার লোকসভা কেন্দ্র দমদমের সমস্ত সমস্যা মিটে গিয়েছে? তাই এবার আপনি জুতো হাতে ছুটে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন!
এ প্রসঙ্গে একটা অন্য ঘটনার অবতারণা করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এখনও দোষ প্রমাণিত নয়, বিষয়টি বিচারাধীন। কিন্তু আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতো আমরাও নারদ স্টিং অপারেশনের যে ভিডিও দেখেছিলাম, তাতে এই সৌগত রায়কেই দেখা গিয়েছিল টাকা নিয়ে থ্যাঙ্ক ইউ বলতে!
যদিও ওটা সত্যিই সৌগত রায় ছিলেন কিনা তা বিচার সাপেক্ষ। কিন্তু জনমানসে এই নিয়ে ধারণাটা ঠিক কী, তা একবার খোঁজ নিয়ে নিতে পারেন এই অধ্যাপক-সাংসদ। তাহলেই বুঝবেন আমজনতার মধ্যে আপনার অবস্থান ঠিক কোথায়।
নারদ কাণ্ড চক্রান্ত, তা অভিযুক্ত বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে তৃণমূলের ববি হাকিম, অপরূপা পোদ্দাররা সকলেই বলছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, সৌগত রায় সহ অভিযুক্তরা কেউই কিন্তু বলেননি যে তাঁরা এমন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। কেন এই ঘটনা তা নিয়ে নানান ব্যাখ্যা আছে। তা প্রাক্তন অধ্যাপক সৌগত রায়কে এই নারদ কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করলেও কি একই রকমভাবে জুতো পেটা খেতে হবে?
এক সময় বাংলার শিক্ষকদের রোজগার ছিল অতি সামান্য। সেই প্রচলিত প্রবাদই ছিল, বাবারা মেয়ের বিয়ে দিতে চাইতেন না শিক্ষকদের সঙ্গে। পরবর্তীকালে বাম জামানায় ধাপে ধাপে শিক্ষকদের বেতন সম্মানজনক জায়গায় এসে পৌঁছয়। আর আজ সরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা আর্থিকভাবে যথেষ্ট আকর্ষণীয় একটি পেশা। সৌগত রায় তেমনই একজন শিক্ষক।
দক্ষিণ কলকাতার নামী আশুতোষ কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি যে সময় শিক্ষকতা করেছেন সেই কালে মূল্যবোধ অত্যন্ত গুরুত্ব পেতো বলে প্রবীণরা বলে থাকেন। তা সৌগত রায় আপনাকে প্রশ্ন করছি, কী ধরনের শিক্ষক ছিলেন মশাই? যাবতীয় মূল্যবোধ ভুলে জুতোপেটা করার কথা বলতে গিয়ে আপনার একবারও জিভের ডগায় আটকাল না!
আচ্ছা বিরোধীরা তো সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁরা এই নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখছেন। কিন্তু একবারও তো কই বিরোধীদের মারধরের কথা বা সেরকম কোনও ইঙ্গিত তাঁরা দেননি। তাহলে আপনি এমন কথা বলছেন কেন? নাকি এ সবই দলের মধ্যে নম্বর বাড়ানোর খেলা? ২৪ এর লোকসভায় দমদম থেকে যাতে ফের প্রার্থী হতে পারেন তার চেষ্টা কি এখনই শুরু করে দিয়েছেন?
অবশ্য আপনি নামেই অধ্যাপক ছিলেন। আপনার মুখের ভাষা কোনদিনই আপনার পেশার সঙ্গে সাজুজ্জ্যপূর্ণ ছিল না। তাই ৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে তাঁর পিতৃপরিচয় তুলে কুৎসিত আক্রমণ করেছিলেন।
পড়ে সেই মমতার কল্যাণেই নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। তারও আগে প্রথমবার লোকসভায় নির্বাচিত হয়েই নেমকহারামির পরিচয় দিয়েছিলেন। যে ইন্দিরা গান্ধির জন্য জিতেছিলেন, লোকসভায় গিয়ে তাঁকেই গ্রেফতারের দাবী তোলেন। ভোল বদলানো, পাল্টি খাওয়া এগুলো আপনার বহুদিনের পরিচিত অভ্যাস।
সে থাকুক গে যাক। আপনি আপনার কী অভ্যাস পালন করবেন তা একান্তই আপনার রুচি ও ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আপনি যে সমস্ত মন্তব্য করছেন তা থেকে একবার যদি উত্তেজনা ছড়ায় তবে কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটবে বুঝতে পারছেন?
নাকি রাজনীতির ময়দানে শেষ বয়সে এসে একটু গুন্ডাগারদি করার ইচ্ছে হয়েছে আপনার। এমপি মশাই একটা কথা মাথায় রাখবেন, জনতাই জনার্দন তারা কিন্তু সব দেখছে, সব শুনছে। আর হ্যাঁ, সব মনেও রাখছে।