মোদিকে সার্টিফিকেট, প্রেম বিলিয়ে বাণিজ্য সারলেন ট্রাম্প

||দিলীপ রায়||

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সপরিবার ও স্বপার্ষদ সফরই এখন সবচেয়ে বড় খবর। গত ক’দিন ধরে খবরের শিরোনাম ছিল, হাউস্টনের ‘হাউডি মোদি’র মতো মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটের আমেদাবাদে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্ট।

ট্রাম্পের সফরের প্রাক্কালে আমেদাবাদে রাস্তার পাশে থাকা বস্তির সামনে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়। মোতেরা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় একটি বস্তির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ নোটিশ ধরায় আমেদাবাদ পুরসভা।

বিশ্বের মহাশক্তিধর রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানাতে এভাবেই প্রস্তুত হয় মোদির গুজরাট, মোদির ভারত। ট্রাম্পের ৩৬ ঘণ্টা ভারত সফরে্র সূচিতে ছিল মোদির সঙ্গে রোড শো, ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্টে ভাষণ, সবরমতী আশ্রম এবং তাজমহল দর্শন।

এই সফর ঘিরে বিভিন্ন মহলের প্রত্যাশা মার্কিন-ভারত সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।অবশেষে নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী সোমবার ট্রাম্প এলেন। উষ্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করলেন। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করলেন।নিজেদের আদর্শে অবিচল থেকে সন্ত্রাসবাদ দমনে যৌথ ভূমিকা নেওয়ার কথা বললেন।

আরও বললেন, মোদি জমানায় বিদ্যুৎ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে গ্রামীন ভারত। ৩০০ মিলিয়নের বেশি ইন্টারনেট কানেকশন দেও্য়া হয়েছে। মোদিকে ভারতের নেতা উল্লেখ করে ট্রাম্প বললেন, মোদিকে সবাই ভালবাসে। কিন্তু আমি জানি মোদি কঠিন। তিনি আরও বলেন, ভারতকে ভালোবাসে আমেরিকা।

তাঁর কথায়, গত সাত দশকে ভারত এক উচ্চতার শিখর ছুয়েছে। এদিন তিনি বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।দেশের জন্য শচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলির অবদানের কথাও উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন-দিল্লির ১০ এলাকায় ১৪৪ ধারা, শান্তিরক্ষার আবেদন মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর

সবরমতী আশ্রমে গান্ধিজিকে শ্রদ্ধা জানান, চরকাও স্পর্শ করেন। লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্টে ভাষণ দেন ট্রাম্প। সেখানে ছ’বার মোদিকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। আর এভাবেই প্রেম বিলিয়ে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক ডিল করেন ভারতের সঙ্গে। তারপর স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে আগ্রার তাজমহল-এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যান। নিজেকে ও মোদিকে সুপার হিরো করাটাই যেন ছিল এই সফরের টার্গেট। আর সেই সঙ্গে অবশ্যই ব্যবসা। কিন্তু ক্ষুধা, দারিদ্র, অপুষ্টি, অশিক্ষা নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কেউই একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ১০০ কোটি খরচ করে ভারত পেল প্রেম। এদিন সন্ত্রাসবাদ দমনই প্রাধান্য পেল ট্রাম্পের বক্তব্যে।

ভারতের প্রাপ্তি! ভালোবাসা। আমেরিকার ভালোবাসা। এবং সেই সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে বেসামাল মোদির অক্সিজেন।নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআর, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, পেট্রোল-ডিজেল-গ্যাস ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষক আত্মহত্যা এসব নিয়ে বিক্ষোভের জেরে নাজেহাল দশায় রয়েছে মোদি সরকার।

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ সামাল দিতে এই সরকার যখন পারছে না, ঠিক সেসময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের মোদিকে ‘ভারতের নেতা’ সার্টিফিকে্টে আমজনতাকে ভোলানোর অক্সিজেন পেলেন নরেন্দ্র মোদি।

পেটোয়া সংবাদমাধ্যমে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্টকে তুলে ধরেই আমজনতার সামনে ভাবমূর্তি ভাল করার সুযোগ পেয়ে গেলেন অনায়াসেই। এটাই হল তাঁর বড় প্রাপ্তি।

মোদি এবং তাঁর সরকার মানুষের অধিকারের আন্দোলন, গণআন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। দিল্লির শাহিনবাগ ও তার ধারায় দেশের নানা প্রান্তে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চলছে।

এদিন একদিকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী যখন আগ্রায় ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে ব্যস্ত, তখন অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করছেন বিরোধীরা। কারণ, কৃষক সমস্যার সমাধানে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিজেপি সরকার। রাজ্য বাজেটে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেয়নি।

এছাড়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মহিলাদের আন্দোলনে পুলিশি দমন পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওয়াক আউট করেন বিরোধীরা। দিল্লিতেও এদিন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জারি থাকে। বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে অন্যান্য রাজ্যেও।

দেশ জুড়ে সাধারণ মানুষের এই চলমান বিক্ষোভ থেকে চোখ ঘুরিয়ে ট্রাম্পের সফরে নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টা করলেন মোদি।

সম্পর্কিত পোস্ট